রেঞ্জ দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন মাহদী

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২২, ১৯:১১

সাহস ডেস্ক

পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খোলার পৃথক ঘটনায় মাহদী হাসান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বুধবার (২৯ জুন) দিবাগত রাতে লক্ষ্মীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে নাট খোলার ভিডিও ধারণে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। পুলিশের দাবি, মাহদী রেঞ্জ দিয়ে সেতুর নাট-বল্টু খুলেছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ২৬ জুন সকালে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়। এদিন বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে ঢাকা থেকে মাওয়া যান মাহাদি হাসান। বেলা তিনটার দিকে পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খোলেন তিনি। ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করে সেটি অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

ভিডিওতে মাহাদি হাসান দাবি করেন, তিনি হাত দিয়ে পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খুলেছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খোলার ক্ষেত্রে রেঞ্জ ব্যবহার করেন মাহাদি। পুলিশ সেই রেঞ্জ জব্দ করেছে। ঘটনার পর থেকে মাহাদি ও তার বন্ধুদের খুঁজছিল পুলিশ। মাহাদিকে গ্রেপ্তারের পর তার বন্ধুদের খোঁজ চলছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তামিরুল মিল্লাত নামে একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন মাহাদি। এরপর রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। মাহাদি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার নামে পদ্মা সেতু (উত্তর) থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর এই সাফল্যকে ছোট করা এবং জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাহদি হাসান পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে আবার লাগিয়ে দিচ্ছে।’

সিটিটিসির সাইবার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের নজরদারির ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকা থেকে মাহদিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু উত্তর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহদি এই কাজ করেছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার আগের রাতে মাহদি তার সঙ্গীদের নিয়ে পদ্মা সেতুতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ২৬ জুন সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার দিন ভোরে মাহদি সঙ্গীদের নিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু পার হয়ে ওই পাড়ে যায়। তারা এমন ঘটনার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে, কিন্তু মানুষজন বেশি থাকায় তারা সেটা পারছিল না। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অপরপ্রান্ত থেকে ফেরার সময় মাওয়া প্রান্তে এসে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে ভিডিও করেন মাহদি।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘মাহদি ভিডিওতে বলছিলেন, ‘আমি কিন্তু রেঞ্জ ব্যবহার করছি না’। সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আপত্তিকর রেঞ্জ শব্দটি ব্যবহার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহদি স্বীকার করেছে, রেঞ্জ দিয়ে প্রথমে নাট খুলে লুজ করে, পরে হাত দিয়ে খুলে ভিডিও বানানো হয়।’

উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহদিসহ তার সঙ্গীরা সেতুর নাট খুলতে রেঞ্জ নিয়ে গিয়েছিল। আমরা মাহদির সঙ্গীদের খুঁজছি, তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে হয়ত নাট খোলায় ব্যবহৃত রেঞ্জটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। মাহদিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আর কোনো উদ্দেশ ছিল কি না তা জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ কোনো অপতৎপরতা চালাতে না পারে এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেতু এলাকায়ও আমাদের সার্ভিলেন্স রয়েছে।’

সাহস২৪.কম/এআর/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত