বাঁধ কেটে ব্রিজ নির্মাণ, হুমকিতে বোরো ফসল

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৫

সাহস ডেস্ক

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে লাউয়া নদীতে (বেতখালী) ব্রিজ নির্মাণ করায় হুমকির মুখে পড়েছে বোরো ফসলি জমি ও ফসলরক্ষা বাঁধ। এতে খাই হাওরের কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ ও বোরো ফসল হারানোর অজানা আতঙ্কের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ বাজার হতে রজনীগঞ্জ বাজার রাস্তাটি বসিয়াখাউরী পর্যন্ত আরসিসি কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে শান্তিগঞ্জ বাজার-রজনীগঞ্জ রাস্তার নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে খাই হাওরস্থ বেতখালী নামক এলাকার লাউয়া নদীর উপর স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ব্যাংক ও জিওবি এর অর্থায়নে প্রায় ১০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৮৩ টাকার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। চলতি বছরের প্রথম দিকে লাউয়া নদীর উপরে ব্রিজ নির্মাণকাজের পাইলিং শুরু করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ফসলরক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ কেটে ফেলা হয়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন খাই হাওরের প্রায় ২৯ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ। 

চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারিতে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মানাধীন ফসলরক্ষা বাঁধের লাউয়া নদীর অংশের প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন না করা হলে শেষ মুহূর্তে এসে ৫০ মিটার কাজ দ্রুত শেষ করলে বাঁধ ও খাই হাওরের বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

খাই হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৫৩নং পিআইসির অধীনে ৩৩০ মিটার ফসলরক্ষা বাঁধ রয়েছে। তন্মধ্যে দুই পাশে অধিকাংশ বাঁধের কাজ শেষ করা হলেও মধ্যখানে ব্রিজের পাইলিংয়ের নির্মাণকাজ করায় ৫০ মিটার কাজ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

খাই হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৫৩নং পিআইসির সভাপতি মো. আফিকুল ইসলাম বলেন, আমার পিআইসির অধীনে লাউয়া নদীর পড়ে বেতখালী বাঁধটি পড়েছে। বাঁধের বড় একটি অংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কেটে ফেলেছে। এতে বাঁধের মূল কাটায় পুরো বাঁধই হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধ নির্মাণের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না করতে পারলে পরবর্তীতে রাতারাতি বাঁধ নির্মাণ করলে বাঁধটি টেকসই হবে না। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বাঁধটি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, খাই হাওরে প্রায় ২৯ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকজন বাঁধটি কাটার সময় আমাদেরকে অবগত করেননি। চলতি বছর বাঁধ নির্মাণের জন্য পিআইসিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাঁধের অধিকাংশ কাজ শেষ হলেও ৫০ মিটার কাজ ব্রিজ নির্মাণের ফলে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। বাঁধটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে আছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধের ওই অংশের কাজ শেষ করা না হলে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাবে।

শান্তিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আল নুর তারেক বলেন, বাঁধটি কাজের প্রয়োজনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কেটে ফেলেছে। তবে বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধটি মেরামত করে কাজ সম্পন্ন করা হবে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসলরক্ষা বাঁধ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ব্রিজ নির্মাণকাজ একই স্থানে হওয়ায় বাঁধ কেটে ফেলা হয়েছে। ফসলরক্ষা বাঁধটি দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সমাধান করা যাচ্ছে না। তবে বাঁধের কাজ শেষ মুহূর্তে করলে টেকসই হবে না এবং ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত