কুড়িগ্রামে এলএসডি আতঙ্ক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৩৯

তানভির হোসেন রাজু, কুড়িগ্রাম

গোলাম মোস্তফা (৪৫) একজন প্রান্তিক কৃষক। কিছু দিন আগে সংসারে সচ্ছলতা আনতে শুরু করেছেন গরু পালন। তার মোটে চারটি গরু। তার মধ্যে দুইটি গরু ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত। এখন গরু নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের এ কৃষক বলেন, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে গরু দুটির গায়ে ফোস্কা দেখা দেয়। পরে গরুর মুখে ঘা হয়, পা ফুলে যায়। অবস্থা আরও খারাপ হলে গ্রাম্য ডাক্তার ডাকি। ডাক্তার এসে দেখে বলে এ রোগের নাম ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ। উনি সরকারি ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেন। ওনার পরামর্শ শুনে সরকারি ডাক্তারের চিকিৎসা নিচ্ছি। বর্তমানে অবস্থা উন্নতির দিকে। তবে এ রোগের চিকিৎসা মোটামুটি ব্যয়বহুল। এপর্যন্ত গরু দুটির চিকিৎসায় আমার প্রায় দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাকি গরু দুটি নিয়ে চিন্তায় আছি। ডাক্তার বলেছে এটা ছোঁয়াচে রোগ। কখন যে বাকি দুটো আক্রান্ত হয়। গোলাম মোস্তফার মত ওই এলাকার শতশত মানুষ গবাদিপশু নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। কৃষকেরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রোগাক্রান্ত গরু মারা না গেলেও দ্রুতই স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। আর এ রোগের চিকিৎসা চলমান রাখতে মোটা অংকের টাকা খরচ হচ্ছে। ওই এলাকার আজাদ আলী বকসী, শফিকুল ইসলাম, আলী হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার প্রায় সবারই গরু রোগাক্রান্ত। আমরা গরু নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় আছি। স্থানীয় পশু ডাক্তারের চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের কোন তৎপরতা দেখিনি। ওই এলাকার খামারি মোজাম্মেল হক বলেন, আমার খামারে ৭টি দুধের গাভী আছে। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে খামারের গরু গুলোকে পালন করতেই হিমসিম খাচ্ছি। তার উপর আবার ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। খামারে এ রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে আমার পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলায় নিবন্ধিত ৩৬০টি গাভীর খামার রয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলায় গরুর সংখ্যা ৭৪ হাজার। ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কোন গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে উপজেলার সর্বত্র এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (অঃদাঃ) ডাক্তার আতিকুজ্জামান বলেন, উপজেলায় খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগ প্রতিরোধের কোন টিকা নেই। গরুর সঠিক পরিচর্যা ও বাসস্থান পরিস্কার পরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এরোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এ রোগে আক্রান্ত গরুকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসায় এ রোগে আক্রান্ত গরুকে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত