ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সংকটে উত্তরের পাঁচ জেলার চা শিল্প

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ১২:১৮

আবু সালেহ, ঠাকুরগাঁও

উত্তরের পাঁচ জেলা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। চা উৎপাদনের দিক থেকে সর্বশেষ গত দুই অর্থবছরে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উত্তরাঞ্চল। চা উৎপাদনে প্রতিবছর উত্তরাঞ্চল একের পর এক রেকর্ড করছে। চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সমতলের চা শিল্পের পার সম্ভাবনা থাকলেও দেখা দিয়েছে সংকট।

এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন ক্ষুদ্র চাষিরা। এ অবস্থায় চা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে যায়, গত মৌসুমে উত্তরের পাঁচ জেলা-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের সমতল ভূমিতে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের মৌসুমের (২০২১) চেয়ে ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি বেশি। উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে ২০১৭ সালে ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়। এরপর ২০১৮ সালে ৮৪ লাখ ৬৭ হাজার কেজি, ২০১৯ সালে ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার কেজি, ২০২০ সালে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি, ২০২১ সালে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে।

বেশ কয়েকটি কোম্পানি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২০০০ সালে চায়ের বাগান গড়ে তোলে। ২০০৭ সালে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও, ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ২১টি বড় চা-বাগান (২৫ একরের বেশি) আছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫৩টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ৩০২টি অনিবন্ধিত ছোট চা-বাগান (২৫ একরের কম) আছে। সব মিলিয়ে অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র চা–চাষি আছেন ৮ হাজার ৩৫৫ জন।

উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত অনুমোদিত ৫২টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা আছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৫টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা সচল। 

চাষিদের অভিযোগ, চা বাগান ঘিরে কারখানা বাড়লেও বাড়ছে না চা পাতার দাম। এ শিল্পকে ঘিরে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। কয়েক বছর ধরেই পাচ্ছেন না উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার ন্যায্য দাম। চলতি মৌসুমে চা পাতা কারখানাগুলো যে দামে কিনছে, তাতে করে তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। বছরের শুরুতেই গুনতে হচ্ছে লোকসান।

বাগান মালিক মো. মুরাদ বলেন, আমি ২০২০ সাল থেকে চা বাগান শুরু করি। প্রায় দুই একর জমিতে যখন বাগান করা হয় তখন চা পাতার দাম ভালোই ছিল। চায়ের দাম তখন প্রতি কেজিতে ৩৬ টাকা থেকে ৪০ টাকা ছিলো। কিন্তু বর্তমান যে অবস্থা সবকিছুর দাম উর্ধ্বগতি হলেও চায়ের দাম অনেক কম। চা এখন প্রায় ফ্রিতে দেওয়া হচ্ছে এর কারণ ১০০ কেজি চা দিলে তারা ৪০ থেকে ৫০ কেজি কেটে নিচ্ছে আর আমাদেরকে দাম দিচ্ছে ১২ টাকা ১৩ টাকা। যেখানে আমাদের ১কেজি চা উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা

বর্তমানে চা বাগান করা আমার সবচেয়ে বড় ভুল, এটা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। চা বাগানে যেসব কীটনাশক লাগে সেই কীটনাশকের দোকানদারের কাছে আমি ঋণী। আমার যে কর্মীরা বাগানে কাজ করে তাদের কাছে ঋণী। চা বাগান করে আমি চারদিকেই ঋণ। ফ্যাক্টরিতে সঠিক সময়ে পাতা নেয় না। আমাদের উত্তর বঙ্গে ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট আছে। তারা সিস্টেম করে দুইদিন একটি কারখানা বন্ধ রাখলে বাকি দুইটা চলে বা ওই দুইটা বন্ধ থাকলে একটা চলে।

চা শ্রমিক মালেক বলেন,  বর্তমানে চায়ের দাম খুবই কম মালিকরা চায়ের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে  না। আমাদেরকে দুই মাস থেকে বেতন দিতে পারছে না। পরিবারের সদস্যরা অনাহারে থাকছে, এখন যদি চায়ের দামটা বৃদ্ধি পায় তো মহাজন লাভবান হলে আমাদের বেতন দিতে পারবে। আমি দুই মাস থেকে বেতন পাচ্ছি না বাসায় টাকা দিতে পারতেছি না।

চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা শিল্পের শুরু হয়। গত দুই দশকে বদলে যায় প্রেক্ষাপট। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি হয়ে উঠে সবুজ চা বাগান। সবুজ পাতায় জেগে উঠে নতুন অর্থনীতি। চা উৎপাদনে সিলেটের পর দ্বিতীয় অঞ্চল হয়ে উঠেছে উত্তর বঙ্গ । 

ঠাকুরগাও জেলা   কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, চা চাষ বেড়েছে কিন্তু বর্তমান সময়ে চা চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না এর ফলে অনেকেই চা বাগান কেটে ফেলছে।


 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত