স্মার্টফোনে তথ্য নিয়ে নারীদের সবজি চাষ

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০১৮, ১১:৪৭

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা শ্যামনগরের এলাকার নারীরা স্মাটফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে গুগলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সবজি চাষে সফলতা পাচ্ছেন। নোনা এলাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবিজ চাষ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আয় করছেন বাড়তি অর্থ। কম খরচে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে চাষ করে লাভবান হওয়ায় দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতি।

বেলাল হোসেন নামে এক এলাকাবাসী জানান, ২০০৯ সালের আইলার প্রবল জলোচ্ছাস উপকূলীয় জেলা শ্যামনগরে নোনা পানির জন্য চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ে। হতাশার মেঘ ভর করে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। পরবর্তিতে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে, অক্সফ্যামের সহযোগিতায় সুশীলন রি-কল প্রকল্প নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শ্যামনগর উপজেলার বড়কুপট গ্রামে একশত জন নারী কৃষককে স্মাটফোন বিতরণ, ফোন ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান, ফেসবুক আইডি খুলে দেওয়া, মোবাইলে মেগাবাইট সরবারহ করা, ফোনের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিস, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও প্রতীক কল সেন্টার, প্রতীক এসএমএস ও প্রতীক ভয়েস এস,এম,এস এর মাধ্যমে কৃষি তথ্য সংগ্রহ করে সবজি চাষ করা বিষয়ে ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ অঞ্চলের নারীরা।

জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপট গ্রামের লবনাক্ততার কারণে এক সময় শাক-সবজি চাষ করতে পারতো না চাষিরা। চাষ করতে না পারায় পতিত থাকত বেশির ভাগ জমি। বর্তমানে এসব এলাকায় স্মাটফোনে তথ্য প্রাপ্তি জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক নারীদের কৃষি সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। তারা টাওয়ার বা থ্রি ডি পদ্ধতি, বস্তাপদ্ধতি, ১.৫ ফুট মাটির নীচে পলিথিন বিছিয়ে জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে সবজি চাষ, লবণ পানির এলাকায় মাটিতে গর্ত করে পলিথিন ও ত্রিপল বিছিয়ে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সবজি চাষ, বাগদা রেনু বহনকারী কর্কসিটে জৈব সার ও মাটি ভরাট করে সবজি চাষ শুরু করে সফলতা পাচ্ছে।

এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীরা বাড়ির পাশে পতিত জমিতে ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বীটকপি, টমেটো, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, মুলা, গাজর, পুঁইশাক, কচুরমুখী, লাউ, চালকুমড়া, গোলআলু, ঝিঙ্গা, ডাটাশাক, শিম, বরবটি, ঢেঁড়স, তরুল, পেঁয়াজ, রসুন, ওল, কচু, চিচিঙ্গা ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছে।

শ্যামনগরের কৃষক মমতাজ বেগম জানান, মোবাইলে প্রযুক্তি ব্যাবহার করে আমরা সফলতা পেয়েছি। যেকোন সমস্যা আমারা অ্যাপস এর মাধ্যমে সমাধান পেয়ে থাকি। আমরা বিষমুক্ত শাক সবজি চাষাবাদ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছি।

সুশীলনের প্রোগ্রাম অফিসার তাপস কুমার মিত্র বলেন, আইলার পরে এ অঞ্চলে নোনা হওয়া যখন সফল ফলাতে না পেরে কৃষকার হতাশ হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ অঞ্চলেন প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলে কৃষির ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। তারা নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেও বাড়তি টাকা আয় করতে সক্ষম হচ্ছে।

সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষ করছে। এর মাধ্যেমে সহজেই তারা প্রযুক্তিগুলো পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপস রয়েছে সেগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত