ছদ্মবেশ ধরেও রেহাই পেলেন না জাকির

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৬:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি : জাকির হোসেন।

গর্ভবতী স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন জাকির হোসেন। নেন ছদ্মবেশ, গোপন করেন পরিচয়। কিন্তু পার পাননি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর এলাকার এ বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সাভারের শাহিবাগ এলাকা তাকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ ঘটনায় মামলা হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাকিরকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে মানিকগঞ্জ সিপিসি-৩ র‌্যাব-৪। অঞ্চলের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেনও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাকির হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জিয়নপুরের মো. আবু হানিফের মেয়ে নিপা আক্তার। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ, গয়না ও আসবাবপত্র দেওয়া হয় জাকিরকে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর আবারও নিপার কাছে যৌতুক দাবি করেন জাকির। না পেয়ে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এর মধ্যেই তাদের প্রথম সন্তান জ্যোতির জন্ম হয়। পরবর্তীতে আবারও গর্ভবতী হন নিপা। এ সময় জাকির তার ভাবির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে নিপা-জাকিরের দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়।

২০০৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে জাকির তার ভাবির ঘরে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে নিপা সে ঘরে গিয়ে নিজের স্বামী ও ভাসুরের স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। তিনি বিষয়টি ভাসুরকে জানাবেন বলে হুমকি দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ব্যাপক ঝগড়া-বিবাদ হয় নিপার। এ সময় তাকে তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন জাকির। .

অন্তঃসত্ত্বা নিপা পরকীয়ার বিষয়টি পরবর্তীতে তার ভাসুরকে জানান। এতে জাকির ক্ষুব্ধ হন। প্রতিশোধ নিতে তিনি স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাকির তার ঘুমন্ত স্ত্রীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার করেন। এ সময় নিপার ধস্তাধস্তিতে ঘুম ভেঙে যায় তার মেয়ে জ্যোতির। সে হত্যার ঘটনাটি দেখে ফেলায় জাকিরের প্রতি হুমকি তৈরি হয়। বিষয়টি যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্য মেয়েকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি।

পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর থানা পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের দেহ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিন মেয়ে ও নাতনি হত্যার ঘটনায় দৌলতপুর থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন আবু হানিফ। এ মামলায় জাকিরের বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু ও বড় ভাইর স্ত্রী তাহমিনাসহ আরও ৪ জনকে আসামি করা হয়। এ ব্যাপারে তদন্তের পর পুলিশ জাকিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়।

এর আগে ২০১০ সালে হত্যা মামলা থেকে জামিন নেন জাকির। এরপর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।

২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ উৎপল ভট্টাচার্য মামলার রায় দেন। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকায় মামলার প্রধান আসামি জাকিরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপর আসামিদের। মালেকা বানুর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বিচারকার্য চলার সময় মৃত্যু হয় জাকিরের বাবা নইমের।

মানিকগঞ্জ অঞ্চলের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, শাহবাগ থেকে আটকের আগে ১২ বছর পলাতক ছিলেন জাকির। তিনি নাম পরিবর্তন করে বাউল হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এ পরিচয়ে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন স্ত্রীর ঘরে তার দুটি সন্তান আছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার তাকে সাভারের শাহিবাগ এলাকা থেকে আটক করা হয়। হত্যা মামলার এ আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

সাহস২৪.কম/এসএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত