ড্রাইভার-কাউন্টার মিলে ‘নগর পরিবহন লুটপাট’

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২২, ২২:২৫

১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে নগর পরিবহনের বিআরটিসি বাসে ওঠেন মিলন হোসেন। কিন্তু বাসে ওঠে খেয়াল করলেন তাকে কাউন্টার থেকে ৫ টাকা মূল্যের ‘শিক্ষার্থী’ টিকিট দেয়া হয়েছে। ছবি : রিয়াজ সোহেল

যাত্রা শুরুর পর থেকে নানান সংকট-জটিলতা কাটিয়ে ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে নগরকেন্দ্রিক গণপরিবহন সেবা ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী এই পরিবহনের সেবা নিলেও ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটের যাত্রীদের রয়েছে নানান অভিযোগ। সরেজমিন মিলেছে সেসব অভিযোগের সত্যতাও।

শনিবার (২৩ জুলাই) মোহাম্মদপুর বেঁড়িবাঁধ থেকে টিকিট কেটে নগর পরিবহনের বিআরটিসি বাসে ওঠেন মিলন হোসেন। ওই কাউন্টার থেকে ঝিগাতলার ভাড়া ১০ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু বাসে ওঠে খেয়াল করলেন তাকে কাউন্টার থেকে ৫ টাকা মূল্যের ‘শিক্ষার্থী’ টিকিট দেয়া হয়েছে। একই বাসে একই কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ওঠা অপর যাত্রী মোঃ নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। তার কাছ থেকেও ১০ টাকা নিয়ে দেয়া হয়েছে অর্ধেক দামের টিকিট। এসময় বাসে আরও একাধিকজনের কাছে ‘শিক্ষার্থী’ টিকিট পাওয়া যায়।

বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসটির অন্য একজন নারী যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার এলাকার কাউন্টারে ‘স্টুডেন্ট’ টিকেট চাইলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়- শনিবার স্টুডেন্ট টিকিট হয় না। তাই সাধারণ যাত্রীদের মতো পূর্ণ ভাড়ায় টিকিট কেটেছেন এই শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীর জন্য শনিবার অর্ধেক দামের বিশেষ টিকিট বন্ধ থাকলে, সাধারণ যাত্রীদের হাতে সেই টিকিট কিভাবে এলো- প্রশ্ন করেন ওই শিক্ষার্থী। তবে- নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

নগর পরিবহনের মোহাম্মদপুর বেঁড়িবাঁধ এলাকার কাউন্টার ম্যানেজার ফয়েজ উদ্দিনের কাছে এসব অভিযোগ এবং অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। বলেন- অনেক সময় ‘ভুলে’ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ টিকিট সাধারণ যাত্রীকে দিয়ে দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু তার কাউন্টার থেকে টিকিট নেয়া যাত্রীদের প্রায় অর্ধেকের কাছে কি করে ‘শিক্ষার্থী’ টিকিট গেলো তা তিনি বুঝতে পারছেন না। শুধু কাউন্টারের দুর্নীতি না ঘেঁটে বাসচালক ও হেলপারদের দুর্নীতিও ঘেঁটে দেখার অনুরোধ করেন এই কাউন্টার ম্যানেজার।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (সায়েন্স ল্যাব) এর সামনে নগর পরিবহনের কাউন্টারে ঘটে আরেক ঘটনা। এখানে যাত্রীর কাছ থেকে টিকিটের মূল্য নিয়ে টিকিট না দিয়ে তাকে বাসে তুলে দেয়া হয়। পরে অন্য যাত্রীদের হাতে টিকিট দেখে ওই যাত্রী আবার কাউন্টারে ফেরৎ যান। কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে পুনরায় বাসে ফিরে তিনি দেখেন তাকে অর্ধেক মূল্যের ‘শিক্ষার্থী’ টিকিট দেয়া হয়েছে। মতিঝিল যাওয়ার জন্য তিনি ১০ টাকা পরিশোধ করেছিলেন। যদিও তাকে দেয়া হয়েছে ৫ টাকার টিকিট। এসময় সায়েন্স ল্যাব কাউন্টার থেকে ওঠা একধিক যাত্রীর কাছে অর্ধেক মূল্যের ‘শিক্ষার্থী’ টিকিট পাওয়া যায়। যদিও তাদের কেউই শিক্ষার্থী নন।

এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সায়েন্স ল্যাব কাউন্টারের ম্যানেজার মোঃ মাসুদ জানান, তিনি শুধু শিক্ষার্থীদেরই অর্ধেক মূল্যের টিকিট দিয়েছেন। তবে সাধারণ যাত্রীর কাছ থেকে পূর্ণ ভাড়া নিয়ে অর্ধেক মূল্যের বিশেষ টিকিট দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। 

শনিবার (২৩ জুলাই) দিনভর সাহস২৪ এর একাধিক সাংবাদকর্মী ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে চলা নগর পরিবহনের একাধিক বাসে যাতায়াত করেন। এসময় বাসগুলোকে কাউন্টারের বাহিরে যত্রতত্র বিনা টিকিটের যাত্রী উঠাতে দেখা যায়। বিনা টিকিটের এসকল যাত্রী বাস থেকে নামার সময় বাসেরচালক অথবা হেলপারের কাছে ভাড়া পরিশোধ করেন। যাত্রীদের থেকে আদায় করা এই টাকা তারা কি করেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি বাসচালক কিংবা হেলপাররা।

এদিন বিকালে কাঁচপুর থেকে ছেড়ে আসা নগর পরিবহনের ‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৬৯১৬’ নম্বর বাসটিতে পুরো পথেই বিনা টিকিটের যাত্রীদের থেকে নগদ ভাড়া গ্রহণ করেন বাসের হেলপার। মোহাম্মদপুরের পর থেকে ঘাটারচর পর্যন্ত বাসটিতে টিকিট কেটে ওঠা যাত্রী না থাকলেও, যাত্রীতে ভরপুর ছিলো বাসটি। এসময় বাসের হেলপার সকল যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়ার টাকা নগদে তোলেন।

যাত্রীর কাছ থেকে নগদে ভাড়া নেয়ার অনুমতি আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে বাসের হেলপার জানান, তিনি এই ‘স্টাফ’ নন। তিনি ঘুরতে এসে এই বাসে ভাড়ার টাকা উঠাচ্ছেন। বাসটির চালকের সাথে এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কোন কথাই বলেননি।  

নগর পরিবহনের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটের লাইন ইনচার্জ ফারুক হোসেন জানান, এরকম কোনো কিছু আমার নজরে পড়েনি। তবে গত কয়েকদিন ধরে অভিযোগ পাচ্ছি। আমি এবিষয়ে উপরে অভিযোগ জানাবো।

দিনের শুরুতে কর্মস্থলে যেতে অথবা কর্মস্থল থেকে রাতে বাসায় ফেরার সময় গণপরিবহনে একটু ঠাঁই পাওয়া ঢাকাবাসীর জন্য এক বৃহৎ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, গণপরিবহনের সংকট এবং সেবায় কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটিয়েছে নগর পরিবহন। আর সেই নগর পরিবহনকে লুটপাট করছে তৃণমূলের কর্মীরা।

সাহস২৪/রাজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত