সেতাবগঞ্জ চিনিকল

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ১২:০৯

সুলতান মাহমুদ , দিনাজপুর
সেতাবগঞ্জ চিনিকল,দিনাজপুর

সরকার লোকসানের বোঝা কমাতে ২০২০ সালে দেশের ৬টি চিনি কলে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। তার মধ্যে সেতাবগঞ্জ চিনিকল একটি। দীর্ঘ দিন ধরে এই সেতাবগঞ্জ চিনি কল বন্ধ থাকায় মিলের দামি কলকবব্জা ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এদিকে এই চিনি মিল রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর গুনতে হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। কোন রকমের কাজ কর্ম ছাড়াই বেতন নিচ্ছে সেতাবগঞ্জ চিনি কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীা। ভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন তারা

চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওইসব মিল এলাকায় আখের উৎপাদনও প্রায় শূন্যতে নেমে এসেছে। ফলে চিনি জাতীয় পণ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব মিলে অবিলম্বে উৎপাদন শুরু করতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সেতাবগঞ্জ চিনিকল যখন বন্ধ করা হয়, তখন সেখানে প্রায় ৫১০ জন কর্মী ছিলেন, যাদের মধ্যে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মীরই অন্যান্য মিলে পদায়ন হয়েছে। মিলটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বর্তমানে ৩০ জন নিরাপত্তাকর্মী ৪০ জন কর্মচারী এবং ২৫ জন অফিস কর্মকর্তা রয়েছেন। বর্তমান কর্মীদের বেতন-ভাতা এবং বিদ্যুৎ বিলসহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যা চিনিকলের ৩৩ হাজার একর জমি  লিজ দিয়ে উত্তোলন করা হয়। 


 সেতাবগঞ্জ চিনিকলে দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকায় ৩৮ হাজার ৬০ একর জায়গার ওপর স্থাপিত এ চিনিকলের বিশাল এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছ ও আগাছায় ভরে গেছে। প্রায় ৫ শতাধিক কর্মীর কর্মস্থল বিশাল এ মিল এলাকা এখন অনেকটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কর্মচাঞ্চল্য এলাকা এখন ভুতুরে এলাকায় পরিনত হয়েছে । মিল এলাকায় এখন আর কেউ আসেনা ।

সেতাবগঞ্জ চিনিকলে আখ পরিবহনের জন্য যেসব ট্রাক্টর ও ট্রলি ব্যবহার করা হতো, সেগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ছে  আখ পরিবহনের ৪০টি ট্রাক্টর ও ৮০ সেট ট্রলি। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এসব মূল্যবান যানবাহনের অনেকগুলোই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিনি কলের অতি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্টের শেষ প্রান্তে রয়েছে ।


সেতাবগঞ্জ চিনির কলের কর্মচারীরা বলেন , এই চিনিকল এলাকা এক সময় কর্মচাঞ্চল্য এলাকায় মুখরিত হয়ে থাকত । এখন মিলে আসলে চোখে পানি চলে আসে। এই মিল থেকে অধিকাংশ কর্মচারী অন্যত্র মিলে পাঠানো হয়েছে । এখানে মাত্র ৯৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে । প্রহরীদের কাজ থাকলেও আমাদের তেমন কোন কাজ নেই। প্রতিদিন মিলে আসলেও মানসিক ভাবে ভাল নেই আমরা ।

স্থানীয় মামুনুর রশিদ বলেন , আমরা এখনও আশার বানী শুনছি সেতাবগঞ্জ চিনিকল আবার চালু হবে । যদি এই মিল চালু হয় তাহলে চিনির সরবরাহ সঠিক থাকবে , ন্যায্য মূল্যে সাধারন মানুষ চিনি খেতে পারবে । বর্তমান সময়ে যে ঊর্ব্ধগতির চিনি দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে ।

দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ চিনিকল ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন , আমরা আশার বানী শুনছি বর্তমান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনরায় চালুর করার ব্যাপারে সরকার আগ্রহী। তাই যে কোন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে চালুর ঘোষনা আসতে পারে ।

তিনি আরোও বলেন প্রায় ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ পৌর এলাকায় সেতাবগঞ্জ চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে বা লাভের মুখ দেখতে পারেনি মিলটি। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়েই মিলের উৎপাদন বন্ধ করা হয়। বন্ধের পরও লোকসান গুণতে হচ্ছে সেতাবগঞ্জ চিনিকলকে।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত