সুনামগঞ্জে ৩১ হাওরে ২০ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯:০২

নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে পর পর হাওর ডুবির ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে কৃষক সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২ এপিল থেকে শুরু করে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাঁধ ভেঙ্গে ও পানি উপচে জেলার ছোট বড় ৩১টি হাওর তলিয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেলেও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য তুলে না ধরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িতদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কাজ করছে বলে অভিযোগ হয় সংবাদ সম্মেলনে।

হাওরে এখনো অর্ধেক ধান কাঁচা অবস্থায় থাকলেও কৃষি বিভাগ খাতা-কলমে ধান কাটার পার্সেন্টেজ বাড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। কৃষকের স্বার্থে হাওর ডুবির প্রকৃত তথ্য সরকারকে জানানোর পাশাপাশি হাওরের ধান কাটার সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান সংগঠনের নেতারা। হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সুকেন্দু সেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল।

সংবাদ সম্মলেন লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ২৪ নং পিআসির নজরখালির বাঁধ ভেঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরের ১২০০ হেক্টর কাঁচা ধান তলিয়ে যায়। ৪ এপ্রিল ছাতক উপজেলার গোয়া-পান্ডুয়া, নাগা উন্দা, পুটিয়া ও জল্লার হাওরের ৭১ হেক্টর, একইদিন শাল্লা উপজেলায় বাঁধ উপচে বাঘার হাওরের ৪২৫ হেক্টর এবং পরদিন ৫ এপ্রিল নদীর পানি উপচে কৈয়ারবনন্দ ও পুটিয়ার হাওরের ৪০ হেক্টর, একই দিন জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ৭৫, ৭৬, ৯২, ৯৩ পিআইসির চন্দ্রসোনার থালা উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে চন্দ্র সোনার থালা হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর, একইদিন ৫৪ নং পিআইসির সোনামরল হাওর উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যায়।

৬ এপ্রিল নদীর পানি উপচে শাল্লা উপজেলার গোব্বরহরি হাওরের ৪০ হেক্টর, একইদিন দিরাই উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত হাওর চাপতির হাওরে উপ প্রকল্পের ১৬ নং পিআইসির বৈশাখির বাঁধ ভেঙ্গে চাপতির হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এতে দিরাই উপজেলার তাড়ল, জগদল, করিমপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এদিন দিরাই উপরেজলার টাংনির হাওরের জারালিয়া খেয়াঘাটের বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে প্রায় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি মুখে পড়ে। পরবর্তিতে কৃষকরা বাঁধটি মেরামত করেন।

৮ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ফল্লিয়ারদাইড় আফার দিয়ে পানি প্রবেশ করে এরালিয়া হাওরের ১৬০০ হেক্টর এবং ওইদিন মধ্যনগর উপজেলার পাওধোয়া বাঁধ ভেঙ্গে মুক্তারখলা হাওরের ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল গুরমার বর্ধিত অংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে গুরমার হাওরের ২ হাজার হেক্টর এবং একইদিন দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা উপ-প্রকল্প ৪২ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে হুরামন্দির বাঁধ ভেঙ্গে ১২০০ হেক্টর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইডরা বিল, পুরাইডরা, নউল্লা, বইশমারা, বারকুল, সিলাইন, ডাবরবিল, মরা ডাবরের ৪৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এছাড়াও এদিন নদীর পানি উপচে জগন্নাথপুর উপজেলার গলাকাটা হাওর ও শেওরারবন হাওর ৩২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়।

২০ এপ্রিল মধ্যনগরের ইন্দরপুর বাঙ্গালভিটার বাঁধ ভেঙ্গে রাঙ্গামাটির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর হাপাতির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর আহমদাবাঁধ হুন্দাবিললের ৭৫ হেক্টর, ২১ এপ্রিল কোন্দানাল ব্রিজের পুটিয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ছাতক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৫০০ হেক্টর, ২৪ এপ্রিল শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৮১ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গ প্রায় ২০০০ হাজার ধান তুলিয়ে যায়। সর্বশেষ ২৬ এপ্রিল জামালগঞ্জ উপজেলার আছানপুর ১৭ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের শুরু থেকে পিআইসি গঠনে অনিয়ম, বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি আর লুটপাটসহ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাঁধ বাগিয়ে নিয়ে সরকারের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। ফলে পাহাড়ি ঢলে দুর্বল বাঁধ ভেঙ্গ কৃষকের সলিল সমাধি হয়েছে। যেসব বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে গেছে তদন্ত করে পিআইসিসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত