ছাত্রলীগ নেত্রীর জন্মদিনে চাঁদা না দেওয়ায় মারধর, হল কক্ষে ভাঙচুর

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের আবাসিক হলের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চাঁদা না দেওয়া ও কেক কাটার সময় উপস্থিত না হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতন তার কক্ষে ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে।

শনিবার (৪ মার্চ) দিনগত রাত ১২টার দিকে কলেজের নতুন হলের (ফাতেমা হল) দ্বিতীয় তলার ২০০৭ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর নাম লাইজু আফরিন। তিনি কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ফাতেমা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাইজু কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবার অনুসারী। তবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাবিবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। মূলত এ কারণে লাইজু গত বৃহস্পতিবার হাবিবার জন্মদিনের আয়োজনে অংশ নেননি। এছাড়া ছাত্রলীগ নেত্রী হাবিবার জন্মদিন উপলক্ষে হলে থাকা ছাত্রীদের সবার কাছ থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। লাইজু এই চাঁদাও দেননি। কেক কাটার সময়ও উপস্থিত ছিলেন না। এতে ক্ষুব্ধ হন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা।

এই ঘটনার সূত্র ধরে শনিবার রাতে লাইজুর কক্ষে নিজের অনুসারীদের দিয়ে ভাঙচুর চালান হাবিবা। কক্ষের জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেন তারা। এ সময় লাইজুর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাকে মারধর করা হয়। নতুন হোস্টেলের ওই কক্ষে লাইজুসহ ১৪ জন থাকেন। ভাঙচুর ও মারধরের সময় ওই কক্ষ থেকে লাইজু ছাড়া অন্যদের বের করে দেওয়া হয়। কক্ষ ভাঙচুর ও ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার সময় এক শিক্ষার্থী এগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখেন। ভিডিওটি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লাইজু আফরিন বলেন, আমি হাবিবার জন্মদিনের আয়োজনে চাঁদা দেইনি। কেক কাটার সময় যাইনি। বিষয়টি কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট করেন। ওই পোস্ট নাকি আমরা করিয়েছি, এজন্য আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে।

লাইজু অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই রুম দখলের জন্য কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুন চেষ্টা করে আসছিলেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বাদানুবাদও হয়। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় শনিবার দিনগত রাতে জোর করে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের এই কক্ষে উঠিয়ে দিয়ে অন্যদের কক্ষ পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী তার কথা মতো কক্ষ পরিবর্তন করতে না চাইলে নির্যাতন করে জোর করে তার বিছানাপত্র ফেলে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী লাইজু বলেন, এমন ঘটনায় মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়েছি। বিষয়গুলো আগেই কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছি। যেখানেই কলেজের প্রশাসন রবিবার এ বিষয়টি নিয়ে বসবেন তার আগেই তিনি (হাবিবা আক্তার সাইমুন) তার অনুসারীদের দিয়ে জোরপূর্বক এমন কাজ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তারা ওই কক্ষটি দখল করেই নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুন বলেন, আমি মেয়েদেরকে (শিক্ষার্থীদের) জোর করে বের করে দিচ্ছি বিষয়টি এমন নয়। তাদের কক্ষ পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে। তারা (ভুক্তভোগীরা) যে হলে থাকেন সেখানে দ্বিতীয় তলার মেয়েদের সঙ্গে উল্টাপাল্টা ব্যবহার (খারাপ আচরণ) করেন। ওইসব বিষয় ভিডিও করে কলেজ প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগীরাই অভিযোগ করেছেন। তাই প্রশাসন থেকেই বলা হয়েছে যেন ওদের সিট পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কেন আমাকে জড়ানো হচ্ছে। আমি তো এটার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না।

কক্ষ পরিবর্তন করতে কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের উপস্থিতিতে বাস্তবায়ন করা করা হচ্ছে, নাকি আপনি বের করে দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত তারাই বাস্তবায়ন করছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার শেলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহে অবস্থান করছেন। কলেজে কী হচ্ছে তা জানেন না। তবে ঘটনা শুনেছেন এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন বলে জানান শেলী।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন্নাহার বলেন, বিষয়টি জেনেছি এবং সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি দেখবো। এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

সাহস২৪.কম/এসএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত