১০ একর জমির দখল নিতে ছাত্রলীগ নেতার লাল নিশান, এলাকাবাসীর প্রতিবাদ

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:২৯

সাহস ডেস্ক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ইজারা দেওয়া ১০ একর জমির দখল ও জমি রক্ষা নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পাউবোর আওতাধীন ওই ১০ একর জমি সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান শামীম ইজারা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। সেখানে মাছের ঘের তৈরি করতে মাটি কাটার প্রস্তুতি নিলে এলাকাবাসীর প্রবল বাধার মুখে পড়েন আসাদুজ্জামান।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে ওই এলাকায় একটি স্লুইসগেট ও একটি ইটভাটা নির্মাণের জন্য বেশ কিছু জমির আংশিক মূল্য পরিশোধ করে অধিগ্রহণ করে সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে কোনো স্লুইসগেট ও ইটভাটা নির্মাণ করেনি সরকার। এ অবস্থায় এলাকাবাসী নিজ নিজ জমি ভোগদখল করে আসছেন। আসাদুজ্জামান গোয়ালন্দ এলাকার তার ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ইজারার ১০ একর জমির চতুর্দিকে লাল নিশান টানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে তারা সেখানে পুকুর খননের কথা বলে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করতে শুরু করেন। এ অবস্থায় এলাকাবাসী সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা কামনা করেন।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, রাজবাড়ী-১ (রাজবাড়ী সদর-গোয়ালন্দ) আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় এলাকার অসংখ্য মানুষ তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি এই জমিতে পুকুর খনন করা বা বাইরের কারও ইজারা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না বলে লোকজনকে আশ্বস্ত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ সরদার, গিয়াস ফকির, গোলজার ফকির, বেদেনা বেগম, ঝরনা বেগম, ছকিনা বেগমসহ অনেকেই বলেন, এই জমির মধ্যে ১০-১২টি পরিবারের বসতবাড়ি রয়েছে। অনেক ফসলি জমিও রয়েছে। এখানে পুকুর কাটা হলে তারা গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়বেন। তা ছাড়া এখানকার খালে বর্ষার সময় মাছ ধরা, পাটের জাগ দেওয়া, জমিতে সেচ দেওয়াসহ নানা কারণে এলাকার শত শত মানুষ এর ওপর নির্ভরশীল। বাইরের কেউ ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করলে তাদের চরম বেকায়দায় পড়তে হবে।

পাউবোর জমি দখলের জন্য লাল নিশান টানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান শামীম মুঠোফোনে বলেন, তিনি সম্পূর্ণ বৈধভাবে ৫ একর জমিতে মাছ চাষ এবং অপর ৫ একর জমিতে চাষাবাদের জন্য ইজারা নিয়েছেন। এতে কোনো অন্যায় করেননি। ইজারার জায়গার মধ্যে যে কয়েকটি পরিবার রয়েছে, আলোচনা করে তাদের বিষয়ে সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আসাদুজ্জামান দাবি করেন, স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী প্রভাবশালী ব্যক্তি সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ভোগদখল করছেন। তারাই সাধারণ জনগণকে উসকানি দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে পাউবো রাজবাড়ীর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন আজাদ বলেন, সম্প্রতি আসাদুজ্জামান শামীমের নামে গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ উজানচর মৌজার বড়পিঠ-নয়নজুলির ৪ একর ২৩ শতাংশ জমি মাছ চাষের জন্য ৩ বছরের জন্য বন্দোবস্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট ১ লাখ ৮ হাজার ২৮৮ টাকায় তার সঙ্গে এই জমির চুক্তি হয়েছে। অধিগ্রহণ করা আরও পাঁচ একর জমিতে ইটভাটা ও কৃষিকাজ করার জন্য আসাদুজ্জামান শামীম আবেদন করেছেন। তবে তা এখনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সংসদ সদস্যর উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত