যেখানে ১৪ বছরের মধ্যে বিয়ে না হলে মেয়েরা আইবুড়ি হয়

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ১৪:৪৯

নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইল জমিদারবাড়ি-সংলগ্ন আদিবাসি

এখানে ১৪ বছরের মধ্যে বিয়ে না হলে মেয়েদের আইবুড়ি বলা হয়। বকয়স ১৪ পার হয়ে গিলে সমাজের মানুষ নানান কথা বলতে থাকে। বিয়ের পাত্র পেতেও অনেক টাকা খরচ করতে হয় মেয়ের পরিবারকে। নড়াইল জমিদারবাড়ি-সংলগ্ন আদিবাসি পাড়ায় এমন প্রচলন এখনো চালু আছে ।

আদিবাসি পাড়ার মৃত প্রফুল্ল সরদারের স্ত্রী গৌরিবালা বলেন, বয়স ১৪ পার হয়ে গিলি আমাগে সমাজের মানষি নানান কথা কয়। বিয়ে দিয়াও ঝামেলা হয়ে যায়। তিনি জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়েকে কম বয়সেই বিয়ে দিয়েছেন। নিজের বিয়েও হয়েছে মাত্র ৮ বছর বয়সে।

আদিবাসি পাড়ার নদের চাদ মালি (৫৯) বলেন, এ পাড়ায় ৬০/৭০ ঘর পরিবার আছে। পাড়ায় শিক্ষার হার অনেক কম। ঘরের পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও বেশিরভাগ শিশু বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। যারা যায় তারা প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডিও পেরোতে পারে না। তখন মা-বাবা তাদের নানা কাজে লাগিয়ে দেয়। 

পাড়ার প্রধান কার্ত্তিক সরদার জানান, বাবু বাড়ির (জমিদার বাড়ি) চারপাশে তিনটি পাড়া আছে। পাড়াগুলোয় শুধু আদিবাসিরা বাস করে। তারা পেশায় কুলি-মজুর। অনেকে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। নিজেদের জমিজমা না থাকায় কৃষি কাজ করতে জানে না। ঘরের বউয়েরা মানুষের বাসা-বাড়িতে ঝিয়ের কাজ ছাড়াও শ্রমিকের কাজ করে থাকে।

সরেজমিন দেখা যায়, নড়াইল পৌরসভার নড়াইল গ্রামের সাবেক জমিদার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে তিনটি আদিবাসি পাড়া। পাড়াগুলো হচ্ছে দীঘিরপাড় পাড়া, হঠাৎ পাড়া, ও বাগান পাড়া। এসব পাড়ায় প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ পরিবারের বাস।
পাড়াগুলোর ৫০০ গজের মধ্যে জেলা পুলিশ লাইন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসসহ তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি মহাবিদ্যালয় আছে। তবে এখানকার বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।

নড়াইল গ্রামের বাসিন্দা লক্ষী রানী (৭২) জানান,এখানে শুধু মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া হয় না,এ বয়সে তাদের সন্তানের জন্ম দিতে হয়। সন্তান জন্ম দেবার সময় বাড়িতে দাই ডেকে আনা হয়। তিনি আরো জানান, তার নিজের বিয়ে হয়
মাত্র ১০ বছর বয়সে। 


নড়াইল পৌর সভার কাউন্সিল শরফুল আলম বলেন,আদিবাসিদের সচেতনে শিক্ষার প্রয়োজন। তবে এদের মাঝে অল্প কিছু ছেলে মেয়েরা লেখা পড়াসহ খেলাধূলা এবং শিল্পকর্মের কাজ করার চেষ্টা করে করছে।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধি কর্মকর্তা মৌসুমি মজুমদার বাল্যবিবাহ সম্পর্কে বলেন, কোথাও বাল্যবিবাহের খবর পেলে আমরা তা প্রতিরোধ করে থাকি। তবে করোনাকালীণ সময়ে এই পাড়াগুলোতে বাল্যবিবাহের প্রবণতা ছিল। তাছাড়া এখানে নিয়মিত সভা-সমাবেশ হয়ে থাকে। তারপরও তারা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত