লিফটে মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ

চারজনের নামে হত্যা মামলা, বিচার দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২২, ১৮:০৩

সাহস ডেস্ক

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফটের নিচ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মন্ডলের মৃতদেহ উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা তদন্ত ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকউদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুরের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ্যাড. নূরুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বি এম আব্দুর রাজ্জাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল করিম।

বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রধান ফটকের পাশে নিচতলার লিফটের নিচে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরে পড়ে থাকবে তা হতে পারে না। তাকে হত্যা করে মৃতদেহ গুম করার জন্য পরিকল্পিতভাবে লিফটের নিচে ফেলা রাখা হয়েছিল। এ হত্যার সঙ্গে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেউ জড়িত রয়েছে দাবি করে বক্তারা বলেন, কর্তৃপক্ষ বলছেন চারটি লিফটের মধ্যে তিনটি লিফট দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। অকেজো লিফটের দরজা খোলার সুযোগ নেই সাধারণের। তাহলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলীর মৃতদেহ অকেজো লিফটের নিচে গেল কিভাবে।

বক্তারা বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারপর লিফটের তদারকির দায়িত্ব যারা যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রচার চালাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলীর মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত।  সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেন সৈয়দ আলী। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে অকেজো লিফটের মধ্যে ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। মানবন্ধন থেকে ঘোষণা করা হয় এ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন। তারই অংশ হিসেবে বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী হত্যার বিচার চাইবেন।

সৈয়দ আলী মন্ডলের ছেলে আব্দুল্লাহ তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বলেন, গত ৪ অক্টোবর সকালের দিকে তার বাবা বাড়ি থেকে চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এরপর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। রাতে বাড়ি না ফেরায় সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন বুধবার সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পাশাপাশি তার খোঁজ পেতে ভোমরা থেকে সাতক্ষীরা শহর পর্যন্ত মাইকিং করা হয়।

তিনি আরও জানান, গত ৯ অক্টোবর তার বাবার মৃতদেহ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রধান ফটকের পাশের নিচতলার অকেজো লিফটের নিচ থেকে পচা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বাদি হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা হেলথ এডুকেটর মুরাদ হোসেন, টেকনিশিয়ান আব্দুল আলিম ও লিফট অপেরেটর আরিফুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেছেন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের পরিচালক কুদরত-ই-খোদা জানান, কিভাবে অকেজো লিফটের নিচে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ পাওয়া গেল তা বোধগম্য নয়। কাউকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন তদন্তের জন্য ৯ অক্টোবর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অজয় কুমার সাহাকে প্রধান করে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আহমেদ আল মারুফ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মানস কুমার মন্ডল, চিকিৎসা কর্মকর্তা সৌউদ বিন খায়রুল ও হেলথ এডুকেটর মুরাদ হোসেনকে নিয়ে পাঁচ সদদ্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। মঙ্গলবার অফিস চলাকালীন সময় পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সময় সীমা দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, নিহতের ছেলে আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদাসহ চারজনকে আসামি করে একটি এজাহার জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত