বিজয় হত্যা: আঙ্গুল উঠেছে এমপি মুন্নার দিকে

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২০, ১৯:১৬

[সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না]

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও জামতৈল সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয় হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে আঙ্গুল উঠেছে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ হাবিবে মিল্লাত মুন্নার দিকে।

গত ২৬ জুন (শুক্রবার) এনামুল হক বিজয়কে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে সন্ত্রাসীরা। ০৯ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে ০৫ জুলাই (রবিবার) মারা যায় বিজয়। এদিন সন্ধ্যায় ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল থেকে বিজয়ের মরদেহ সিরাজগঞ্জে এসে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার জনতা। তারা বিজয়ের মরদেহ বহনকারী গাড়ির সামনেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভে ছাত্রনেতা বিজয় হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেন।

[বিজয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ০৫ জুলাই (রবিবার) দুপুরে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীরা]

এদিকে বিজয়ের মৃত্যু সংবাদ সিরাজগঞ্জে পৌঁছালে ০৫ জুলাই (রবিবার) বিকেলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রায় ০২ ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে জেলা ছাত্রলীগের একাংশসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সিরাজগঞ্জের সাধারণ জনগণ। এ সমাবেশেও বক্তারা এমপি মুন্নাকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে বক্তব্য রাখেন।

বিজয়ের পিতা মো আব্দুল কাদেরের ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, কামারখন্দ উপজেলা নির্বাচনের সময়কালে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার কারনে আমার বেটাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। এমপি মুন্না আমার বেটাকে বলে নৌকার নির্বাচন কইরো না, ঘোড়ার নির্বাচন করো। বিজয়ের পিতা আরো বলেন, আমার বেটাকে যারা মারছে তাদের ফাঁসি চাই। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কামারখন্দ ও জেলার তদন্ত চলবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তদন্ত করুক।

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো সাহস২৪.কমকে বলেন, এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার আসামীরা জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা: মো: হাবিবে মিল্লাত মুন্নার লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে। এদের ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে বসিয়েছেনও তিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সাহস২৪.কমকে বলেন, সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর সিরাজগঞ্জের দলীয় রাজনীতিতে আরো প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। তাঁরা সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মোহাম্মদ নাসিমের অনুসারীদের মারধর ও হুমকি দিচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা বিজয়কে যেদিন কুপিয়ে আহত করা হয় সেদিন বিজয় মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলো। সিরাজগঞ্জে মূল ধারার রাজনীতি করার জন্যই বিজয়কে চীরতরে বিদায় দিতে হলো। আমরা এই হত্যাকান্ডে জড়িত সকলের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন সময় সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা হাইব্রিড নেতাদের জন্য পদ পেয়ে যান। এসব হাইব্রিড নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের মূল ধারার  নেতাকর্মীদের রাজনীতি বিমুখ করতে উঠে পরে লেগেছে। এদের হাতেই খুন হয়েছেন ছাত্রনেতা এনামুল হক বিজয়। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতে ও নেপথ্যের সকলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

প্রসঙ্গত, ২৬ জুন বিকেলে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে আসার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করা হয়। আশংকাজনক অবস্থায় ২৭ জুন বিজয়কে ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই আইসিইউতে রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। গত কয়েকদিন অধিকাংশ সময় সে অচেতন ছিল। এ ঘটনায় এনামুলের বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ছাত্রলীগের ০২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ০৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ০৫ জনের মধ্যে ০৪ জন গ্রেপ্তার হলেও প্রধান আসামী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিয়ারধানগড়ার শিহাব আহমেদ জিহাদ (২৩) এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান বিজয়, জাহিদুল ইসলাম ও সাগর জেলহাজতে রয়েছেন। জামিনে মুক্ত রয়েছেন আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত