‘রেশন না পেয়ে’ এক নারীর মৃত্যু

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৫৪

সাহস ডেস্ক

সখিনা আশফাক (৫০) নামের এক নারী খুবই অসুস্থ। এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে রেশন আনতে দোকানে যেতে পারেনি। অবশেষে ওই নারী খাদ্যসামগ্রী না পেয়ে ক্ষুধায় মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশে।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাজ্যটির বেরিলি এলাকায় নিজ বাড়িতে ওই নারীর মৃত্যু হয়।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, মৃত্যুর সময় একেবারেই কঙ্কালসার ছিলেন সখিনা। তার মৃত্যুর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের রেশনের খাবার না পাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা তদন্ত করছে রাজ্য সরকার।

পরিবারের অভিযোগ, সখিনা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তিনি নভেম্বর মাসের জন্য আঙুলের ছাপ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আধার (ভিত্তি) কার্ড নিতে রেশনের দোকানে যেতে পারেননি। তার পক্ষ থেকে অন্য কাউকে কার্ড দিয়ে খাদ্যদ্রব্য দেওয়াও হয়নি। আর এ কারণেই অভুক্ত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে তার।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানিয়েছে, ক্ষুধায় নয়, সখিনা মারা গেছেন অসুস্থতায়। তবে সখিনার স্বামী মোহাম্মদ ইসহাক অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্ষুধায় মারা গেছে আমার স্ত্রী। সে খুবই অসুস্থ ছিল। আমরা রিকশায় করে তাকে সেখানে (রেশনের দোকান) নিয়ে যেতাম। কিন্তু এবার সে খুবই অসুস্থ ছিল। আমরা কোটেদারের (রেশনের দোকানের কর্ণধার) কাছে মিনতি করেছিলাম। কিন্তু তিনি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন ছাড়া কোনো কিছুই দেবেন না বলে জানিয়ে দেন।’

ইসহাক আরো বলেন, রেশনের দোকানের মালিক সখিনাকে সশরীরে উপস্থিত হতে চাপাচাপি করছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দরিদ্রতম লোকজনের জন্য উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের আন্তিওদয়া প্রকল্পের আওতায় পরিবারটি প্রতি মাসে ৩৫ কেজি গম, চাল ও চিনি পেত। 

এ বিষয়ে বেরিলিতে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সীমা ত্রিপাঠি বলেন, বায়োমেট্রিক তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিতের জন্য কেউ উপস্থিত হতে না পারলেও খাদ্য সরবরাহ বন্ধের কোনো আদেশ নেই।

‘আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। তার আন্তিওদয়া কার্ড ছিল। আমরা মৃত্যুর আসল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আধার কার্ডের কারণে লোকজন রেশনের খাবার পাবে না বলে সরকারি কোনো বিধান নেই। আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। আন্তিওদয়া কার্ডে থাকা ব্যক্তি যদি (রেশনের দোকানে) না যেতে পারেন, তাহলে তার পক্ষ থেকে অন্য কোনো আত্মীয়কে রেশনের কার্ড দেওয়ার নিয়ম রয়েছে’, বলেন ত্রিপাঠি।

স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ক্ষুধায় মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, সখিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় চার হাজার রুপি ছিল। তবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের জন্য রেশনের দোকান থেকে কেন চাপ দেওয়া হচ্ছিল, সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তারা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঝাড়খন্ডে ভাতের জন্য কান্নাকাটি করে ১১ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই শিশুটির পরিবার জানান, আধার কার্ড না থাকায় তাদের রেশনের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়নি।

সাহস২৪.কম/আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত