মেহেরপুরে আমের ফলন ভালো হলেও দামে হতাশ চাষিরা

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৩, ১৪:০৪

মেহেরপুর প্রতিনিধি

বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে মেহেরপুরের হিসমাগর আম। ২৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এ জাতের আম সংগ্রহ। বৈরি আবহাওয়া ও দেশের বিভিন্ন জেলার আম একই সময়ে বাজারজাত হওয়ায় হতাশ বাগান মালিকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৭শ ৮৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা।

বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আমরুপালি সহ বিভিন্ন জাতের আম। বৈরি আবহাওয়া থাকলেও এ মৌসূমে বাগান মালিকরা স্বপ্ন দেখছিলেন মোটা অঙ্কের লাভের টাকা ঘরে তুলবেন। কিন্তু একই সাথে দেশের বিভিন্ন জেলার আম বাজারজাত হওয়া হতাশ তারা। সাথে রয়েছে কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির চাপ। 

আবহাওয়ার তারতাম্যের কারনে, প্রথমে সাতক্ষিরা পর্যায়ক্রমে মেহেরপুর, রাজশাহী, চাপায়নবাবগঞ্জ ও নওগার আম বাজারে আসার
কথা। কিন্তু এবারই ঘটেছে ব্যাতিক্রমী ঘটনা। একই সময়ে বাজার সয়লাব সব জেলার আম। ফলে পড়ে গেছে বাজার।


মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের আম বাগান মালিক সাখাওয়াত হোসেন জানান, আমার পাঁচবিঘা জমিতে হিমসাগর আমের বাগান আছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনুকুল আবহাওয়ায় হিমসাগর আমের কাঙ্খিত ফলন হয়েছে। বিশেষ করে মেহেরপুরের হিমসাগর আমের চাহিদা অন্যান্য আমের চেয়ে অনেক বেশি।

তিনি আরোও বলেন, আমাদের জেলায় তেমন ঝড় ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি আমগাছ আমে নুইয়ে পড়েছে।  ফলন যেমন ভাল হয়েছে
তেমনিভাবে আমরা একেবারেই কেমিক্যাল ও কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন করেছি। যা আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হবে। তবে এ বছর বৈরি আবহাওয়া ও দেশের বিভিন্ন জেলার আম একই সময়ে বাজারজাত হওয়ায় দামে হতাশ আমরা।

একই গ্রামের আরেক আম চাষি ফয়জুল করিম জানান, এবছর আমের ফলন ভাল হয়েছে। সতেজ আম বাজারজাত করার জন্য প্রস্তত। তবে আমের বাজার মুল্য ভাল না। আমের ন্যায্য মুল্য না পেলে লোকসান গুনতে হবে আমাদের মত আম চাষিদের। বিশ্ব বাজারে মেহেরপুরের আমের বাজার তৈরী করে চাষিদের আম চাষে উৎসাহি করার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া, তি পোষাতে সরকারীভাবে আম রপ্তানীর উদ্যোগ নেয়ার দাবি করেন তিনি।

মাদারিপুর থেকে আম কিনতে আসা ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমান জানান, মেহেরপুর জেলার হিমসাগর আম যখন বাইরের জেলায় বিক্রি করতে যাই তখন অনেক কদর থাকে এই আমের। অনেকেই জানেন মেহেরপুরের আম মানেই বিষ ও ক্যামিক্যাল মুক্ত।
আমের অসাধারণ স্বাদ।মেহেরপুরের আমের কথা শুনলে অন্যান্য জেলার আমের আগেই মেহেরপুরের আম আগে বিক্রি হয়ে যায়। এবার তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম নিয়ে ব্যবসা করবেন।


মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক-শংকর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমের অনেক ভাল ফলন হয়েছে। জেলায় ২৩৪০ হেক্টর আম বাগানে প্রায় ৪০থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা। বিশেষ করে জেলার হিম সাগর আমের অনেক খ্যাতি রয়েছে। হিমসাগর
আম ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশে এবারও রপ্তানি সম্ভবনা আছে। সে লক্ষে ইন্টারন্যাশনাল ভার্জিনিয়াটেক, গ্লোবাল ট্রেড লিংক, গ্রীনগ্লোবাল, বিএইচ ট্রেডার ও নাফিজা এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান আম ক্রয় করতে আগ্রহপ্রকাশ করেছে। আম ক্রয়ের লক্ষে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আম বাগান তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রযেছে। গত বছরেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হিম সাগর আম রপ্তানি করেছিল।