সিরিজ নিশ্চিত করলো দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৫৯

সাহস ডেস্ক
এবি ডি ভিলিয়াসের্র ব্যাটিং নৈপুন্যে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। পার্লে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রোটিয়ারা ১০৪ রানে হারিয়েছে টাইগারদের। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের সেরা ডি ভিলিয়ার্স ১৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১০৪ বলে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেন। 
 
প্রথম ওয়ানডের মত এবারও টস জিতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ২৭৯ রানের টার্গেট ছুঁয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক। এ ম্যাচেও শুরুটা সেভাবেই করেছিলেন তারা। কিন্তু এবার আর আগের মত বড়সড়ভাবে নিজেদের ডাল মেলতে পারেননি আমলা ও ডি কক। দলীয় ৯০ রানেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। ইনিংসের ১৮তম ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে ডি কককে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। মাত্র ১টি বাউন্ডারিতে ৬১ বলে ৪৬ রান করেন কিম্বার্লি ওয়ানডেতে ম্যাচ সেরা ১৬৮ রানের ইনিংস খেলা ডি কক। 
 
ডি ককের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে নিজের পরিকল্পনামত খেলছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস। এমন সময় তার পরিকল্পনার পাতা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দেন সাকিব। ডি কককে শিকার করার তিন বল পরই ডু-প্লেসিসের উইকেট ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেন সাকিব। ফলে দারুনভাবে খেলায় ফিরে বাংলাদেশ। 
 
এমন সময় দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও চেপে ধরার পায়তারা করছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। তাই বোলিং-এ বেশ কয়েকটি পরিবর্তনও আনেন তিনি। কিন্তু ম্যাশের পরিকল্পনায় বাঁধ সাধেন আমলা ও সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। দ্রুতই উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে রানের গতি বাড়িয়ে দেন তারা। তাই ৩৩তম ওভারেই ২শ’ রানের কোটা স্পর্শ করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। 
 
আগের ম্যাচে ১১০ রান আমলা, আরও একটি সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের সহায়তা নিয়ে আমলাকে ৮৫ রানেই থামিয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন। ৯২ বল মোকাবেলা করে ৪টি চার মারেন আমলা। ডি ভিলিয়ার্সের সাথে ১০৮ বলে ১৩৬ রান যোগ করেন তিনি। এই নিয়ে ১২ বার ডি ভিলিয়ার্সের সাথে সেঞ্চুরির জুটি গড়লেন আমলা। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে এটিই সর্বোচ্চবার সেঞ্চুরির জুটি। 
 
আমলার বিদায়ে বিধ্বংসী রুপ নেন ডি ভিলিয়ার্স। ৬৮ বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান এখন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। তিন অংকে পা দিয়ে আরও মারমুখী হয়ে উঠেন ওয়ানডেতে ৩১ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক ডি ভিলিয়ার্স। তাই পরবর্তীতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফিকে ৩টি, পেসার তাসকিনকে ২টি ও সাকিবকে ১টি করে ছক্কা মারেন তিনি। তাতে প্রোটিয়াদের রান বাড়ছিলো দ্রুততার সঙ্গে। 
 
রানের পাহাড়ে উঠতে ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটের দিকেই চেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ৪৮তম ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে ডি ভিলিয়ার্স ঝড় থামান বাংলাদেশের পেসার রুবেল। তবে ইতোমধ্যেই ক্যারিয়ার সেরা ১৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১০৪ বলে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
 
আর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাট্টিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন রুবেল। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। তবে দিন শেষে ৬২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার রুবেল। সেই সাথে শেষ দিকে ডি ভিলিয়ার্সসহ ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রানের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছেন রুবেল। তাই ৬ উইকেটে ৩৫৩ রানের সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। 
 
জয়ের জন্য ৩৫৪ রানের লক্ষ্যে শুরুটা যেভাবে প্রয়োজন ছিলো, সেভাবেই করার চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ইনজুরির কারণে আগের ম্যাচে অনুপস্থিত তামিম জীবন পেয়ে ৩টি চারে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। রয়ে সয়ে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন অন্যপ্রান্তে থাকা ইমরুল। 
 
কিন্তু অষ্টম ওভারে বিদায় ঘন্টা বাজে তামিমের। ২৫ বলে ২৩ রান করে লেগ বিফোর হন তিনি। বাউন্ডারি ছিলো ঐ ৩টিই। এরপর উইকেটে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ লিটন কুমার দাস। তবে শুরুটা দুর্দান্ত ছিলো তার। ১টি করে চার ও ছক্কায় শুরু করেছিলেন লিটন। কিন্তু ১২ বলে ১৪ রানের বেশি করতে পারেনি তিনি। 
 
৬৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব পান ইমরুল ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতে সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় রাখেন তারা। তাতে দেড়শ রান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সাথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ইমরুল। গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানের পর ৪ ইনিংস বাদে হাফ-সেঞ্চুরি পেলেন ইমরুল। শেষ পর্যন্ত ভুল শটেই নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন তিনি। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৭ বলে ৬৮ রান করেন ইমরুল। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুরের সাথে ১০৯ বলে ৯৩ রান যোগ করেন ইমরুল। 
 
দলীয় ১৬২ রানে ইমরুলের ফিরে যাবার স্মৃতি ভোলার আগেই সাকিব আল হাসানকে হারানোর দৃশ্যও সহ্য করতে হয় বাংলাদেশকে। দলীয় ১৭১ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ-স্পিনার ইমরান তাহিরকে অহেতুক খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। তখন তার নামের পাশে মাত্র ৫ রান। 
 
এরপর বাংলাদেশের আশা-ভরসার প্রতীক হিসেবে ছিলেন মুশফিকুর। সাথে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ-সাব্বির রহমান-নাসির হোসেনের মত ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু হতাশ করেছেন তারা। ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ-সেঞ্চুরির তুলে ৬০ রানে থেমে যান মুশফিকুর। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ বল মোকাবেলায় নিজের ইনিংসটি সাজান মুশি। 
 
এরপর দলের হাল ধরতে ব্যর্থ হন পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। তাই ২৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষদিকে মাহমুদুল্লাহ ৩৫, সাব্বির ১৭ ও নাসির ৩ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ফেলুকুয়াও ৪টি ও তাহির ৩টি উইকেট নেন। 
 
ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে আগামী ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। 
 
স্কোর কার্ড :
দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং :
আমলা ক মুশফিকুর ব রুবেল ৮৫
ডি কক এলবিডব্লু ব সাকিব ৪৬
ডু-প্লেসিস বোল্ড ব সাকিব ০
ডি ভিলিয়ার্স ক সাব্বির ব রুবেল ১৭৬
ডুমিনি এলবিডব্লু ব রুবেল ৩০
বেহারদিয়ান অপরাজিত ৭
প্রিটোরিয়াস ক ইমরুল ব রুবেল ০
ফেলুকুয়াও অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-৭) ৯
মোট (৬ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩৫৩
উইকেট পতন : ১/৯০ (ডি কক), ২/৯০ (ডু-প্লেসিস), ৩/২২৬ (আমলা), ৪/৩৪৩ (ডি ভিলিয়ার্স), ৫/৩৫৩ (ডুমিনি), ৬/৩৫৩ (প্রিটোরিয়াস)।
 
বাংলাদেশ বোলিং :
মাশরাফি : ১০-০-৮২-০ (ও-১),
তাসকিন : ৯-০-৭১-০ (ও-৩),
সাকিব : ১০-০-৬০-২ (ও-১),
নাসির : ৮-০-৪৯-০ (ও-১),
রুবেল : ১০-০-৬২-৪ (ও-১),
সাব্বির : ১-০-১১-০,
মাহমুদুল্লাহ : ২-০-১৬-০ (ও-১)।
বাংলাদেশ ব্যাটিং :
তামিম এলবিডব্লু ব প্রিটোরিয়াস ২৩
ইমরুল কায়েস ক ডি ভিলিয়ার্স ব তাহির ৬৮
লিটন দাস এলবিডব্লু ব ফেলুকুওয়াও ১৪
মুশফিকুর ক ডুমিনি ব প্রিটোরিয়াস ৬০
সাকিব ক ডি কক ব তাহির ৫
মাহমুদুল্লাহ ক মিলার ব প্রিটোরিয়াস ৩৫
সাব্বির রহমান ক ডু-প্লেসিস ব তাহির ১৭
নাসির হোসেন বোল্ড ব ফেলুকুয়াও ৩
মাশরাফি এলবিডব্লু ব ফেলুকুয়াও ০
তাসকিন অপরাজিত ৩
রুবেল বোল্ড ব প্যাটারসন ৮
অতিরিক্ত (লে বা-৪, ও-৯) ১৩
মোট (অলআউট, ৪৭.৫ ওভার) ২৪৯
উইকেট পতন : ১/৪৪ (তামিম), ২/৬৯ (লিটন), ৩/১৬২ (ইমরুল), ৪/১৭১ (সাকিব), ৪/১৮৪ (মুশফিকুর), ৬/২১৯ (সাব্বির), ৭/২৩৪ (নাসির), ৮/২৩৪ (মাশরাফি), ৯/২৩৯ (মাহমুদুল্লাহ), ১০/২৪৯ (রুবেল)। 
 
দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিং :
রাবাদা : ৯-১-৪০-০ (ও-২),
প্যাটারসন : ৮.৫-০-৬৭-১ (ও-১),
প্রিটোরিয়াস : ১০-০-৪৮-২ (ও-২),
ফেলুকুয়াও : ১০-১-৪০-৪ (ও-৩),
তাহির : ১০-০-৫০-৩ (ও-১),
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ম্যাচ সেরা : এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত