নড়াইলে ৪৪৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:১৭

সাহস ডেস্ক

নড়াইলের ৬৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই মহান শহীদ দিবসের দিন এলাকার হাজারো শিক্ষার্থীকে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পেরিয়ে গেলেও জেলার অর্ধেকের বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে, জেলার ৪৪টি মাদ্রাসার একটিতেও নেই শহীদ মিনার।

জেলা প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৬৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫৪টিতে শহীদ মিনার আছে। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০৩টি। এর মধ্যে ৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ৪৪টি কামিল, ফাজিল, আলিম ও দাখিল মাদ্রাসার একটিতেও শহীদ মিনার নেই। এছাড়া ১৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০টিতে এবং ২৬টি কলেজের ১০টিতে শহীদ মিনার নেই। জেলায় ৪৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭০টিতে শহীদ মিনার নেই।

সদরের মাইজপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সাহা বলেন, নতুন ভবন নির্মানের জন্য এক বছর আগে পূর্বের শহীদ মিনার ভাঙ্গা হলেও নতুন করে স্থায়ী নির্মাণ করা হয়নি। খুব শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে।নড়াইলের কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের নামে বীরশ্রেষ্ঠের জন্মভূমি সদরের চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের নূর মোহাম্মদ নগরে একটি কলেজ এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও দু’টির একটিতেও শহীদ মিনার নেই। এ ব্যাপারে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রণব কান্তি অধিকারী বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য তিন বছর পূর্বে তৎকালীন জেলা প্রাশাসক এবং জেলা পরিষদের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টি আর এগোয়নি। এখন নিজস্ব অর্থায়নে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম ছায়েদুর রহমান বলেন, মাদ্রাসা ও কলেজে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রতি বছর ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে দেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সহায়তা এবং জেলা পরিষদ ও এলজিইডি অফিস থেকেও প্রতি বছর দু’একটি করে শহীদ মিনার তৈরি হচ্ছে বলেও জানান।

নড়াইল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুনাভ রায় জানান, আমাদের নিয়মে রয়েছে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেরামত ও সংস্কার কাজের বরাদ্দ আসে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা যদি শহীদ মিনার তৈরি করে দিতে বলেন তাহলে আমরা নির্মান করে দেই। তারা যদি শহীদ মিনার না চেয়ে ভবনের রং করা বা অন্য কোনো চাহিদার কথা বলেন তাহলে আমাদের সদিচ্ছা থাকা সত্বেও করতে পারি না। গত দু’বছরে একটি মাধ্যমিক স্কুলে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে এবং আরও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, যেসব মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শহীদ মিনার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য চিঠি দিয়ে অবগত জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি তারা না মানে তাহলে সরকারি নিয়মমাফিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সরকারিভাবে সারা বাংলাদেশে একই নকশায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। এজন্য যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেসব বিদ্যালয়ে নতুন করে শহীদ মিনার তৈরি না করতে বলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত