পরিত্যক্ত সেতুটি লক্ষাধিক মানুষের মরণফাঁদ
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৬
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতানদীর উপর নির্মিত পরিত্যক্ত সেতুটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এলাকার ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে থাকেন এ সেতু দিয়ে। এই সেতুতে দুর্ঘটনায় পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়। হতাহতের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তবুও ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে প্রতিনিয়ত।
উপজেলার পাগনার হাওরের জামালগঞ্জ-ফেনারবাঁক সড়কের তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতানদীর উপর প্রায় ২৩ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল এই ব্রিজটি। এটি এক যুগ পূর্বেই এলজিইডি থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো ঝুঁকি নিয়ে চলছে মালবাহী ভারী যানবাহন। উপজেলা এলজিইডি বিভাগ থেকে কয়েক বার ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের কথা উঠলেও আলোর মুখ দেখেনি ব্রিজ প্রকল্প। আর এই পরিত্যক্ত ব্রিজ দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চল, ভীমখালী ইউনিয়নের কিয়দাংশ ও দিরাই উপজেলার ভাটি অঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। হেমন্তে জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগের বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় হাজার হাজার মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা।
জানা যায়, ২০০০ সালে এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়ে ২০০৪ সালে শেষ হয়েছিল। ওই সময় ব্রিজের উভয় পাশে অ্যাপ্রোচের কাজ সম্পন্ন না করায় ব্রিজ দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারেনি। বিকল্প চলাচলের জন্য তারা বাঁশের সাঁকো ও খেয়া নৌকায় ফেরী পারাপার হয়ে চলাচল করতেন। এতে দুর্দশায় ছিলেন এলাকার মানুষজন। পরে ২০০৫ সালের শেষের দিকে অ্যাপ্রোচ নির্মাণের পর ব্রিজ দিয়ে চলাচল শুরু হলে মানুষের দুর্দশা কমে আসে। তবে অভিযোগ উঠেছিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজের কারণে নির্মাণের মাত্র কয়েক বছর যেতে না যেতেই ঝুলে যায় রডের জোড়া, খসে পড়ে আস্তর। এ অবস্থায় সেতু দিয়ে চলাচল বিপজ্জনক ছিল। ২০১৪-১৫ সালেই ব্রিজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
স্থানীয়রা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের রাজাপুর, মাতারগাঁও, খোঁজারগাঁও, রাজাবাজ, উজান দৌলতপুর, ভাটি দৌলতপুর, বিনাজুড়া, লালপুর, রসুলপুর, তেঘরিয়া, গঙ্গাধরপুর, ছয়হারা, কামারগাঁও, ইনাতনগর, লক্ষ্মীপুর, কাশীপুর, উদয়পুর, তাজপুর, নাজিমনগর, হঠামারা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া, নুরনগর, আলী নগর, ইসলামপুর, কুচিরগাঁও ও রফিনগর ইউনিয়নের খাগাউড়া, সেচনি, কিত্তাগাঁও, স্বজনপুর, জগন্নাথপুর, কুড়ি, পুরন্দরপুর গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। এসব গ্রামের মানুষের জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে হেমন্তে শুকনো মৌসুমে সড়ক যোগাযোগে চলাচলের ক্ষেত্রে তেরানগর গ্রামের পাশের এই ব্রিজটি দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। হেমন্তে শুকনো মৌসুমে প্রায় ৭-৮ মাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা এই ব্রিজের উপর দিয়ে জামালগঞ্জে আসতে হয় এলাকাবাসীর।
স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, তেরানগর ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গাড়ি ব্রিজে উঠলে ব্রিজ কাঁপে। এরপরেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করে। বাচ্চু মিয়া বলেন, তাড়াতাড়ি এই ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করা হোক। স্থানীয়রা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রীজটি নির্মাণের আশ্বাস শুনে আসছি। নির্বাচন আসলেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য নেতারা ওয়াদা করেন। কিন্তু এরপর সব ওয়াদা ভুলে যান।
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক বলেন, জামালগঞ্জ-ফেনারবাঁক সড়কের তেরানগরে দৌলতা নদীতে ব্রিজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য ডিও লেটার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
সাহস২৪.কম/এএম.