সেচ সংকটে অনাবাদি ৪ হাজার একর বোরো জমি

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৯

নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

পানি সংকটে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়ার হাওরে হাজারও কৃষক এক ফসলি বোরো জমি চাষাবাদ করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এবার তাদের গোলায় একটি ধানও উঠবে না। একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে হাওরে আজ এই অবস্থা বলে জানান কৃষকেরা। তারা জানান, এই মৌসুমে গ্রাম্য প্রভাবশালীদের কারণে এক ফসলি পাঙ্গাসিয়া হাওরের প্রায় ৪ হাজার একর বোরো জমি অনাবাদি থেকে যাবে।

জানা যায়, শিমুলবাক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়ার হাওরের কাড়াটি আমরিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির নাম ভাঙিয়ে ইজারা নিয়ে মৌসুমের আগেই পুরো হাওরের পানি ছেড়ে দিয়েছে ইজারাদার। এতে পুরো হাওর জুড়েই দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের কিদিরপুর, রামেশ্বরপুর, ঢালাগাঁও, চাঁনপুর, আমরিয়া, কান্দাগাঁও, রুপাবালি, মুক্তাখাইসহ ৮টি গ্রামের একমাত্র হাওর পাঙ্গাসিয়ার হাওর। সেখানে শত শত হেক্টর জমি রয়েছে। অনেকের জমি সেচ সংকটে পড়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। উঁচু জমি একেবারেই অনাবাদি রয়েছে। হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালা-আমরিয়া গ্রামের পাশে পাঙ্গাসিয়া কাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ইজারাদার আমরিয়া গ্রামের আহমদ আলী, আব্দুল বাছির, ইকবাল হোসেন বাছন খালের মুখ বেঁধে খালটি সেলু পাম্প লাগিয়ে একেবারে শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করছেন।

কান্দাগাঁও গ্রামের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধিরচন্দ্র দাস, মছব্বির মিয়া, কিদিরপুর গ্রামের মশাহিদ আলী, আনজব আলী, বিরাজ আলী, রুপাবালি গ্রামের আব্দুল আজিজ, আবুল কালাম, চাঁনপুর গ্রামের আশরাফ আলী, রামেশ্বরপুর গ্রামের নিরঞ্জন দাস জানান, আমরিয়া গ্রামের ফয়জুর রহমান মেম্বার, আমরিয়া জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুর রহিম, আবুল কালাম, আলী আহমদ প্রতি বছর মসজিদের নাম ধরে হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা পাঙ্গাসিয়া কাড়া ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইজারা প্রদান করে। এই বছর তারা হাওরের পানি ছেড়ে দিয়ে মৎস্য আহরণ করেছে। তাই হাওরের উঁচু জমি সেচ সংকটের কারণে অনাবাদি রয়ে গেছে। সেইসাথে ফসল লাগানো জমিও পানির কারণে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাঙ্গাসিয়ার খাড়াটি রামেশ্বরপুর মৌজার সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। তাহলে এক গ্রামের লোকজন এটাকে কিভাবে ইজারা দেয়। এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তারা আরও জানান, একটি গ্রামের কিছু প্রভাবশালীর কারণে আমাদের ৮টি গ্রামের একটি মাত্র হাওরের আজ এই দশা। আমরা এই প্রভাবশালীদের কাছ থেকে মুক্তি চাই। হাওরের কৃষক পরিবার আজ করুণ অবস্থার অবসান চাই। প্রশাসন যেন এর প্রতিকার করেন।

ইজারাদার আব্দুল বাছির ও ইকবাল হোসেন বাছন জানান, আমরা আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েতের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাঙ্গাসিয় কাড়া ইজারা নিয়েছি। কৃষকেরা পানি না পেলে আমরা কি করবো। আমরা মৎস্য আহরণের জন্য ইজারা নিয়েছি। তাদের কাছ থেকে আমরা যেভাবে চুক্তি করেছি সেইভাবেই মৎস্য আহরণ করছি।

আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ও ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান জানান, আমাদের বাপ দাদারা গ্রামের মসজিদের উন্নয়নের জন্য পাঙ্গাসিয়ার খাড়া ইজারা দিয়ে আসছেন। ইজারার টাকা আমাদের মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। হাওরের প্রয়োজনে আমরা কাড়া বেধে রাখি এবং প্রয়োজন মতো ছেড়ে দেই।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ জামান জানান, পাঙ্গাসিয়া খাড়াটি সরকারি খতিয়ান ভূক্ত হয়ে থাকলে এটাকে কোন ব্যক্তি ইজারা দিতে পারবে না। এটা তো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। যে বা যারা ইজারা দিয়েছে ও নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত