অ্যাপে পৌরসভা-ইউনিয়নেও সেবা প্রদান সম্ভব

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৫:৪৮

সাহস ডেস্ক

অ্যাপে শুধু সিটি কর্পোরেশন নয়, পৌরসভা-ইউনিয়নেও নাগরিক সেবা প্রদান করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএনসিসি’র বিশেষ উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) আরবান ল্যাবের গবেষণা, দলগত প্রচেষ্টায় অত্যাধুনিক এ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ‘নগর’ অ্যাপের মাধ্যমে ডিএনসিসি’র সেবা চালু করায় মেয়র আনিসুল হকের প্রশংসা করে অ্যাপটি পৌরসভা ও ইউনিয়নেও দেওয়ার জন্য মন্ত্রীকে এ অ্যাপটি দিতে মেয়রকে অনুরোধ জানান খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

মন্ত্রী বলেন, মর্ডাণ টেকনোলজির এ অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা দিলে সময়, অর্থ সব কিছু সাশ্রয়ী হবে। ডিএনসিসি’র এ অ্যাপে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

এ অ্যাপ ব্যবহারে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নগর অ্যাপ কারো মোবাইলে দিয়ে দিতে পারলে কাউকে সনাক্ত করতে পুলিশের সুবিধা হবে। ডিএনসিসির নাগরিক অসুবিধা দিতেও সুবিধা হবে। 

এ ধরণের একটি অ্যাপ তৈরি করায় ডিএনসিসি ও বিইউকে ধন্যবাদ জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, অত্যাধুনিক সুবিধা সম্ভলিত এ ধরণের অ্যাপ শুধু ডিএনসিসি’র নাগরিকদের সেবার পাশাপাশি বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি চূড়ান্ত স্বীকৃতি এনে দেবে। নগর অ্যাপটি নেক্সট ভার্সনে নিয়ে যাওয়া ও নাগরিকদের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংক, সিটি টার্চ, মোবাইল ব্যাংকিং সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আইসিটি বিভাগ ডিএনসিসিকে সহায়তা করবে। যাতে একজন নাগরিক ঘরে বসে এ অ্যাপের মাধ্যমে সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে।

এ অ্যাপের মাধ্যমে ডিএনসিসি’র ডিজিটাল যাত্রা শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেন, শুধু ঢাকা নয় পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে বসে এ অ্যাপের সুবিধা পাওয়া যাবে।  একবছরের মধ্যে এ অ্যাপ অত্যাধুনিক করে তোলা হবে। যাতে ঢাকার সব জায়গায় সব মানুষ এর সুবিধা পায়। এ অ্যাপের জন্য একটি বড় ড্যাশবোর্ড ও একটি বড় কন্ট্রোল রুম করতে হবে। এর মাধ্যমে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আজকে নিরাপত্তার যে বিষয়টি দাঁড়িয়েছে সেক্ষেত্রে নগর অ্যাপ সবাইকে সহযোগিতা করবে। এ অ্যাপের মাধ্যমে ডিএনসিসি’র ডিজিটাল যাত্রা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) বোর্ড অব ট্রাস্টিক চেয়ারম্যান ও নগর অ্যাপের পরিকল্পনাকারী জামিল আজহার বলেন, বিইউ’র আরবান ল্যাবের গবেষণার মাধ্যমে অত্যাধুনিক এ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে যাতে একজন নাগরিক সব সেবা পায়। সহযোগিতা পেলে এ অ্যাপকে আরো আধুনিক করা হবে। আরবান ল্যাবের মাধ্যমে এ ধরণের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট গবেষণা অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।

ডিএনসিসি’র ‘নগর’ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে আবদুর নূর তুষার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে হাতের মুঠোয় সকল নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সেজন্য চালু করেছে ‘নগর’ নামে একটি ডিজিটাল অ্যাপ। নাগরিক সেবার তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ এ অ্যাপটি সেবার পাশাপাশি হবে নিরাপত্তার মোক্ষম হাতিয়ার।

এ অ্যাপের মাধ্যমে এলাকার রাস্তা, সড়কবাতি, বর্জ্য, ড্রেনেজ, মশক, অবৈধ দখল, ঘুষ ও দূনীর্তি এ সাতটি অভিযোগ বা মতামত সরাসরি সিটি কর্পোরেশনে প্রেরণে করা যাবে। মোবাইলে ছবি উঠানোর পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যাবে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জোনের কাছে রক্ষিত ড্যাশবোর্ডের প্রতিটি অভিযোগ ও মতামত প্রতিফলিত হবে। অভিযোগের প্রকার বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন যে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সেটিও ড্যাশবোর্ডে দৃষ্টিগোচর হবে। পরে অভিযোগকারীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধানের বিষয়টি জানানো হবে। 

এটি এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন যা অতি সহজে একটি মাত্র আঙ্গুলের ছোঁয়ায় সরাসরি ও কার্যকরভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলতে সক্ষম। প্রিয়জন কোন বিপদে পড়লে মাত্র ৩ সেকেন্ডে অ্যাপের ‘এসওএস’ আইকনে চেপে ধরলে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে স্যাটেলাইটের সহায়তায় বাবা, মা, আত্মীয় ও নিকটস্থ পুলিশের কাছে বিপদ সংকেত বেজে উঠবে। ভিকটিমের ছবি, অবস্থান ও কণ্ঠ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাবে। এছাড়া ২ মিনিট পরপর বিপদ সংকেত বাজতে থাকবে। অ্যাপটির ট্র্যাকিং সুবিধা ব্যবহার করে প্রিয়জনের গতিবিধি ও অবস্থান জানা যাবে।

বর্তমান সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ডিএনসিসি’র নগর অ্যাপের এ ফিচারটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি এতে নিকটস্থ হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, বাসস্টপ, ফায়ার সার্ভিস, এটিএম বুথসহ জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা থাকবে।

এ অ্যাপটির যোগাযোগ নেটওয়ার্কের এক প্রান্তে রয়েছেন সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ, অপর প্রান্তে ডিএনসিসি ও পুলিশ বাহিনী। গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইন্সটল করে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে যেকোন নাগরিক পৃথিবীর যেকোন স্থানে বসে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্য এজন্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী মেজবাহুল ইসলাম, কাউন্সিলর, বিইউর শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত