লক্ষ্মীপুরে প্রসূতির মূত্রথলি কাটলেন চিকিৎসক

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ২১:২৯

ফয়েজুর রহমান রকি, লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ৯নং উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের, আলহাজ সামছুল হুদা আধুনিক মা ও শিশু হাসপাতালের ফাতেমা রওশন জাহান নামের এক গাইনী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের (সিজার) সময় প্রসূতি শারমিন আক্তার রিমার (২৪) মূত্রথলি ও রক্ত সঞ্চালনের কয়েকটি রগ (শিরা) কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। জরায়ুর পরিবর্তে কাটা মূত্রথলি দিয়ে নবজাতককে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা করা হয়। এতে তার মাথায় জখম হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মা ও শিশুকে নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে প্রসূতির স্বামী প্রবাসী আশেক এলাহী সবুজ জেলা সিভিল সার্জন ও চন্দ্রগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে চিকিৎসক রওশন জাহান ও অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ইনচার্জ বিলকিছ আক্তার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। রওশন জাহান উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী বাজার এর পাশে আলহাজ সামছুল হুদা আধুনিক মা ও শিশু হাসপাতালের গাইনী,প্রসূতী স্ত্রী রোগ চিকিৎসক ও সার্জন । তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ার থানার মাধবপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী। এবং ওটি ইনচার্জ বিলকিছ টাঙ্গাইলের ধানবাড়ী থানার তোহরা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী।

ভুক্তভোগী পরিবারের লিখত অভিযোগে বলা হয়, ২৩ এপ্রিল প্রসব ব্যাথা উঠলে রাত ১টায় শারমিন আক্তার রিমাকে তার স্বামী আশেক এলাহী সবুজ, চৌপল্লী বাজারের (প্রাইভেট হাসপাতাল) আলহাজ সামছুল হুদা আধুনিক মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রথম থেকেই পরিবারের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য চেষ্টা করতে বলা হলেও চিকিৎসক রওশন ও বিলকিস কৌশলে ভয় দেখিয়ে সিজারের জন্য চাপ দেন। চাপের মুখে উপায় না পেয়ে সবুজসহ পরিবারের লোকজন সিজার করাতে রাজি হন। প্রসূতি শারমিন আক্তার রিমার স্বামী আশেক এলাহী সবুজ ৯নং উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড কাশারী গ্রামের পাঠান বাড়ির প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

সবুজের মা লাখি বেগম এবং বোন সুফিয়া কামাল নিশি জানান, ওটি তে নেওয়ার প্রায় ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও তারা আমাদের কিছু বলেনি পরে আমাদের ডাঃ সজিব ওটিতে গিয়ে রোগী দেখে আমাদেরকে বিষয়টি জানায় তখনই আমরা সজিব (স্থানীয় মা মেডিকেল হল এর মালিক) এবং বাবরের সহযোগীতায় রোগীকে নোয়াখালী নিয়ে যাই।

নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতালের ২য় তলায় কেবিন ২/এ-তে আলাপকালে প্রসূতির স্বামী সবুজ জানিয়েছেন, সিজারের সময় তার স্ত্রীর মূত্রথলি কাটা যায়। তাৎক্ষণিক রক্ত বন্ধ না করে চিকিৎসক মূত্রথলি আরও কাটে। এ সময় কয়েকটি রক্ত সঞ্চালন রগ (শিরা) কেটে যায়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরমধ্যে নবজাতককে জরায়ুর পরিবর্তে মূত্রথলি দিয়ে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি দেখে অচেতন করার চিকিৎসক হুমায়ুন কবির শান্ত বারণ করেন। পরে চিকিৎসক হুমায়ুন কবির শান্তর সহযোগিতায় সিজার সম্পন্ন হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিমার এবং জোরপূর্বক প্রসবের চেষ্টায় নবজাতকের মাথায় জখম হয়। পরে দুপুর ১ টার দিকে আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাকে এখানে নিয়ে আসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলহাজ সামছুল হুদা আধুনিক মা ও শিশু হাসপাতালের দুই জন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, সিজার করতে পারলেও রওশন জাহানের পর্যাপ্ত ডিগ্রি নেই।  এই বিষয়ে চিকিৎসক ফাতেমা রওশন জাহানের এবং ওটি ইনচার্জ বিলকিছ সাথে কথা বলতে গেলে দুইজন হাসপাতালে অবস্থান করলেও এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে বা দেখা করতে রাজি হয়নি। পরে মুঠো ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

শিরাসহ মূত্রথলি কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে তাই এ দায় এড়াতে রোগীর স্থানান্তর (রেফার) নোটে তিনি রোগীর সমস্যার কথা লিখেছেন, মূলত রোগীর কোনো সমস্যাই ছিল না। এছাড়াও তিনি রেফার নোটে ইওরোলজি সার্জন এর চিকিৎসা নিতে লিখেছেন। রোগীকে মাইজদি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য লিখে দিয়েছেন। কিন্তুএই নামে নোয়াখালীতে কোন হাসপাতাল নেই। অচেতনের চিকিৎসক হুমায়ুন কবির শান্ত বলেন, জরায়ু ও মূত্রথলি পাশাপাশি। প্রসবের চাপ বেশি ছিল। কিন্তু জরায়ুর মুখ ছোট থাকায় নবজাতক আটকে যায়। এ সময় চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করতে গেলে মূত্রথলি কাটা যায়, এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। দেখতে পেয়ে আমি সিজার করতে সহযোগীতা করেছি।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, গ্রেট ওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্টির মালিক আলহাজ সামছুল হুদা তিনি মানুষের সেবা করার জন্য মফস্বল এলাকায় এই হাসপাতাল করেছেন। সবুজ এবং রিমার বিয়ের ৬ বছর পর এটাই প্রথম সন্তান। আমরা রিমার নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেছি পরে সমস্যা দেখা দিলে সকাল ১১টায় সবুজ সহ তার পরিবারের সিদ্ধান্তেই সিজার হয়। এ পর্যন্ত এই হাসপাতাল চালু হওয়ার ৮ মাসে প্রায় ৮০ জন ডেলিভারি রোগী এসেছে তার মধ্যে প্রায় ৫০ জনের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। ডাঃ হুমায়ুন কবির শান্তকে রিমার সিজারের জন্য কল করে আনা হয়। যখন দেখেছি নরমাল ডেলিভারি সম্ভব তখন ১৫০০ টাকা দিয়ে ওনাকে বিদায় দেওয়ার পরে আবার সিজার করার প্রয়োজনে তাকে কল দিয়ে পূনরায় আনা হয় এবং রোগীর যখন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হয় তখন আমাদের এম্বুলেন্সে করে সবুজ ও বাবর তাদের পছন্দ অনুযায়ী নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখনো আমাদের হাসপাতালে ঔষধ সহ চিকিৎসার প্রায় ২৫০০০ হাজার টাকা বকেয়া থাকলেও আমরা টাকার জন্য কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করিনি।

আমি সিভিল সার্জনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানি না। রওশন জাহানের পর্যাপ্ত ডিগ্রি নেই অভিযোগটি সত্য নয়। এখন প্রসূতি ও নবজাতক দুইজনই সুস্থ আছে বলে আমি জানতে পেরেছি। আমার মনে হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য কেউ ইন্ধন দিচ্ছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি, তদন্ত চলছে, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগটি পেয়েছি, তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ শারমিন আক্তার রিমা নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতালে ডাঃ মোঃ মাসুম আক্তারের চিকিৎসাধীন ছিলো ২৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৩ টায় তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে নিয়েযাওয়া হয়। ১০ শয্যা বিশিষ্ট আলহাজ সামছুল হুদা আধুনিক মা ও শিশু হাসপাতাল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং থেকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে এবং শুরুতেই ১৫ দিনে প্রায় ৮০০ রোগীকে ঔষধ সহ সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত