যৌন হয়রানি বন্ধে কেনিয়ার স্কুলগুলোতে বিশেষ উদ্যোগ

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:১৮

সাহস ডেস্ক

রাস্তাঘাটে অথবা যানবাহনে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া বিশ্বব্যাপী নারীদের একটি অন্যতম সমস্যা। কেনিয়ার নাইরোবিতে কিছু স্কুলে বিশেষ ক্লাসে শেখানো হচ্ছে কোন ধরনের আচরণ যৌন হয়রানি হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে গণ পরিবহনে। এই ক্লাসে আরো শেখানো হচ্ছে যৌন হয়রানির শিকার হলে একজন ভুক্তভোগীর কেমন লাগে এবং কিভাবে তার পাশে দাঁড়াতে হয়।

কিন্তু ক্লাসরুমের বাইরে এসব শিক্ষা কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে?

এই শিক্ষার জন্য ক্লাসরুমের মধ্যেই নাটকের মতো দৃশ্য সাজানো হয়েছে। এমন পরিবেশ বানানো হয়েছে যেন ঠাসাঠাসি বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন মানুষজন। এই ভিড়ের মধ্যে নারী যাত্রী থাকলে কি ধরনের আচরণ যৌন হয়রানি বলে গণ্য হবে ক্লাসে সেটিই শেখানো হচ্ছে। বাসে নারী যাত্রীদের সাথে কেউ অশোভন আচরণ করলে অন্য যাত্রীরা কি করতে পারেন সেটিও শেখানো হচ্ছে।

একজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রশিক্ষণে মূলত যা শিখছি তা হল, কিভাবে মেয়েরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। সেটি যেমন বোঝার চেষ্টা করছি তেমনি কিভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হয় সেটিও শিখছি। নাইরোবিতে যানবাহনে সবসময় খুব ভিড় থাকে। অনেক জায়গাতেই রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভর্তি। ভিড়ের মধ্যে হয়ত জায়গা বদল করার দরকার পড়ে বা গাড়ি রাস্তার ভাঙা অংশে পড়ে দুলে ওঠে। যেসব লোকের মনের মধ্যে হয়ত কিছু একটা কাজ করে, এরকম পরিস্থিতিতেই তারা সুযোগটা নেয়।

উযামা নামে একটি প্রতিষ্ঠান নাইরোবির বিভিন্ন স্কুলে এই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

২০১৩ সাল থেকে তারা ৪০ হাজারের বেশি কিশোরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। উযামা আফ্রিকার কর্মকর্তা ন্যান্সি ওমন্ডি জানান, তাদের উদ্দেশ্য ছেলেরা যেন সমস্যার কারণ না হয়ে বরং সমস্যা মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে।

ন্যান্সি ওমন্ডি বলেন, আমরা গবেষণা করে পেয়েছি যে ৫২ শতাংশ মেয়ে তাদের বয়ফ্রেন্ডদের দ্বারাই ধর্ষণের শিকার হয়। আমাদের মনে হয়েছে ছেলেদের অবশ্যই এর সমাধানের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করতে হবে। তাদের আমরা শেখানোর চেষ্টা করছি যে এখনই সময়। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং মেয়েদের জন্য তাদের একটা ভূমিকা রাখতে হবে।

গবেষণা বলছে কেনিয়াতে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ কোন না কোন প্রকার যৌন সহিংসতার শিকার। প্রতি তিনজন নারীর একজন ১৮ বছরে বয়স হওয়ার আগে অন্তত একবার যৌন নির্যাতনে শিকার হন। যানবাহন এধরনের ঘটনার অন্যতম একটি উৎস। দেশটিতে নারীদের মধ্যে অর্ধেকই যানবাহনে নানা ধরনের যৌন হয়রানির ঘটনার শিকার হয়।

ক্যালভিন জেকবস বলছেন, প্রশিক্ষণ নেয়ার পর থেকে সবাই জানতে চায় আমরা আসলে কি করছি। তাদের আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি যে, কোন ধরনের খারাপ আচরণ বন্ধ করতে আমরা নিজেরা কি করতে পারি। আমরা তাদের একটা চিত্র দেয়ার চেষ্টা করেছি যে এই নারীরা আমাদের মা, বোন, খালা অথবা দাদি নানি। আমরা যদি তাদের নিরাপত্তা দিতে পারি তাহলে সেটা আমাদেরই উপকারে আসবে।

এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আফ্রিকার আরো কিছু দেশে উযামার এই প্রশিক্ষণ চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই কেনিয়ার আদলে আফ্রিকার আরেকটি দেশ মালাউইতেও একই ধরনের ক্লাস চালু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত