মোহাম্মদপুরে স্কুলছাত্র সিফাত হত্যায় গ্রেফতার দুই

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১১:০৪

অনলাইন ডেস্ক

মোহাম্মদপুরে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া স্কুলছাত্র সিফাতকে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো তারই এলাকার বন্ধু তাওহিদুল ইসলাম তামিম(১৯) ও তামিমের বন্ধু মাহাদী হাসান নেহাল(২০)। এ সময় তামিমের হেফাজত হতে সিফাতের ব্যবহৃত সিম এবং ওই সিম ব্যবহৃত মোবাইল পুলিশ জব্দ করেছে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৪ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে নিখোঁজ হয় সিফাত। সিফাত নিখোঁজের একদিন পর অর্থাৎ ৬ এপ্রিল সিফাতের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে তার বাবার নম্বরে ফোন করে তার মুক্তিপন বাবদ ৩০,০০০ টাকা চাওয়া হয় ও একটি বিকাশ নম্বর দেয়। ওই বিকাশ নম্বরে তার বাবা ৪০০০ টাকা প্রেরণ করেন। এরপর ১৩ এপ্রিল সিফাতের ব্যবহৃত একই নম্বর থেকে আরেকটি বিকাশ নম্বর দিয়ে বাকী টাকা চায়। সিফাতের বাবা ২০,০০০ টাকা প্রেরণ করেন।

সিফাতের বাবা ১৪ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থানায় ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা করেন।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তদন্তে নামে। প্রেরিত বিকাশ নম্বর ও ভিকটিমের ব্যবহৃত নম্বরের প্রযুক্তিগত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ দুপুরে মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকা থেকে তামিমকে গ্রেফতার করা হয়।তামিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার বন্ধু নেহালের কথা বলে। পরবর্তী সময়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটির তার গ্রামের বাড়ি থেকে নেহালকে গ্রেফতার করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, নিহত সিফাত ও তামিম তারা অসমবয়সী হলেও এলাকার সূত্রে একই সাথে ঘোরাফেরা করে এবং আড্ডা দেয়। একসাথে খেলাধূলা করে। সেই সূত্রে তারা বন্ধু হিসেবে পরিচিত। ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ৩ এপ্রিল, ২০১৮ মোহাম্মদপুরের একটি বিকাশের দোকান থেকে নলছিটির নেহালের মোবাইলে ৫০০ টাকা বিকাশ করে তাকে ঢাকায় আসতে বলে। নেহাল ৪ এপ্রিল ঢাকায় এসে সদরঘাটে অবস্থান করে। ওইদিন দুপুরে তামিম আবার নেহালের নম্বরে ৬০০ টাকা বিকাশ করে লঞ্চের কেবিন বুকিং করতে বলে।নেহাল নিজের নাম ঠিকানা গোপন করে অন্যের নাম দিয়ে সিসি ক্যামেরা নেই এমন লঞ্চের একটি কেবিন বুকিং করে।

এদিকে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী তামিম মোহাম্মদপুর থেকে ৪৫টি চেতনানাশক ট্যাবলেট, দুইটি বস্তা, সুই, তিনটি ব্রেভার পানীয় বোতল, একটি গামছা ও একটি কাটার ক্রয় করে নেয়। তামিম অন্য একটি মাম পানির বোতলে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে নিয়ে ট্রাভেল ব্যাগে ভরে নেয়।

বেলা অনুমান দেড়টার দিকে তামিম মোহাম্মদপুরের একটি ফোন ফ্যাক্সের দোকান হতে মোবাইল করে সিফাতকে কাটাসুর নামা বাজার আসতে বলে। সিফাত ঘন্টা খানেক পরে সেখানে পৌঁছালে বেড়ানোর কথা বলে বেলা অনুমান সাড়ে পাঁচটায় তারা দুজনে সদরঘাট পৌঁছায়।

পূর্ব থেকে নেহালের ভাড়া করা লঞ্চের কেবিনে অবস্থান করে এবং আড্ডা দিতে থাকে। আড্ডার এক পর্যায়ে রাত অনুমান আটটার দিকে পূর্ব হতে চেতনানাশক মিশ্রিত পানি কৌশলে সিফাতকে খাওয়ায়। সিফাত অচেতন হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে লঞ্চ ছেড়ে দিলে নেহাল ও তামিম সিফাতের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পরে তারা ওই কেবিনে সিফাতের মৃতদেহ রেখে বাইরে অবস্থান করতে থাকে। প্রায় ঘন্টা তিনেক পরে  লঞ্চটি চাঁদপুর মোহনায় পৌঁছালে কাটার দিয়ে সিফাতের পেট কেটে পূর্ব থেকে ব্যাগে রাখা বস্তায় ভরে সেলাই করে লাশ ওই মোহনায় ফেলে দেয়। সকালে লঞ্চটি বরিশাল পৌঁছালে নেহাল তার গ্রামের বাড়ি নলছিটি চলে যায় আর তামিম ঢাকায় ফিরে আসে।

তামিম বুদ্ধিমত্তার সাথে সিফাতের সিমটি সংগ্রহে রাখে এবং ঢাকায় ফিরে ওই সিম ব্যবহার করে সিফাতের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ টাকা দাবী করতে থাকে। সুত্র: ডিএমপি

সাহস২৪.কম/রনি