চবিতে যৌন নিপীড়ন

গ্রেপ্তারকৃতরা পদবিহীন ছাত্রলীগ কর্মী

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৯

সাহস ডেস্ক

শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার যুবকেরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছেন। গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ছাত্রলীগে তাদের কোনো পদ নেই বলে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ তাদের সংগঠনটির কর্মী হিসেবে তুলে ধরতে চাননি। গ্রেপ্তার হওয়া মূল হোতা মোহাম্মদ আজিমকে ছাত্রলীগের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করেছে চবি শাখা ছাত্রলীগ। তবে এই ‘অপকর্মের দায়’ সংগঠন নেবে না বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৭ জুলাই রাতে হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে কয়েকজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অভিযোগ করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০ জুলাই হাটহাজারী থানায় মামলা করেন ওই শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে শনিবার র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এলিট ফোর্সের কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। অভিভাবকের চাকরি সূত্রে ক্যাম্পাস এলাকায় থাকেন তারা। অন্য দুজন পড়াশোনা করছেন হাটহাজারী কলেজে। গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দুজনের মধ্যে মোহাম্মদ আজিমকে (২৩) (ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র) ঘটনার হোতা বলছে র‌্যাব। তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার চর ভারত সেনে। তার বাবার নাম আমির হোসেন। এখন হাটহাজারীর ফতেহপুরে থাকেন তারা। আরেক গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নুরুল আবছার বাবু (২২)। তার বাবা ফেনীর পরশুরামের বেড়াবাড়ির বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন। এখন থাকেন হাটহাজারীর ফতেহপুরে। গ্রেপ্তার অন্য দুজনের মধ্যে নূর হোসেন শাওন (২২) হাটহাজারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র। হাটহাজারীর ফতেহপুরের জাবেদ হোসেনের ছেলে তিনি। একই প্রতিষ্ঠানের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার মাসুদ রানা (২২)। ঝালকাঠির আশিয়ার গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে তিনি।

গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ইউসুফ বলেন, তারা নিজেরা ছাত্রলীগে যুক্ত বলে দাবি করেছেন। তবে তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বাধা দেন। এ নিয়ে সমালোচনায় পড়েন রুবেল। এর মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে অভিযোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন রুবেল। অভিযুক্ত আজিম তার অনুসারী কি না- প্রশ্ন করা হলে রুবেল গণমাধ্যকে বলেন, আজিম আমার অনুসারী না। সে সিএফসি গ্রুপের অনুসারী।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপিং এর একটি ‘সিএফসি’। ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার সময় থেকে এই গ্রুপের নেতারাই এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রুবেল নিজেও এক সময় ‘সিএফসি’র নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, এক সময় ঐ গ্রুপে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে চবি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। কোনো গ্রুপের অপকর্মের দায় নিতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, আজিম যদি অপরাধ করে তাহলে তার বিচার হবে। সংগঠন এক্ষেত্রে কারও দায়ভার নেবে না। রুবেলের দাবি, আজিমকে ধরিয়ে দিতে তথ্য দিয়ে র‌্যাবকে সহায়তা করেছেন তিনি।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজিমকে ‘মূল অভিযুক্ত’ উল্লেখ করে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক। তিনি বলেন, ঘটনার পর সে রাউজানে তার ফুপুর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। আজিমের জিজ্ঞাসাবাদে, এই ঘটনায় মোট ছয়জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানায় র‌্যাব। জানা যায়, তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সাইফুল নামের দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের কাছ থেকে দুটি মোটর সাইকেল এবং তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইউসুফ বলেন, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। দুটি মোটরসাইকেলে করে তারা ওই পথে যাচ্ছিলেন। রাতের বেলায় ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলেন গ্রেপ্তারেরা। সে সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে তার এক বন্ধুসহ ওই এলাকায় দেখতে পেয়ে জেরা করতে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী তাদের বাধা দেয়। অভিযুক্তরা তখন মারধর শুরু করে। ভুক্তভোগীর বন্ধুকে বেঁধে রাখে। ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে আজিম। নিজের, ওই ছাত্রীর এবং ছাত্রীর বন্ধুর মোবাইলসহ মোট তিনটি মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন তিনি। এসময় তাদের একজন ওই ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল করে ছাত্রীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দেয়। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইউসুফ জানান, প্রায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে তারা ওই ছাত্রী এবং তার বন্ধুর কাছ থেকে নগদ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ঘটনার পরপর ভিকটিম ট্রমার মধ্যে ছিল। তার সাথে কথা বলে আশেপাশের বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়। ইউসুফ বলেন, প্রথম থেকে র‌্যাব মাথায় রেখেছে নিরীহ কেউ যেন এ ঘটনায় জড়িয়ে না পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন আসামি শনাক্তকরণে।

সাহস২৪.কম/এসটি/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত