সুনামগঞ্জের চলতি নদীর বালু-পাথর লুটপাটের মহোৎসব

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৩৫

নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চলতি নদীতে বালু বা পাথর উত্তোলনে সরকারি কোনো ইজারা নেই। তবে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশে নদীতে থেকে দেদারসে পাথর উত্তোলন করছেন শত শত শ্রমিক। নদী থেকে উত্তোলনকৃত পাথর নিয়ে তীরে পৌঁছলেই ন্যূনতম দামে এসব পাথর কিনে নিচ্ছেন পাথর ব্যবসায়ী চক্রের সদস্যরা। পরে স্তূপ করে রাখা এসব পাথর পিকআপ বা মালবাহী ট্রলিতে করে নিয়ে আসা হচ্ছে নিরাপদ গন্তব্যে। চলতি নদীর ডলুরা এলাকায় পাথর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের এমন কর্ম হরহামেশা চলতে থাকলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি দেখেও না দেখার ভান করছে।

চলতি নদীর তীরবর্তী ডলুরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য পাথর বোঝাই পিকআপ ও ট্রলি নদী থেকে পাথর নিয়ে হালুয়ারঘাট এলাকায় যাচ্ছে। ট্রলি দিয়ে পাথর কোথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে চালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এসব চলতি নদীর পার থেকে নিয়ে আসছেন তারা। তারা নাকি শ্রমিক হিসেবে এখানে পাথরবোঝাই করে অন্যত্র নিয়ে যান। ট্রলির পাথর কার জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব দেলোয়ার ভাইয়ের।

চলতি নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, পাথরের বড় বড় স্তূপ। স্তূপের একদিকে শ্রমিকরা পিকআপ, ট্রলিতে পাথর বোঝাই দিচ্ছেন অন্য দিকে নদী থেকে পাথর এনে স্তূপ করছেন আরও কিছু শ্রমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিকের কাছে স্তূপ করা পাথরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কামলা মানুষ। টাকা পাই ট্রলিতে পাথর ভরে দেই। নদীর পারে এসব পাথর কার এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই পাশের পাথর সাদেক মিয়া আর অই পাশের পাথর দেলোয়ারের। আলীনূর নামের আরেক ব্যক্তির কথাও জানান তিনি।

নদীতে গিয়ে দেখা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে বালু থেকে পাথর সংগ্রহ করছেন নানা বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুরা। একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, উত্তোলনকৃত এসব পাথর কিনারে নিয়ে আসলে ফুট প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে পাথর কিনে নেন ব্যবসায়ীদের লোকেরা। প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার পাথর তুলতে পারেন।

ডলুরা গ্রামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা পেটের দায়ে পাথর তুলি। পাথর তুলে তীরে নিয়ে আসলে ব্যবসায়ীরাই কিনে নেন। তবে তারা পাথরের ন্যায্য মূল্য দেয় না। পাথরের এই ব্যবসার সাথে এলাকার লোকেরাই জড়িত রয়েছেন।

খোঁজ নিলে জানা যায়, পাথের সিন্ডিকেট ব্যবসার সাথে ডলুরা, কাইগাঁও, ভাদেরটেকসহ কয়েকটি এলাকার একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। যাদের মধ্যে দেলোয়ার, সাদেক মিয়া, আলীনূরসহ একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়।

সাদেক মিয়া বলেন, গাঙতো অনেক দিন ধরে বন্ধ। গরীব মানুষ পাথর তুলে আমাদের কাছে বেচে। আমরা চুরিদারি করি এইগুলো আনি। আমিতো শুধু একা না আরও অনেকেই রয়েছেন। কি করবো ভাই আমাদেরও তো চলা লাগে।

এ বিষয়ে দেলোয়ারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ছোটখাটো ব্যবসায়ী। আগে পাথরের ব্যবসার করতাম এখন করি না। এসব পাথর আমার না। ব্যবসায়ী আলীনূরও স্তূপের পাথর তার নয় বলে জানান।

জেলা প্রশাসক দিদার আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই। তবে চলতি নদী সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত