বেইজিং জাতের হাঁস পালন ও ব্যবস্থাপনা

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:২৯

সাহস ডেস্ক

আদিকাল থেকে গ্রাম বাংলার গৃহবধূরা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে হাঁস-মুরগি পালন করে আসছে। বাংলাদেশের সকল গ্রাম এলাকায় প্রতিটি পরিবার হাঁস পালন করে থাকে। এদের উৎপাদন ক্ষমতা মুরগির চেয়ে বেশি। উৎপাদন ব্যয়ও অতি সমান্য। হঁস অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মাংস ও ডিমের মূল্য মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশী। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে হাঁস-মুরগির গুরুত্ব অপরিসীম। তুলনামূলক স্বল্প বিনিয়োগ এবং অল্প ভূমিতে বাস্তবায়নযোগ্য বিধায় জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত। হাঁসের মাংস ও ডিম উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। হাঁস-মুরগি পালন  যুব সমাজ, ভূমিহীন কৃষক এবং দুস্হ গ্রামীন মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্হানের একটি উল্লেখযোগ্য উপায়। 


  
বেইজিং মূলত চীনের রাজধানী যার নামানুসারে এই হাঁসের জাতের নাম বেইজিং রাখা হয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এই জাতের হাঁস পালন করা সম্ভব। বেইজিং জাতের হাঁস পালনের জন্য আমাদের দেশের পরিবেশ একদম অনুকূল। এসব হাঁসের পা লালচে রং ও হাঁসগুলো সাদা রং এর হয়ে থাকে। এছাড়াও এদের ঠোটের রং হলুদ বর্ণের।  হাঁসগুলো দেশীয় জাতের হাঁসের চেয়ে ১-১.৫ মাস আগে ডিম দিতে শুরু করে এবং সারা বছর জুড়েই ডিম দিতে পারে। বেইজিং জাতের হাঁস নিজেরা বাচ্চা ফুটাতে চায় না। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটানো হয়।  যদি এই হাঁস পারিবারিকভাবে অথবা বানিজ্যিকভাবে চাষ করে দেশের আমিষের চাহিদা পুরণ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক পুকুর, ডোবা ,নালা, নিচু ভূমি আছে যেখানে এই জাতের হাঁস পালন করে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সোথে তৈরি করতে পারে কর্মসংস্হানের।

সুবিধা: দেশী হাঁসের তুলনায় এর গোশত বেশি সুস্বাদু। কোলস্টেরলের পরিমাণ কম। তিন মাসে হাঁসগুলোর গড় ওজন প্রায় পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়। এই হাঁস ৩ মাস বয়েসেই  ৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এই হাঁস মাত্র ৩ মাস বয়সেই বিক্রি করে দেয়া যায়।  খাবার বেশ কম লাগে। পূর্ণবয়স্ক হাঁস ৯০ থেকে ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে এবং প্রায় আঠারো মাস ডিম দেয়।

রোগ বালাই : হাঁস নানারকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে হাঁসের সবথেকে প্রচলিত দুটি রোগ হল ডাকপ্লেগ রোগ ও ডাক কলেরা রোগ। বেইজিং জাতের হাঁস পালনে ২৫ দিন পর প্রথমবার ডাকপ্লেগ রোগের টিকা দেয়া হয় এছাড়াও ৪০ দিন পর পুনরায় আর একবার ডাকপ্লেগ টিকা দেয়া হয়। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর টিকা দিতে হবে। সরকারি দপ্তর থেকে টিকার ভ্যাকসিন কেনাই ভালো। ভ্যাকসিন কেনার সময় দেখে নিতে হবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে কি না। বেইজিং হাঁসের রোগ বালাই অন্যান্য জাতের হাঁসের মতই। এই জাতের হাঁসের মৃত্যুহার খুবই কম। আর তেমন ভিটামিন ও দেয়ার প্রয়োজন পড়েনা তবে যতটুকু না দিলেই নয় ততটুকু দেয়া যেতে পারে। 

ডাকপ্লেগ: ডাকপ্লেগ রোগের মূল লক্ষণ হলো পা পড়ে যাওয়া, পা অবশ হয়ে যাওয়া যাকে বলে প্যারালাইজড। এরফলে হাঁস খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। 

 ডাককলেরা: ডাককলেরা ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ। কলেরা রোগের মূল লক্ষণ হচ্ছে সবুজ পাতলা পায়খানা, দুগন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা, পাখনা/ডানা ঝুলে যাবে। খাবার খাওয়া কমে যাবে। এরফলে এই হাঁস ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকবে। এর মৃত্যুর হার খুব বেশি হয় না। উন্নত ঔষধ ও উন্নত পরিচর্যায় রাখলে এই হাঁস সহজেই সুস্থ্য হয়ে যায়। দেশীয় জাতের হাঁসের চেয়ে বেইজিং জাতের হাঁস পালন করা লাভজনক।

খাদ্য : আমাদের দেশের যে প্রচলিত অন্যান্য হাঁস আছে ঠিক তাদের মত করেই এর লালন পালন করতে হয়। হাঁস লালন পালন করতে গেলে মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই পালতে হবে। আমাদের দেশী হাঁস যেভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পালন করা হয়, এই হাঁসও সেই একই পদ্ধতিতে লালন পালন করলে লাভজনক হবে।  হাঁসের বাচ্চাকে প্রথম ১ মাস ব্রয়লার ফিড খাওয়াতে হবে। ১ মাস পার হলেই ২৫ দিন বয়সে ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন দিতে হবে। তাররপর উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মাঠে, বিলে, নদীতে বিশেষ করে যেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে যেমন শামুক, ঝিনুক, আগাছা, লতাপাতা, কচুরিপানা, শেওলা, মাঠে পড়ে থাকা ধান এসব জায়গায় পালন করতে হবে। এই প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ালে ৩ মাস বয়সে এই হাঁস ৪ কেজী ওজনে বিক্রি করা যায়। এতে প্রতিটি হাঁসে ১০০-১৫০ টাকা লাভ করা সম্ভব।

বাসস্থান : পানি ছাড়া এই জাতের হাঁস পালন করা যায় না। বেইজিং জাতের হাঁসকে সময়মতো খাবার এবং পানি দিতে হয়। পারিবারিকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় এই হাঁস পালন করা যায় । এ১০০ হাঁস পালনের জন্য শুধুমাত্র ৩০০ স্কয়ার ফুট জায়গা প্রয়োজন হয়। এই জাতের হাঁস চীন ছাড়াও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারিবারিক এবং বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। খামারে দেশী হাঁসের মতই এই হাঁসগুলো একেবারেই নিজেদের মনের মত করে বিচরণ করে। এই হাঁসের রোগ বালাই অন্যান্য জাতের হাঁসের মতই এবং চিকিৎসা পদ্ধতিও একই।

প্রাপ্তিস্থান: নওগাঁ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র, খুলনা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজনন খামার, হাজীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ।
 সাহস২৪,কম/এবি.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত