থাই গুহা থেকে ১২ সদস্য ও তাদের কোচকে উদ্ধারের শ্বাসরুদ্ধকর গল্প

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ১৬:৩০ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ১৬:৫৮

অনলাইন ডেস্ক

থাইল্যান্ডের থ্যাম লুয়াং গুহা থেকে স্থানীয় ফুটবল দল উইল্ড বোরের ১২ সদস্য ও তাদের কোচকে উদ্ধারের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান সফল হয়েছে। শুধু থাইল্যান্ডেই নয় সারা বিশ্বের মানুষই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কারণ দু’সপ্তাহ ধরে গুহায় আটকে থাকা কিশোর এবং কোচকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সারা বিশ্বের মানুষ।

তিনদিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের শেষদিন মঙ্গলবার কোচসহ অন্য চার কিশোরকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে থাই নেভি সিল। তিনটি দলে ভাগ হয়ে উদ্ধার অভিযানে ৯০ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ করে। তাদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের।

শ্বাসরুদ্ধকর ওই অভিযানের গল্প শোনালেন ইভান কারাদজিক নামের এক ডেনিস ডাইভিং প্রশিক্ষক। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের চূড়ান্ত অভিযান শেষে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার অভিযানের তৃতীয়দিনে গুহা থেকে নবম, দশম এবং এগারোতম কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। থাই নেভি সিলের ফেসবুক পেইজে অভিযানের শেষ দিন মঙ্গলবার উল্লেখ করে দেয়া এক পোস্টে বলা হয়, উইল্ড বোরের নবম সদস্যকে বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে গুহা থেকে বাইরে আনা হয়েছে।

এর কিছুক্ষণ পর দশম কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। পরে ৫টা ৮ মিনিটে উদ্ধারকারীরা ১১তম কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে গুহা থেকে বের হন। তবে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গুহায় আটকা কিশোর ফুটবল দলের আরো এক সদস্য ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচকে সবার শেষে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার অভিযানের দায়িত্বে থাকা থাই নেভি সিল বলছে, গুহায় আটকা সকলকে উদ্ধার করা হয়েছে। অসাধারণ এবং কষ্টদায়ক এই অভিযান শেষ হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে নেভি সিল। ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে থাই নেভি সিল বলছে, ‘১২ উইল্ড বোর ও তাদের কোচ এখন গুহার বাইরে। সবাই নিরাপদ।’

ইভান কারাদজিক বলেন, আটকে পড়া ওই কিশোরদের এমন একটি কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, যা তারা কখনও করেনি। ১১ বছর বয়সের যেকোনো সাধারণ কিশোরের জন্য গুহা থেকে ডুবসাঁতার দিয়ে বেরিয়ে আসাটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে তাদের ডুব সাতার দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে।

গুহার ভেতরে পানির নিচের কোনো কিছুই দৃশ্যমান ছিল না। আমাদের সঙ্গে থাকা টর্চ লাইটই ছিল একমাত্র ভরসা। এতে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আতঙ্কে ছিলাম আমরা। উদ্ধার সরঞ্জামগুলোতেও যেকোনো সময় ত্রুটি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল।

ওই কিশোরদের প্রশংসা করে ইভান কারাদজিক বলেন, আমরা বুঝতে পারছিনা এত ছোট ছোট বাচ্চারা কিভাবে এতটা স্বাভাবিক ছিল। দু’সপ্তাহ ধরে তারা ওই গুহার ভেতরে আটকা ছিল। তারা এতদিন ধরে তাদের মাকে দেখতে পায়নি। তারা সত্যিই অনেক সাহসী আর শক্তিশালী। সত্যিই অবিশ্বাস্য।

সাংবাদিকরা ইভান কারাদজিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন যখন প্রথম কিশোরকে বের করে আনা হলো তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল? এর উত্তরে ইভান কারাদজিক বলেন, আমি যখন ডুবুরির সঙ্গে একটি শিশুকে বেরিয়ে আসতে দেখছিলাম তখন সত্যিই ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ তখন পরিস্কারভাবে সব কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আমরা হয়তো ৫০ মিটার পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলাম। তাই আমরা বুঝতে পারছিলাম যে কিশোরটিকে নিয়ে আসা হচ্ছে সে জীবিত না মৃত। তাই সত্যি সত্যিই আমি খুব ভীত ছিলাম। আমি ভালো অনুভব করছিলাম না। কিন্তু যখন আমি দেখলাম সে বেঁচে আছে, শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে এবং তাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে তখন সত্যিই খুব ভালো লাগছিল।

দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার সংকীর্ণ ও উঁচু-নিচু জলমগ্ন পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শুরু হয় রোববার। প্রথম দিকে থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গুহায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ও বর্ষা মৌসুমে বর্ষণের কারণে তাদের এখনই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

কিন্তু রোববার নাটকীয়ভাবে বন্যার পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় এবং বর্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার মিশনের প্রধান ও চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর ন্যারংস্যাক ওসোত্তানাকর্ন জানান, কিশোরদের উদ্ধারে এখনই উপযুক্ত সময়। রোববার প্রথম দফায় চারজন ও সোমবার দ্বিতীয় দফায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবারের অভিযানে মোট ১৯ জন ডুবুরিকে গুহার ভেতরে উদ্ধার অভিযানে পাঠানো হয়। এক একজন কিশোরকে দু’জন করে ডুবুরি বাইরে আনার জন্য গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন। উইল্ড বোরের বাকি চার সদস্য ও তাদের কোচকে উদ্ধারের মাধ্যমে কঠিন আর দুঃসাহসিক ওই অভিযান শেষ হয়।