রোনালদো জাদু চলছেই

প্রকাশ : ১৮ মে ২০১৭, ১২:২৯

সাহস ডেস্ক

বছর দেড়েক আগেই মেসির বাঁ পা নিয়ে নিজের ঈর্ষার কথা জানিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ডান পায়ে তিনি দুর্দান্ত হলেও বাঁ পায়ের কাজে মেসির তুলনায় একটু পিছিয়েই থাকেন। সেই ‘দুর্বল’ পা-ই আজ রিয়াল মাদ্রিদের জয় এনে দিয়েছে। আরও একবার রোনালদোয় সওয়ার হয়ে আরেকটি ‘ফাইনাল’ পেরোল ‘লস ব্লাঙ্কো’রা। সেল্টা ভিগোকে তাদের মাঠে ৪-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। লা লিগার শিরোপা থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট দূরত্বে এখন জিনেদিন জিদানের দল।

দুই দলের ফর্ম চিন্তা করলে এ ম্যাচ অনায়াসে জেতার কথা রিয়ালের। লিগে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে এ ম্যাচ খেলতে নেমেছে সেল্টা। ঘরের মাঠে জয়ের স্মৃতিতে তো দেড় মাসের ধুলো। তবু দলটার নাম সেল্টা ভিগো এবং মাঠের নাম বালাইদোস বলেই দুশ্চিন্তা। এ মাঠে যে গত দুই মৌসুমে ৪ গোল খেয়ে হেরেছে বার্সেলোনা! এ মাঠেই ২-২ গোলে ড্র করে এবারের কোপা ডেল রের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে রিয়াল। কিন্তু ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারল ১০ মিনিট লাগল রিয়ালের। বাঁ প্রান্তে মার্সেলোর ডিফেন্সচেরা এক পাস থেকে ইসকো দারুণ দক্ষতায় বক্সে ঢুকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ডিফেন্ডারের বাধায় সে বল তার পা থেকে রোনালদর কাছে। একটু জায়গা করে নিয়ে রোনালদো বাঁ পায়ে যে শট নিলেন, সেটা ঠেকানোর কোনো সুযোগই ছিল না সেল্টা গোলরক্ষকের। এ গোলেই জিমি গ্রিভসকে ছাড়িয়ে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গেছেন রোনালদো।

এরপরও রিয়াল বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু বাঁ প্রান্তে রনকাগলিয়ার হার না মানা মানসিকতা ও দুর্দান্ত রক্ষণের কারণে এগিয়ে যেতে পারেনি রিয়াল। অন্যপ্রান্তে সেল্টা বারবার আক্রমণে গিয়েও কেইলর নাভাসের পরীক্ষা নিতে পারছিল না। ৩০ মিনিটে ওয়াসের ফ্রি কিকেই প্রথম কোনো বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছিল নাভাসকে।

তবে ৩৮ মিনিটে আরও বড় পরীক্ষা দিতে হতে পারত তাঁকে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে বল নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন জনি । বল ঠেকাতে হাত ব্যবহার করেছিলেন রাফায়েল ভারানে। ভারানের পা বক্সের বাইরে থাকলেও হাত বাতাসে থাকায় বোঝা যায়নি সেটা বক্সে আছে কি না। রেফারি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখান থেকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু সহকারীর সহযোগিতা না নিয়েই হ্যান্ডবলের দাবি নাকচ করে দেন রেফারি। উল্টো তর্ক করায় হলুদ কার্ড দেখতে হয় ইয়াগো আসপাসকে। দ্বিতীয়ার্ধে এই সিদ্ধান্তই ম্যাচের রূপ বদলে দিয়েছে।

দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই সমতা ফেরাতে পারত সেল্টা। কিন্তু রিয়ালের রক্ষণের কঙ্কাল বের হয়ে এলেও গোল করতে পারেনি স্বাগতিক দল। উল্টো পাল্টা আক্রমণে ইসকোর দুর্দান্ত দৌড়ের পূর্ণতা দিয়ে রোনালদোর গোল। এবারও সেই ‘দুর্বল’ বাঁ পায়ের শটে। ম্যাচটা এরপরই একটু নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠে রিয়ালের সময় কাটানো খেলাতে।

৬২ মিনিটে আবার জেগে উঠল বালাইদোস। রিয়ালের বক্সে সার্জিও রামোসের ধাক্কায় পরে গিয়েছিলেন আসপাস। সেটা ডাইভ মনে হওয়ায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড জোটে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের। তবে রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, এটি পেনাল্টি যেমন ছিল না, তেমনি ডাইভও ছিল না।

দুই মিনিট পরেই আরেক লাল কার্ড। পাল্টা আক্রমণে ওঠা রোনালদো ঠিক আসপাসের মতোই পরে গিয়েছিলেন সেল্টা বক্সে। কিন্তু রোনালদোকে সে কারণে হলুদ কার্ড না দেখানোয় সেল্টার সহকারী কোচ আরনেস্তো মারচুচ্চি নিজের মতপার্থক্য একটু ‘উগ্র’ ভাষায় জানতে গিয়েই লাল কার্ড দেখেন।

তপ্ত-উত্তপ্ত বালাইদোসকে নিয়ে জ্বলে ওঠে সেল্টা। ১০ জন নিয়েই ৬৯ মিনিটে এক গোল শোধ করে তারা।  জন গুইদেত্তির গোলে ম্যাচে ফিরছে সেল্টা—সে ভাবনা মাথায় আসতে না আসতেই পরের মিনিটে মার্সেলোর পাস থেকে করিম বেনজেমার গোল (৩-১)।

৭৫ মিনিটেই হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন রোনালদো। কিন্তু হাস্যকরভাবে সেই গোল মিস করেছেন রোনালদো। গোলের সামনে দুই সঙ্গীকে নিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে পাঠিয়েছেন বল। ৮৪ মিনিটে মাঠ থেকে উঠে যাওয়ায় সেই দুঃখ ভোলার সুযোগও পাননি।

৮৫ মিনিটে সেল্টার গোলরক্ষকের দুর্দান্ত এক সেভ ব্যবধান বাড়াতে দেয়নি রিয়ালকে। দুই মিনিট পরেই টনি ক্রুসকে (৪-১) দিয়ে গোল করিয়ে সে গোল হাতছাড়া করার হতাশা কাটিয়েছেন বেনজেমা।

এ জয় দিয়ে বার্সেলোনার চেয়ে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে গেল রিয়াল। মালাগার রোববার তাই কোনোমতে ১ পয়েন্ট পেলেই চলবে রিয়ালের। রোনালদো যদি এমন ফর্মে থাকেন, তবে এ নিয়ে জিদানকে কোনো দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত