রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’: যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাবাসনে সহায়তা করবে প্রত্যাশা ঢাকার

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২২, ১২:৫৭

সাহস ডেস্ক

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ মার্কিন এই পদক্ষেপ গণহত্যার বিষয়ে জবাবদিহিতা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে বলে প্রত্যাশা করছে ঢাকা।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেরিতে হলেও এটি একটি ভালো খবর। আমরা একে স্বাগত জানাই।’

তিনি বলেন, কোথাও গণহত্যা সংঘটিত হলে তা স্বীকার করতে হবে এবং অপরাধীদের শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত নয়।

মোমেন বলেন, আমরা বলি আমরা কোনো গণহত্যা দেখতে চাই না। দুর্ভাগ্যবশত, তবুও গণহত্যা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ভালো বন্ধু উল্লেখ করে মোমেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এটি মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। যার ফলে তারা রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, ‘যদি এই মার্কিন ঘোষণার মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয়, তবে আমরা খুব খুশি হব।’

তিনি আরও বলেন, তারা দুটি লক্ষ্যের ওপর জোর দিচ্ছে - প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের কল্যাণ এবং গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করা।

মোমেন বলেন, গণহত্যার শিকার ব্যক্তিরা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন এবং আশা করেন যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাটি গতি পাবে।

ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণাকে রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের সকল মানুষের জন্য এবং গণহত্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যাপক প্রচেষ্টার জন্য ‘ঐতিহাসিক’ অর্জন বলে অভিহিত করেছেন।

ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘গণহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বনেতাদের অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে। মার্কিন সরকার আজকে ঠিক তাই করেছে।’

সোমবার ফোরটিফাই রাইটস বলেছে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উত্থাপন করে তার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার ওয়াশিংটনের ইউএস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এক অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রচারণায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতার নিশ্চিত বিবরণের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা ইউক্রেনের জনগণের পাশে আছি, এবং আমাদের অবশ্যই এমন লোকদের পাশে দাঁড়াতে হবে যারা অন্যান্য জায়গায় নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।’

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইতোমধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই ঘোষণা মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ‘গণহত্যা’র অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে জান্তা সরকার।

ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতের দায়বদ্ধতার ভিত্তি স্থাপন করছি, আমরা সামরিক বাহিনীর চলমান নৃশংসতা বন্ধ করার জন্যও কাজ করছি এবং বার্মার জনগণকে সমর্থন করছি। কারণ তারা দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’

২০১৭ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

বিলম্ব হওয়া সত্ত্বেও ‘গণহত্যার’ এই ঘোষণাকে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং কংগ্রেস সদস্যরা স্বাগত জানিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত