ঠাকুরগাঁওয়ে নদী ভরাট ও চর দখল করে ধান চাষ

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩৪

সাহস ডেস্ক

১১টা নদী নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা। ঠাকুরগাঁও মূল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন ও শুক নদী। তবে কয়েক মাস আগে টাঙ্গন নদীর কিছু কিছু স্থানে খননের কাজ করা হয়। কিন্তু আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী।

বর্ষাকালেও অনেক কম পানি থাকে। টাঙ্গন নদী দেখলেও বোঝার উপায় নেই সেটি এক সময়কার প্রমত্তা টাঙ্গন নদী। টাঙ্গন ও শুক নদীতে জেগে উঠেছে ছোট ছোট চর, আর সেই চরে পাশ থেকে মাটি এনে ভরাট করে চলছে নামে-বেনামে চর দখল এবং ধান চাষ।

নদী দুইটি জেলার অন্যতম প্রধান নদী ও তখনকার যাতায়াতের মাধ্যম ছিল। এর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। এসব নদীর বুকে কিছু কৃষক এখন ধান চাষ শুরু করেছে। অনেকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিয়ে এসে ধানের বীজতলা তৈরি করছে। এখন নদীতে আর মাছ পায় না জেলেরা। তাই জেলেরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও সদর খালপাড়া গ্রামের প্রবীর দাস বলেন, এক সময় মাছ শিকার আমার পেশা ছিল। নদী ভরাট হয়ে এখন আর মাছ নেই নদীতে। পানি নাই, মাছ নাই। নদী ভরাট করে অনেকে ধান চাষ করছে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া ভরাট নদীতে পানি না থাকলে মাছ থাকবে কীভাবে! তাই বাধ্য হয়ে এখন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।

বরুণাগাঁও এলাকার বজলু হক বলেন, নদীতে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নদীতে কোনো মাছ পাওয়া যায় না। ২০১৯ সাল থেকে নদী খনন করলেও ছয় মাস যেতে না যেতে আবারও ভরাট হয়ে গেছে নদী। মাছ ধরা বাদ দিয়ে মানুষের বাসায় দিনমজুরের কাজ করছি।

কহরপাড়া গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, নদীতে এক সময় অনেক পানি ছিল, সেই পানি কৃষি কাজে ব্যবহার হতো। এখন নদীতে এক হাঁটুর কম পানি থাকে। তাই নদীর পানি আর কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারি না। যদি নদীটা আবারো খনন করা হয় তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে। অল্প খরচে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারব।

ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, ড্রেজিং করলে নদী তার নাব্য ফিরে পাবে এবং কৃষকদের সেচে সুবিধা হবে। এলাকার পরিবেশ ফিরে পাবে আগের রূপ। এছাড় সরকারের কাছে অবিলম্বে ভরাট নদীগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।

ঠাকুরগাঁও সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, অচিরেই এই নদীগুলো আবার খনন করে নদীকে তার আগের প্রমত্তা অবস্থা ফিরিয়ে দেয়া হোক। নদী দখল ও ভরাট করে কেউ যাতে চাষাবাদ করতে না পারে সেই জিনিসটা দেখা দরকার।

পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, ঠাকুরগাঁও শহরের কোল ঘেঁষে টাঙ্গন ও শুক নদী। ছোট বেলায় দেখেছি নদীগুলো অনেক গভীর ছিল। টাঙ্গন নদী খনন করা হলেও আবারও ভরাট হয়ে গেছে।

নদীটি পুনঃখনন না করায় বর্তমানে দখল করে ধান চাষ করছে স্থানীয় লোকজন। অবৈধ দখলের কারণে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে নদী। এছাড়া অচিরেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন ও শুক নদী ভরাট করে ধান রোপণ করছে কিছু স্থানীয় মানুষ। সে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করব। পুনরায় নদী খনন করে আগের রূপে ফেরাতে আমরা কাজ করছি।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত