অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিক্ষোভ

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১৯:০৩

ছবি: এফসি বাঁধন/সাহস২৪.কম

বেশ কিছুদিন থেকেই সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর রমনার খ্যাতনামা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার ইংরেজি মাধ্যমের প্রধান নাজমা হোসেন লাকীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এর বিধি মোতবেক তদন্ত শেষে বোর্ড কর্তৃক আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটির প্রতিবেদন মেলেনি প্রায় দুই বছরেও। এদিকে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মাসুদ রানাকেও দুই মাসের বহিষ্কারাদেশ দেয় প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি।

তবে শিক্ষক, বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ দাবি করছেন এসব কিছুই হচ্ছে পরিচালনা পর্ষদের চক্রান্তে। ছয় বছর থেকে ক্ষমতার জোরে টিকে আছে বর্তমান গভর্নিং বডি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন। নীতিমালা থাকলেও দিচ্ছেন না স্থায়ী অধ্যক্ষের নিয়োগ। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাভঙ্গ করে খেয়াল খুশি চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের রাজত্ব। 

সেই সূত্র ধরে গভর্নিং বডি এবং প্রিন্সিপালের দুর্নীতির প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) তাঁর অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যন্ড কলেজের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষকেরা। পাশাপাশি আর্মি প্রিন্সিপাল নিয়োগের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে বিক্ষোভকারীরা স্কুলের সামনে কাকরাইলের ভিআইপি রোড অবরোধ করে দীর্ঘসময় অবস্থান করেন।

সমাবেশে শিক্ষকেরা বলেন, সর্বশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সামরিক অধ্যক্ষ চলে যাওয়ার পরে আজ ছয় বছর ধরে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছেনা। এত প্রায় পাঁচ শত শিক্ষকের সমন্বয়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নজর দিয়েছে কুচক্রিরা। যারাই ন্যায্য কথা বলে তাদেরকেই বহিষ্কার করে দিচ্ছে গভর্নিং বডি। 

বক্তারা বলেন, ১৯৫৬ সালের সেন্ট জোসেফাইন উইলসের প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে মাথা তুলে রেখেছে এতদিন। যাদের আজ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আলোর বার্তা দেওয়ার কথা তারা কেন রাস্তায়? ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের অনতিবিলম্বে অপসারণের জোর দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, কর্মচারিদের নির্যাতনের টর্চার সেল বন্ধ করা, বরখাস্তকৃত শিক্ষক-কর্মচারিদের স্বপদে বহাল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের স্থায়ী করা, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বৈশাখী ভাতা, বকেয়াসহ ইনক্রিমেন্ট প্রদান, শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সকল পদায়ন বাতিল করা, বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, অধ্যক্ষের অফিসে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা, এনটিআরসি ব্যতীত সকল নিয়োগ বন্ধ করা ও বিধি মোতাবেক জ্যেষ্ঠতা প্রদান করা ইত্যাদি দাবি না মানলে এ কর্মসূচি চলবে জানিয়ে কঠোর হুশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। এছাড়া এসব দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজ দেশের প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। ১৯৫৬ সালে সেন্ট জোসেফাইন উইলস স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশ বিদেশে স্কুলটির সুনাম ছড়িয়ে পরে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত তিন মেয়াদে দেশের সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে কর্ণেল পদমর্যাদার একজন এডুকেশন কোরের অফিসারকে প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। একই সাথে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সরকারের একজন মন্ত্রী প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

সর্বশেষ সেনা কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর সাময়িক সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মো: আবুল হোসেনকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আজ দীর্ঘ ছয় বছরেও স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়নি।

দায়িত্বশীল শিক্ষকেরা অভিযোগ তোলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অদক্ষতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেছে। শিক্ষক কর্মচারীরা ঠিকমত বেতন পাচ্ছেন না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের প্রাপ্য কল্যাণ ভাতা এবং গ্রাচুইটি প্রদান করা হচ্ছে না।

বক্তারা জানান, ভুক্তভোগীরা মনবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের কোনও পুনর্মিলনী করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তুলেন শিক্ষকেরা।

বিশেষভাবে উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানের অর্থের সঠিক হিসাব দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষক কর্মচারিদের কো-অপারেটিভ থেকে অর্থও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসএ.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত