মা হলেন সেরেনা উইলিয়ামস

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:০৫

সাহস ডেস্ক

কে বলবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইভেন্ট চলছে তারই দেশে! সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ‘মা সেরেনা উইলিয়ামস’ই যেন হয়ে উঠলেন ইভেন্ট। গোটা টেনিস দুনিয়া তো বটেই, সারা পৃথিবীর ব্যস্ত তারকারাও কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া সেরেনাকে অভিনন্দন-বার্তায় ভরিয়ে দিলেন। বিয়ন্সে থেকে রাফায়েল নাদাল— কে নেই সেই তালিকায়!

পাশাপাশি, জোর তর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে যে, সেরেনা উইলিয়ামস কবে কোর্টে ফিরতে পারবেন। বা আদৌ কি তাকে পুরনো বিধ্বংসী মেজাজে পাওয়া যাবে? সেরেনা নিজে আগে বলেছিলেন, সামনের বছরই তিনি টেনিসে ফিরতে চান। কিন্তু ছত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া তিনি কি সত্যিই আগের সেই জাদু নিয়ে ফিরতে পারবেন? টেনিস দুনিয়া সন্দিগ্ধ।

ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সেন্ট মেরিজ মেডিকেল সেন্টারে গত বুধবার ভর্তি করা হয় সেরেনাকে। শুক্রবার রাতে তার প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয়। ভারতীয় সময় অধিক রাতের দিকে মেয়ের জন্ম দেন রেকর্ড ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের অধিকারী। যদিও সেরিনা বা তার বাগদত্তা রেডিডের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সিক ওহানিয়ানের তরফে সরকারি ভাবে এ খবর জানানো না হলেও আমেরিকার একটি টিভি চ্যানেল ‘ব্রেকিং নিউজ’ চালিয়ে দেয়। তার পরেই সারা দুনিয়ার অভিনন্দন-বার্তা আসতে থাকে। 

রাফায়েল নাদাল টুইট করেন, ‘অভিনন্দন সেরেনা। দারুণ খুশির খবর’। ক্রিস এভার্ট লেখেন, ‘আমি তোমার জন্য উৎফুল্ল। নবজাতক তার হাতের সামনেই কী দারুণ এক রোল মডেল পাচ্ছে’। সেরেনার কোচ প্যাট্রিক মোরাটোগ্লু মনে করিয়ে দেন, ‘তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। কোর্টে তোমার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের অসমাপ্ত কাজ রয়েছে’।

ভেনাস উইলিয়ামসকেও শনিবার সেরেনার সন্তান নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। ম্যাচ শুরুর আগে তিনি বলেন, ‘‘স্বাভাবিক ভাবেই আমি দারুণ উত্তেজিত। কথায় বোঝানো যাবে না।’’ ম্যাচের পরে ভেনাস আর এই নিয়ে কথা বলতে চাননি। শুধু জানা যায়, সেরেনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তার। এরই মাঝে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসেন, বাচ্চার হাত কি বেশ শক্তিশালী? ফোরহ্যান্ড মারতে পারবে তো? যা শুনে ভেনাস ‘ওহ মাই গড’-এর বেশি কিছু বলতে পারেননি।

টেনিস দুনিয়ায় অভিনন্দনের স্রোতের পাশাপাশি এই আলোচনাও চলছে যে, নারী টেনিসের অবিসংবাদী এক নম্বরের আসন কি আর ফিরে পাবেন উইলিয়ামসদের ছোট বোন? মা হওয়ার পরেও কোর্টে ফেরার উদাহরণ রয়েছে। যেমন কিম ক্লিস্টার্স। সন্তানের জন্মের পাঁচ মাস পরে তিনি ফিরেছিলেন। কিন্তু ক্লিস্টার্স কোর্টের মধ্যে যে রকম উড়তেন আগে, তা আর দেখা যায়নি। সবচেয়ে ধাক্কা খেয়েছিল সার্ভিসের গতি। মা হওয়ার সময় ক্লিস্টার্স ছিলেন বিশ্বের এক নম্বর। কিন্তু তখন তার বয়স ছিল ২৭। সেরিনা ৩৬। তিনি যতই ক্লিস্টার্সের চেয়ে প্রতিভাবান এবং শক্তিশালী হন, প্রত্যাবর্তনের কাজটা সহজ হবে না।

শারীরিক সক্ষমতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, মানসিক ভাবে সেরেনার মধ্যে আর সেই মরিয়া ভাবটা থাকবে কি না। তিনি ইতোমধ্যেই স্টেফি গ্রাফকে টপকে ওপেন যুগে সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার রেকর্ড করেছেন। তা হলে মাতৃত্বের এই নতুন আনন্দ উপভোগ করা ছেড়ে দিয়ে তিনি আর কী জন্য কোর্টের নিংড়ে নেওয়া পরিশ্রমের পৃথিবীতে ফিরবেন? সমসাময়িক খেলোয়াড়দের মধ্যে আর এক তারকা রয়েছেন যিনি মা হওয়ার পরে কোর্টে ফেরার লড়াই শুরু করেছেন। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। কিন্তু তারও বয়স সেরেনার চেয়ে অনেক কম, ২৭। 

ক্লিস্টার্স এবং আজারেঙ্কার কোচের ভূমিকা পালন করা ফিসেট মনে করছেন, তার দুই ছাত্রীর চেয়ে সেরেনার অবস্থানটা আলাদা। ফিসেট বলছেন, ‘‘কিম বা ভিক্টোরিয়ার অনেক কিছু লক্ষ্য পূরণ বাকি ছিল। মাতৃত্বের আগে ওরা সফল হয়েছিল, কিন্তু দারুণ কিছু প্রাপ্তি ছিল না। কিন্তু সেরেনার তো সব কিছু জয় করা হয়েই গিয়েছে।’’

আবার এটাও মনে রাখা দরকার যে, তার নাম সেরেনা উইলিয়ামস। অভাবনীয় সব কাণ্ডই ঘটিয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ থেকে উঠে এসে শ্বেতাঙ্গ শাসিত একটি খেলায় চিরশ্রেষ্ঠদের একজন হয়েছেন। বয়স্কতম খেলোয়াড় হিসেবে টেনিসের এক নম্বর হয়েছেন। ‘পালমোনারি এমবলিজিম’ নামক ভয়ঙ্কর রোগের সঙ্গে লড়াই করে বছরের পর বছর ধরে খেলে গিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত