বাংলাদেশের মানব পাচারকারী ও দালালদের বেশি দোষ: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২০, ১২:০৯

সাহস ডেস্ক

লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশী নিহতের ঘটনায় লিবিয়ার নাগরিকদের চেয়ে বাংলাদেশের মানব পাচারকারী ও দালালদের বেশি দোষ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ তারাই প্রলোভন দেখিয়ে হতভাগ্য লোকগুলোকে বিদেশে নিয়ে যায় এ ধরনের পরিণতির জন্য। এই দালালচক্রের সঙ্গে সরকারের যেসব ব্যক্তি জড়িত, তাদেরও গ্রাপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, ওই হতভাগ্য লোকগুলোর সবাই বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের অধিকাংশ এদেশ থেকে লিবিয়ায় গেছে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে গেলে লোক পাঠানো বন্ধ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নেওয়া নিদের্শকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। ওই সময়ে এখানকার রিক্রুটিং এজেন্সিরা যুক্তি দেখিয়েছিল যে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের মঙ্গলের দায়িত্ব সরকারের নয়। বাংলাদেশ সরকার এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয় এবং এরফলে কোর্ট সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়।

তিনি বলেন, যেহেতু লিবিয়াতে এখনও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, ওই রায় এখনও বলবৎ আছে বলে আমার ধারণা। একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে মানবপাচার হচ্ছে। এরসঙ্গে অনেকে জড়িত এবং তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি জানান, এই দালালচক্র মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় বেশি সক্রিয় এবং প্রায় প্রত্যেকের অফিস ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায়। যে ২৬ জন মারা গেছে তারমধ্যে ১১ জনের বাড়ি মাদারীপুর এবং সাত জনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ।

সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, লিবিয়াকে ইটালি পাঠানোর একটি স্টেশন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এখানকার দালালচক্র এই প্রলোভন দেখায় যে ইটালি পৌঁছে তারপরে টাকা পয়সার লেনদেন হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ত্যাগ করার পরে ওই লোকগুলো তিন থেকে চারবার বিক্রি হয়। তাদের লিবিয়া বা অন্য কোনও সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জিম্মি করা হয় এবং তাদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। দেশে ও বিদেশে গোটা প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিরা জড়িত।

সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি নিজে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের কাছে সব তথ্য আছে। কে তাদের পাঠিয়েছে, কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়েছে, তাদের ফোন নম্বর কি ইত্যাদি। এসব তথ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে তবে এই ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত