পৃথিবীকে বাঁচাতে ‘যুদ্ধ’ অভিযানে নাসা

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৬, ১৯:০৯

অনলাইন ডেস্ক

ঘায়েল করার সব রকম কৌশল রপ্ত করেই ‘ঘাতকে’র কাছে যাচ্ছে নাসা! সেই ‘ঘাতক’কে ঘায়েল করতে না পারলে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের ধ্বংস প্রায় অনিবার্য। খুব বেশি দেরিও নেই তার। দেড়শো বছরের মধ্যেই।

অসম্ভব দ্রুত গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে সেই ‘ঘাতক’। একটা বিশাল চেহারার গ্রহাণু। যার নাম- ‘বেন্নু’। আপাতত তার যা গতিপথ, তাতে পৃথিবীর ওপর তার আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই।

যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই গ্রহাণুটির মাধ্যমেই হয়তো জানা যাবে, কী ভাবে তৈরি হয়েছিল এই সৌরমণ্ডল, কেমন করে জন্ম হয়েছিল পৃথিবী সহ এই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের। আর কী ভাবে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীতে। এই সৌরমণ্ডলের অন্য কোনও গ্রহেও কোনও কালে ‘প্রাণ’-এর উদ্ভব হয়েছিল কি না। তাই আদতে সে ‘ঘাতক’ হলেও, তার খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তার চেহারা, চরিত্র, আচার, আচরণ জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাই সেই গ্রহাণু থেকে তড়িঘড়ি ‘নুড়ি-পাথর’ কুড়নো আর সে সব পৃথিবীতে এনে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর সে জন্যই ‘ঘাতক’কে চিনতে-জানতে এই সেপ্টেম্বরেই ওই গ্রহাণুটির উদ্দেশে রওনা হচ্ছে নাসার মহাকাশযান ‘ওসিরিস-রেক্স’। ২০১৮-য় ‘বেন্নু’তে পৌঁছনোর পরেই তার কার্বনে ভরা পিঠ থেকে ‘নুড়ি-পাথর’ কুড়নো শুরু করবে মহাকাশযানটি। শুরু করবে ওই গ্রহাণুর বিভিন্ন এলাকার ‘জমি-জরিপ’ (ম্যাপিং) করার কাজও। 

নাসার ‘ওসিরিস-রেক্স মিশন’-এর গবেষকদলের অন্যতম সদস্য মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যেটা সকলেরই নজর কেড়েছে, তা হল, এই গ্রহাণুর পিঠের বেশির ভাগটাই গড়ে উঠেছে কার্বন আর হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে। প্রাণের অন্যতম প্রধান উপাদান তো এই দু’টি পরমাণুই। এরাই মিলে হয়তো সেখানে গড়ে তুলেছে নানা রকমের জৈব অণু। কোনও কালে যাদের কারণে হয়তো প্রাণের উদ্ভব হয়েছিল এই সৌরমণ্ডলে। আর সেই সব জৈব অণু হয়তো এখনও রয়েছে গ্রহাণুটির শক্তপোক্ত পিঠে। শুধু এটাই নয়, হয়তো ওই ‘ঘাতক’-এর শরীর আর তার গঠন-বৈচিত্র্যই আমাদের জানিয়ে দেবে, মঙ্গলে বা বৃহস্পতির ‘চাঁদ’- ইউরোপায় প্রাণ ছিল কি না কোনও কালে বা এখনও কোথাও তার কোনও অস্তিত্ব রয়েছে কি না।’’

কেন আশঙ্কা করা হচ্ছে এই গ্রহাণুটিই ‘সাড়ে সর্বনাশ’ হয়ে উঠবে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের?
জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক দেবেন্দ্র ওঝার কথায়, ‘প্রতি ৬ বছর অন্তর পৃথিবীর কক্ষপথের কাছ ঘেঁষে বেরিয়ে যায় ‘বেন্নু’। প্রতি বারই একটু একটু করে ঘেঁষে আসে পৃথিবীর দিকে। ২১৩৫ সালে ঘুরতে ঘুরতে এই গ্রহাণুটি ঢুকে পড়বে পৃথিবী আর চাঁদের মাঝামাঝি জায়গার একটি ‘কি-হোল’-এ। যা ঝট করে পৃথিবীর অনেকটাই কাছে এনে ফেলবে গ্রহাণুটিকে। আর এই ভাবে পৃথিবীর কাছে আসতে আসতেই দেড়শো কি পৌনে দু’শো বছরের মধ্যে পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ার যথেষ্টই সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২১৭৫ বা ২১৯৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর ওপর তার আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা হয়তো নেই। ভাবনা রয়েছে কোনও প্রযুক্তি-প্রকৌশলের সাহায্য নিয়ে ওই ধেয়ে আসা গ্রহাণুটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার। কারণ, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রযুক্তি-প্রকৌশল আমাদের হাতে রয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।’

এত আশঙ্কার মধ্যে আশার কথা শুধু এই টুকুই। ‘ওসিরিস-রেক্স মিশন’-এর প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী দাঁতে লোরেত্তা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর ঘাড়ে ‘বেন্নু’র এসে পড়ার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য এখনও কিছু সন্দেহ রয়েছে।’