খুলনায় অসহনীয় ইফতারসামগ্রীর দাম, দিশেহারা সাধারণ ক্রেতারা

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:০৩

খুলনা প্রতিনিধি

সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান শুরু। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় পার করে সকল প্রকার পানাহার হতে বিরত থেকে আল্লাহর মহান হুকুম পালন করতে টানা একটি মাসের সিয়াম সাধনা করবে মুসলিম উম্মাহ।

পবিত্র মাহে রমজান আসলেই যেন হালচাল পাল্টাতে থাকে নিত্যপণ্যের। বিশেষ করে রোজার নৈমিত্তিক কিছু সামগ্রীর। এদিকে মাহে রমজানের শুরুতেই খুলনার নিত্যপণ্যের বাজারে কিছু পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে।

যার তালিকায় রয়েছে- ছোলা, চিড়া, মুড়ি, বেসন, ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, খেজুর, কলা, রুহ আফজাসহ অন্যান্য ফল।

বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, রোজা আসলেই যেন ডাকাতের মতো হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া রোজার কয়েক সপ্তাহ আগে বাজারে তেল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলাসহ অন্যান্য রমজানের প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলোর দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়, আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক কান্ড।

অপরদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজার অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার স্বাভাবিক আছে। পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, এখন কাটিকাটা পেঁয়াজ নেই, বীজের পেঁয়াজও। তাই দাম বেশি মনে হচ্ছে। রোজার নিত্যপণ্যের বাজার দাম বাড়তির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ আয়ের মানুষ।

এছাড়া ইফতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর। সারা বছর তুলনায় যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয়, তার বহুগুণে বিক্রি হয়ে থাকে রমজান মাসে। তবে বিগত বছরের তুলনায় বর্তমান ফলের বাজারে খেজুরের দাম বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সাধারণ ক্রেতারা।

তারা বলছেন, খেজুর ইফতারের জন্য একটি অপরিহার্য ফল। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা গলাকাটার মতো দাম নিচ্ছে।

খুলনার মহানগরীর ময়লাপোতা, ডাকবাংলো, নিউমার্কেট, চিত্রালী ও দৌলতপুর খুচরা ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খেজুর আম্বার ১৫০০ টাকা, আজোয়া ১০০০ , মরিয়ম ৯০০ , শুকারী ৭৫০, মিফজল (বড়) ১৩০০ , মাঝারি ১২০০ এবং ছোট ১০০ টাকা। এছাড়াও কাঁচা খেজুর ৫০০ টাকা, দাওয়াজ ৪০০ , দালাদা ৫৫০ , ফিড খেজুর ৫০০ , ইরানি মরিয়ম ১০০ , বরই খেজুর ৪০০ ও বস্তা খেজুর ১৪০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, আপেল (সবুজ) ৩২০-৩৫০ টাকা, ফুজি আপেল ২৬০-৩০০, বেদানা ৩৫০-৪০০, কমলা ২২০ ও মালটা প্রতিকেজি ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ইফতারের নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুলনা ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটার ৬৯০ টাকা, দুই লিটার ৩৭০ টাকা, এক লিটার ১৮৫ টাকা, মুশরি ডাল দেশি ১৪০ টাকা, মোটা ১০০ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, আলু ২৫ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১১০ টাকা, বুট ডালের বেসন ৮৫ টাকা, মুড়ি প্যাকেট এক থেকে দুই কেজি ৭০টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬৫ কেজি, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন দেশি (বাছাইকৃত) ১০০ টাকা, চায়না ১৫০ টাকা, রুহ আফজা বড় ৩৫০ টাকা, ছোট ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিউ মার্কেট বাজারে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটার ৬৯০টাকা, দুই লিটার ৩৭০টাকা, এক লিটার ১৮৫টাকা, মসুর ডাল দেশি ১৪০টাকা, মোটা ১০০টাকা, ছোলা ৮৫টাকা, চিনি ১১৫টাকা, আলু ২০ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১০০টাকা, বুট ডালের বেসন ৮০টাকা, মুড়ি প্যাকেট এক থেকে দুই কেজি ৭০টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ কেজি, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন দেশি ৮০টাকা, রুহ আফজা বড় ৩৫০টাকা, ছোট ২১০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রাইভেট কোম্পানির চাকুরিজীবী মঈনুল ইসলাম জানান, রমজান আসার আগেই প্রতিটি রোজার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, তেল, চিনি, বেসন, খেজুরের দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, সামনে আরও কতো বাড়বে। এছাড়া ফার্মের মুরগি বর্তমানে ২৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে ঢুকতে তো ভয় লাগে, কারণ ৫০-৬০ টাকা নিচে কোনো সবজিই নেই বলে জানান তিনি।

মঈনুল জানান, রোজার আগেই দুশ্চিন্তায় পড়েছি, কারণ হাতে গোনা টাকা। রোজার মাসে চলতে বেশ কষ্ট হয়ে উঠবে।

ফুটপাথ ব্যবসায়ী মামুন জানান, প্রতিবছরই গোটা রমজান মাসে পরিবারের ছেলে-মেয়ে সকলে মিলে রোজা রাখি। গরীবের মাংসের চাহিদা পূরণের শেষ সম্বল ব্রয়লার মুরগি। যার বিকল্প নেই।

বর্তমানে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ এমন দাম বেড়েছে, কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। ব্যবসায়ীরা একটা অজুহাত দেখিয়ে দিলেই হয়। মুরগির খাবারের দাম বাড়তি। সোজা কথা শীতকালে মুরগি মরে যাওয়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা সস্তায় মুরগি বিক্রি করছে। এখন রমজানকে সামনে রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইচ্ছা মতো দাম হাকাচ্ছে।

এছাড়া রমজানকে সামনে রেখে রোজার প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে একাধিক সাধারণ ক্রেতারা।

এদিকে রমজান মাসে রোজাদার মুসল্লিদের একটি প্রধান খাবারের চাহিদা হলো কলা।

কলা না হলে যেন রোজাদারদের খাদ্যের তালিকার ঘাটতি থেকে যায়। তবে এবার খুলনায় কলার বাজারগুলো বা রেলস্টেশন থেকে পর্যাপ্ত কলার আমদানি হচ্ছে এমনটি দেখা গেলেও কলার দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

বর্তমান এক ডজন মাঝারি আকারের কলার দাম আট থেকে ১০ টাকা। আর বড় সাইজের কলা ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। মোট কথা এখন ছোট কলার দাম ছয় টাকার নিচে নেই। কলার দাম এত বৃদ্ধি পাওয়া অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। আর বিশেষ করে বেশ বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন শ’ শ’ কলা কাইন নামছে খুলনা রেলস্টেশনে। তারপর ও ব্যবসায়ীদের দাবি কলার সরবরাহ কম।

কলার ব্যাপারী মুহসিন আলী বলেন, আমি সৈয়দপুর ও মেহেরপুরের চুয়াডাঙ্গা থেকে কলা আনি। আমার কাছ থেকে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা কলা নিয়ে যায়। এ বছর রমজানে আগে কলা চাষিরা আগের তুলনায় একটু বেশি দাম দাবি করছে।

এছাড়া জ্বালানি তেলের দামের কারণে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে এরও একটি প্রভাব আছে।

ক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোজায় যেন ইফতারি বা সেহরিতে কলা ছাড়া খেতে ভালো লাগে না। বিশেষ করে সেহরির সময়ে কলা খেলে সারাদিন পেটে ঠান্ডা অনুভব হয়। যে কারণে রোজায় কলার চাহিদা ব্যাপক।

তবে এ বছর যেন আগের তুলনায় কলার দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাজারে এসছিলাম একটু কাচা দেখে কলা ক্রয় করতে। এসে দেখি মাঝারি আকৃতির কলার দাম ১২০ টাকা ডজন বলছে দোকানি, মানে একটি কলার দাম ১০ টাকা।

এক্ষেত্রে আমরা ছোট ক্রেতারা কি বলতে পারি। এখন চাহিদা ছিল দশটি কলা এখন অতিরিক্ত দামের কারণে ছয়টি কলা ক্রয় করছি। এর থেকে আর কি করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের খরচ কমিয়ে আনতে হবে। আর মনে মনে ধিক্কার দিতে হবে অসাধু মজুদদার ব্যবসায়ীদের। যারা রমজান মাসকে ঘিরে গরিব নিম্ন আয়ের রোজাদার মানুষদের কষ্ট দিচ্ছে।

সাহস২৪.কম/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত