১৮ বছর পর আগামীকাল দেখা মিলবে উল্কাবৃষ্টির (ভিডিও)

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৬, ১৮:৪৮

অনলাইন ডেস্ক

আর ঠিক এক দিন পর রাতের আকাশে দেখা যাবে আলোর ফুলঝুরি। ঝরে পড়বে প্রচুর আলোর ফুলকি। সেগুলো ছিটকে যাবে আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। যেন অকাশ দীপাবলী!

১১ অগস্ট মধ্যরাতের পর থেকে ১২ অগস্টের ভোর আর ১২ অগস্ট মধ্যরাতের পর থেকে ১৩ অগস্টের ভোর পর্যন্ত যে কোনও সময় আকাশে খালি চোখেই ওই আলোর ফুলঝুরি দেখা যাবে। যাকে বলে, উল্কাবৃষ্টি। গত সাত বছরে গোটা বিশ্বে এত ভাল ভাবে উল্কাবৃষ্টি দেখার সুযোগ মেলেনি। আর রাতের আকাশে এত ভাল ভাবে আলোর বৃষ্টি দেখা গিয়েছিল ১৮ বছর আগে, ১৯৯৮-এ।

বর্ষার ভারী মেঘে আকাশ ঢেকে না থাকলে বা ওই দুই রাতে জমাট বাঁধা অন্ধকার এলাকায় থাকলে আকাশে দেখা যাবে ওই আলোর ফুলঝুরি। একটি ধূমকেতুর সৌজন্যে। যার নাম- ‘সুইফ্‌ট টার্টল’। প্লুটোর পর এই সৌরমণ্ডলের প্রায় শেষ সীমায় যে ‘ক্যুইপার বেল্ট’ রয়েছে, সেখান থেকে ‘সুর্য-প্রণাম’ সারতে ছুটে আসছে ওই ধূমকেতু। ১৩৩ বছর অন্তর এক বার করে ‘সূর্য-প্রণাম’ সারতে আসে ‘সুইফ্‌ট টার্টল’ ধূমকেতু, সুদূর ‘ক্যুইপার বেল্ট’ থেকে। যে কোনও ধূমকেতুর শরীরেই যা থাকে, তা রয়েছে এই ‘সুইফ্‌ট টার্টল’-এও। মাথা (নিউক্লিয়াস) আর লেজ (টেইল)। আর প্রতি বারই ‘সূর্য-প্রণাম’ সারতে এলে আমাদের এই সৌর পরিবারের ‘রক্ষাকর্তা’ নক্ষত্রটি (সূর্য) তার কাছে থেকে কিছু ‘দক্ষিণা’ নিয়ে নেয়! ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের বেশ কিছুটা অংশ সূর্যের টানে ছিটকে বেরিয়ে আসে তার শরীর থেকে। সূর্যকে যে কক্ষপথে আবর্তন করছে ধূমকেতুটি, ফি-বছরই অগস্টে সেই কক্ষপথে অল্প কিছু সময়ের জন্য ঢুকে পড়ে পৃথিবীর কক্ষপথ।

আর ঢুকে পড়লেই, পৃথিবীর জোরাল ‘মায়ার টানে’ (অভিকর্ষ বল) জড়িয়ে পড়ে ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস থেকে ছিঁড়ে-ছিটকে বেরিয়ে আসা খণ্ডগুলো। সেগুলো শনশন করে ছুটে আসতে থাকে পৃথিবীর দিকে। ঘণ্টায় প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার মাইল গতিবেগে। কিন্তু পৃথিবীর ওপর বিছোনো রয়েছে যে বায়ুমণ্ডলের চাদর। যা বায়ুর কোটি কোটি কণা দিয়ে ভরা। ফলে, যা অনিবার্য, সেটাই ঘটে। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের খণ্ড-বিখণ্ডগুলোর সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের কণাগুলোর ধাক্কাধাক্কি হয় সজোরে। অত জোরে ধাক্কাধাক্কি হলে, যা হয়, এ ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটে। জ্বলে ওঠে আগুন। অত্যন্ত গরম হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা। আর আমরা আকাশে দেখতে পাই আলোর ফুলঝুরি বা আলোর ঝর্নাধারা। এটাই উল্কাবৃষ্টি।

সল্টলেকের ‘পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’-এর অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলছেন, ‘‘বছরে এ রকম বেশ কিছু উল্কাপাতের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে দৃশ্যমানতা বা ঔজ্জ্বল্যের নিরিখে তিনটি উল্কাপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার একটি ‘পারসেড’ উল্কাবৃষ্টি। অন্য দু’টির নাম- ‘লিওনেড’ আর ‘জেমিনিড’। ওই উল্কাবৃষ্টির সময় ধূমকেতুটির পিছনে যে নক্ষত্রপুঞ্জটি (কনস্টেলেশন) থাকে, সাধারণত, তার নামেই ওই উল্কাবৃষ্টির নাম দেওয়া হয়। ১১ আর ১২ অগস্ট যে উল্কাবৃষ্টির ঘটনা ঘটবে, তার নাম ‘পারসেড মেটিওর শাওয়ার’। যেহেতু উত্তর-পূর্বের আকাশে ওই সময় ধূমকেতুটির পিছনে (ব্যাকগ্রাউন্ড) থাকবে ‘পারসিয়াস’ নক্ষত্রপুঞ্জ। ‘লিওনিড’ আর ‘জেমিনিড’ উল্কাবৃষ্টির সময় যথাক্রমে তাদের পিছনে থাকে ‘লিও’ ও ‘জেমিনি’ নক্ষত্রপুঞ্জ। ফি-বছরই অগস্টে হয় ‘পারসেড উল্কাবৃষ্টি’। নভেম্বরে হয় ‘লিওনিড’ আর ডিসেম্বরে হয় ‘জেমিনিড’ উল্কাবৃষ্টি।’’

কেন এ বার এই উল্কাবৃষ্টির ঘটনাকে এতটা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
নাসার তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘সাধারণত, প্রতি ঘণ্টায় এমন আলোর ফুলকি আকাশে যতগুলো দেখা যায়, গাণিতিক হিসেব বলছে, এ বার দেখা যাবে প্রায় তার দ্বিগুণ। ঘণ্টায় ২০০টি। ২০০৯ সালের পর এই প্রথম ‘পারসেড উল্কাবৃষ্টি’ এতটা জোরালো ভাবে দেখা যাবে।’’
সূত্র: আনন্দবাজার