রক্তাক্ত গাজা, একদিনে নিহত ৫৫ ফিলিস্তিনি

প্রকাশ : ১৫ মে ২০১৮, ১১:৪৮

সাহস ডেস্ক

ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে এক দিনেই ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। দু হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের হামলায় আহত হয়েছে। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর এক দিনে এত বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল সোমবার (১৪ মে) ইসরায়েলের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও তাঁর স্বামী জেরার্ড কুশনার।

যুক্তরাষ্ট্র যেদিন ইসরায়েলে তাদের দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নিল, সেদিন এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটলো গাজায়। ফিলিস্তিনি দূত গাজায় যা ঘটছে তাকে এক বর্বরোচিত আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন।

মিসর অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে। অন্যদিকে তুরস্ক এই ঘটনাকে হত্যাযজ্ঞ বলে বর্ণনা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার জেইদ বিন রাদ জেইদ আল হুসেইন বলেছেন, যারা এই জঘন্য মানবাধিকার লংঘনের জন্য দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

ইসরায়েলি সেনাদের গুলি
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের উপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু ইউরোপসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুসালেমে তারা গড়ে তুলেছে দু’লাখ ইহুদির জন্যে বহু বসতি। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।

একসময় জেরুসালেমে বহু দেশের দূতাবাস ছিলো। কিন্তু ১৯৮০ সালে ইসরায়েল জেরুসালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করার পর বহু দেশ সেখান থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নেয়। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

জেরুসালেমের এক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা আদেল হালাক বলেন, "এই ভূমিতে বহু নবী এসেছেন। তারা আমাদের জন্যে বহু বাণী ও ধর্ম নিয়ে এসেছেন। ট্রাম্প নামে আমাদের আর কোন নবীর দরকার নেই। আমেরিকার শক্তি তো সবখানেই আছে। আমাদের এখানে তার দরকার নেই।"

জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি এটিকে ইসরায়েলের জন্য একটি 'গৌরবময়' দিন বলে বর্ণনা করেছেন।

অন্যদিকে এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন জেরুসালেমই যে ইসরায়েলের রাজধানী এটি স্বীকার করে নেয়ার ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে ব্যর্থতা দেখা গেছে। তবে তিনি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্য শান্তির ব্যাপারে অনেক আশাবাদী।

কিন্তু ফিলিস্তিনি একজন কর্মকর্তা সায়েব এরাকাত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়া আন্তর্জাতিক আইনের বিরাট লঙ্ঘন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত