জন্মদিনের শুভেচ্ছাঞ্জলি

নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৩১

১.
শিবলী মোহাম্মদ বাংলাদেশের একজন অন্যতম প্রধান ক্ল্যাসিকাল ভারতীয় নৃত্যশিল্পী। এছাড়াও তিনি একজন নৃত্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষক। সৌন্দর্য আর ছন্দের সমন্বয় নৃত্যশিল্পের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদের জন্মদিন আজ ৪ সেপ্টেম্বর। জন্মদিনে প্রিয় নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদকে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছাঞ্জলি। আজ প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদের, প্রিয় শিবলী ভাইয়ের জন্মদিনে তার সাথে কাটানো অনেক স্মৃতির রঙধনু মনের আকাশে ভাসছে। মনে পড়ছে মৌটুসি খন্দকারের সাথে কত্থক নাচ দেখার আলোকিত স্মৃতিও। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে, বিটিভিতে, মাযহার ভাই-শিরিন বকুল ভাবিদের বাসায় কিংবা বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হিসেবে ভারত সফরকালের নানান স্মৃতি আজ বিশেষভাবে মনে পড়ছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুই নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নীপার অংশগ্রহণে জনপ্রিয় লোকজ নৃত্যনাট্য ‘মহুয়া’ দেখার স্মৃতি আজো আনন্দময়। অধিকাংশ জন্মদিনে দেশের বাইরে থাকলেও খুব কমই মোহাম্মদপুরের নিজের বাড়িতেই দিনটি উদযাপন করার সুযোগ পান তিনি। দেশে থাকলে শিবলী মোহাম্মদের জন্মদিনে তার ছাত্রছাত্রীরাই কেক নিয়ে বাসায় হাজির হয়। আসেন বন্ধুরাও। এ ছাড়া নৃত্যাঞ্চলের শিক্ষক, অন্যান্য নৃত্যশিল্পীও শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত নৃত্যাঞ্চল এবং নাচের শিক্ষকতা নিয়ে। নৃত্যাঙ্গনে নাচের জুটি হিসেবেই পরিচিত শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নিপা। নৃত্যাঞ্চল এই দুই শিল্পীর পড়া প্রতিষ্ঠান।

২.
লেখাপড়া করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থৃবিজ্ঞানে স্নাতকডিগ্রি অর্জৃন করেন। তিনি গান শিখেছেন ছায়ানটে। শিবলী মোহাম্মদ গানও করে থাকেন বড় ভাই সাদী মহম্মদের সঙ্গে। ২০১৬ সালের জন্মদিনে চ্যানেল আইয়ের 'গানে গানে সকাল শুরু' অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে শরৎ, পূজা, প্রার্থনা ও মাকে নিয়ে গান করেন এই দুই সহোদর। এ নিয়ে শিবলী মোহাম্মদ জানিয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকে গান করলেও মূলত শখের বশেই গান করেন তিনি। আর সেবারই প্রথম সরাসরি অনুষ্ঠানে গাইলেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বাংলাভিশনের ঈদ আয়োজনে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ. ধ্রুপদী, লোকজ ও দেশাত্মবোধক- পাঁচটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নীপা। 

৩.
ভারতের কত্থক কেন্দ্রে বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদই প্রথম নাচের ওপর তালিম নিয়েছিলেন। বিবিসি বাংলার সাথে সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে নতুন নাচের শিল্পীদের কেন অংশগ্রহন বাড়ছে না এবং এতে তাদের, অর্থাত্ পুরনোদের বিরুদ্ধে জায়গা না ছাড়ার অভিযোগ আছে, এর উত্তরে তিনি বলেন কোন জায়গা কেউই ছেড়ে দেয় না, জায়গা তৈরী করে নিতে হয়৷ শুধুমাত্র একজন সহ শিল্পীর সাথে কাজ করার কারণ হিসাবে তিনি বলেন,জুটি হিসাবে তারা দাড়িয়ে গেছেন, তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি অন্য শিল্পীদের সাথেও কাজ করেছেন৷ দক্ষিন এশিয়ায় নাচ কি এ অঞ্চলের সনাতন পুরুষালী ধারণা থেকে পুরুষ নৃত্যশিল্পীদেরকে ভিন্ন করে দেয়? শিবলী মোহাম্মদ এর উত্তরে বলেন, এই ধারণা একদম ভুল৷ বিভিন্ন নাচের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে পুরুষ নৃত্যশিল্পীরা যথেষ্ট পুরুষালী৷ মেয়েলী পুরুষ সবখানে, সব পেশাতেই আছেন৷ তিনি তার কাজের বিষয়ে বিবিসি কে জানান, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের নাচের মিশেল ঘটাতে চেষ্টা করছেন -এই শিল্পের নতুনত্বের তাগিদে, গড়ে তুলছেন শিক্ষার্থী৷ সাধনার সাথে সাথে ভাল শিল্পী হওয়ার জন্য একজন ভাল মানুষ হওয়া সবচেয়ে জরুরী বলে তিনি মনে করেন৷ 

৪.
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিতা শহীদ হলে দশ ভাইবোনকে অনেক কষ্টে মানুষ করেন তাদের মা। আনন্দ-বেদনার শৈশব স্মৃতি নিয়ে আজো শিহরিত হন তিনি। শিবলী মোহাম্মদ অকপটে স্বীকার করেন, স্নাতক পড়াকালেই আমি বুঝে ফেলি যে নাচ আমার রক্তে মিশে আছে। বাংলাদেশের একজন অন্যতম প্রধান ক্ল্যাসিকাল নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ। এছাড়াও তিনি একজন নৃত্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষক। তিনি ‘কত্থক’ নাচে অধিক পারদর্শী। এছাড়াও তিনি তার সুগঠিত শরীরে নাচ সঞ্চালন এর জন্যও খুব জনপ্রিয়। নাচ ও তার বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে তিনি কথা বলেন প্রিয়.কমের সঙ্গে...। সেই আলোচনাটি শোনা যাক।
প্রিয়.কম: আপনি তো নৃত্যশিল্পের সাথে অনেকদিন ধরে জড়িত। শুরুর গল্পটা একটু শোনা যাক...
শিবলী মোহাম্মদ: আমার ট্র্যাকটা একটু ভিন্ন ছিল। আমি উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই এবং পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করি। কিন্তু তখনই আমি বুঝে ফেলি যে আমার রক্তে নাচ মিশে গেছে। তখন থেকে আবার নৃত্যশিল্পের দিকে মনোযোগী হই।
প্রিয়.কম: তখন কাদের কাছে তালিম নিতেন আপনি?
শিবলী মোহাম্মদ: তখন আমি ছায়ানটে ভর্তি হই এবং অজিত দে, অনিতা দে এবং কার্তিক সিং এর কাছে তালিম নিতাম। কিছুদিনের মধ্যে ভাগ্যক্রমে আমি ভারত সরকারের একটা বৃত্তি পেয়ে যাই লাকনৌর একটি সঙ্গীত স্কুলে নাচ শেখার জন্য। ওখানে আমাকে শ্রীমতী পূর্ণিমা পান্ডে কত্থক এর উপর তালিম দিতেন।
প্রিয়.কম: পরবর্তীতে কোথায় যাওয়া হয়?
শিবলী মোহাম্মদ: পরে আমি ‘কত্থক কেন্দ্রে’ যাই। এটি নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। সেখানে আমি কত্থক গুরু পন্ডিত বিরজু মহারাজ এর কাছে পরিপূর্ণ তালিম নিই। অত:পর আমি ঢাকায় ফিরে আসি। 
প্রিয়.কম: ঢাকায় ফেরত আসার গল্পটি কি?
শিবলী মোহাম্মদ: বৃত্তি পেয়ে আমি কোর্স শেষ করি। তারপর আমি ঢাকায় চলে আসি। ততদিনে ঢাকায় আমার তরুণ নৃত্যশিল্পী হিসেবে দারুণ নামডাক হয়েছে। 
প্রিয়.কম: আপনি নাকি ব্যালেট ও জ্যাজ নৃত্যের উপরেও তালিম নিয়েছেন। সেই সময়টা কেমন ছিল?
শিবলী মোহাম্মদ: দিল্লিতে তালিম নেয়ার পর আমার মনে হয়েছে আরো কিছু বিষয়েও তালিম নেওয়া দরকার। তাই আমি পাড়ি দেই লন্ডনে। সেখানে লন্ডন ব্যালেট থিয়েটারে ব্যালেট, ট্যাপ ও জ্যাজ নৃত্যে প্রশিক্ষণ নিই। এতে করে আমি আধুনিক নৃত্যের সাথে কত্থক এর মেলবন্ধন ঘটাতে শিখেছি। 
প্রিয়.কম: আপনি তো বিভিন্ন দেশে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। কয়টি দেশ পরিভ্রমণ করা হয়েছে আপনার?
শিবলী মোহাম্মদ: আমি পঞ্চাশটির বেশি দেশে বেশ দাপটের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেছি। যেমন, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, চায়না, জাপান ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে। 
প্রিয়.কম: প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি চ্যানেলেও নাকি আপনি বিচারক হিসেবে আছেন। সেখানে আপনার জনপ্রিয়তার ব্যাপারে কিছু বলুন।
শিবলী মোহাম্মদ: ভারতের ‘ইটিভি’তে একটি নৃত্য প্রতিযোগিতামূলক শো হয় ‘ঋতুর মেলা’। সেখানে আমি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মূলত দুই বাংলার মানুষের কাছেই আমি সমান জনপ্রিয়। 
প্রিয়.কম: নৃত্যের পাশাপাশি আর কি করছেন?
শিবলী মোহাম্মদ: বাংলাদেশে আমি বিভিন্নরকম প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও শিশু একাডেমিতেও ছিলাম আমি অনেকদিন। আমি টানা দুই বছর আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট এর সদস্য ছিলাম। 
প্রিয়.কম: তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে নাচই আপনার জগত, নৃত্যশিল্পীর পরিচয় ছাড়া শিবলী মোহাম্মদকে আমরা কিভাবে চিনব?
শিবলী মোহাম্মদ: আমি কিন্তু একজন শিক্ষকও বটে। আমি আমাদের নৃত্যাঞ্চল স্কুলে নাচ শেখাই। আমার বাসায় একটা স্টুডিও আছে, ওখানেও নাচের ক্লাস নিই।
প্রিয়.কম: নাচে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য আপনি বেশ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেন। আপনার সম্মাননার ব্যাপারে কিছু বলবেন কি?
শিবলী মোহাম্মদ: এক্ষেত্রে প্রথমেই মনে করতে হয় ইউনেসকো পুরস্কারের কথা যেটি আমি পেয়েছিলাম শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী হিসেবে। এছাড়া যায়যায়দিন পুরস্কার, বাচাসাস পুরস্কার, প্রথম আলো পুরস্কার ও লাক্স চ্যানেল আই পুরস্কার পেয়েছি। 
প্রিয়.কম: আপনাকে অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা। 
শিবলী মোহাম্মদ: ধন্যবাদ। 

৫.
নৃত্য পরিচালক শিবলী মোহাম্মদ ও নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বহু বছর ধরে একসঙ্গে নৃত্যচর্চা করছেন। নৃত্যাঞ্চলের অন্যতম দুই সদস্য তারা। ২০১৬ সালের ঈদে শিবলীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নীপা। ‘নূপুর বেজে যায়’ নামের একটি নৃত্যানুষ্ঠানের জন্য মুখোমুখি হয়েছিলেন দু’জন। এর দৃশ্যায়ন হয় বিএফডিসির চার নম্বর ফ্লোরে। ঈদের অনুষ্ঠানমালায় বাংলাভিশনে প্রচার হয় এটি। সেই সাক্ষাৎকারে উপমহাদেশের খ্যাতিমান নৃত্যগুরু বিরজু মহারাজকে নিয়েই কথা বলেছেন তার সুযোগ্য শিষ্য শিবলী মোহাম্মদ। সেইসাথে সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’, সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ও ‘দেবদাস’ ছবিতে বিরজু মহারাজের নাচগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন শিবলী।

৬.
নৃত্যাঙ্গনে নাচের জুটি হিসেবেই পরিচিত শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নিপা। এই প্রথমবারের মতো একজন আরেকজনের মুখোমুখি হলেন তারা। ২০১৬ সালে বাংলাভিশনের ঈদ আয়োজনে 'নূপুর বেজে যায়' অনুষ্ঠানে শিবলী মোহাম্মদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শামীম আরা নিপা। এতে চলচ্চিত্রে কত্থক নৃত্যের ব্যবহার ও অন্যান্য অনুষঙ্গ নিয়ে কথা বলেন শিবলী মোহাম্মদ। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, 'মূলত তিনটি ধাপে নিপা সাক্ষাৎকার নিয়েছে। প্রথমত বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কত্থক নৃত্যের ব্যবহার নিয়ে কাজ করার চিন্তা, গুরু বিরজু মহারাজের অধিকার, তার পূর্বসূরিদের নিয়ে উত্তরসূরি হিসেবে আমার প্রচেষ্টা নিয়ে কথা বলেছি।' অনুষ্ঠানে গুরু বিরজু মহারাজের পূর্বসূরি লাচ্ছো মহারাজ পরিচালিত 'মোগলে আজম', 'পাকিজা' এবং লাক্ষেষ্টৗ ঘরানার কয়েকজন গুণী নৃত্যপরিচালক এবং স্বয়ং বীরযু মহারাজের পরিচালনায়, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'সাতরঞ্জ কে খিলাড়ী'সহ 'বাজিরাও মাস্তানী', ও 'দেবদাস' চলচ্চিত্রের নৃত্যগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপনা করেন শিবলী মোহাম্মদ। 

৭.
নৃত্যশিল্পী ও প্রশিক্ষক শিবলী মোহাম্মদ সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের প্রযোজনায় আরব্য রজনীর চল্লিশ চোরের ঘটনা নিয়ে প্রথমবারের মতো নির্মিত ‘বাদি-বান্দার রূপকথা’ নৃত্যনাট্যে আলী বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে দুই দিনের আয়োজনে ‘বাদি-বান্দার রূপকথা’ নৃত্যনাট্য সম্পর্কে শিবলী মোহাম্মদ বলেন... আরব্য রজনীর চল্লিশ চোরের ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে নৃত্যনাট্যটি। সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের প্রযোজনায় আনিসুল ইসলাম হিরুর তত্ত্বাবধানে এটি নির্দেশনা দিয়েছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। এতে ভারত-বাংলাদেশ মিলে প্রায় ৭০ জন নৃত্যশিল্পী অংশ নিয়েছে। এটি বাগদাদের সেই সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে এসেছেন ডলি ইকবাল। তিনি আলীবাবার স্ত্রী সখিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শামীম আরা নীপা অভিনয় করেন মর্জিনার চরিত্রে। নাটকটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ভারতের জয় সরকার। কণ্ঠ দিয়েছেন নচিকেতা, শ্রীকান্ত আচার্য, অম্বেষা দত্ত, মন্ময়, লোপা মুদ্রাসহ আরও অনেকে। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো জানাচ্ছেন-
নৃত্যনাট্যে আপনার চরিত্রটি নিয়ে বলুন...
শিবলী মোহাম্মদ : আমি আলী বাবার চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি সব সময় নির্দেশকের নির্দেশনার মূল্যায়ন করি এবং সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করি। এটিতেও তাই হয়েছে। একেবারে চরিত্রটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।
প্রথম দিনের মঞ্চায়নে দর্শক সাড়া কেমন পেলেন?
শিবলী মোহাম্মদ : আমি কখনও কল্পনাও করতে পারিনি, এতো দর্শক পাব এবং দর্শকরাও নাটকটিকে পজেটিভ হিসেবে নিয়েছে। আশা করছি আজ দর্শক সংখ্যা আরও বাড়বে।
নাটকটিতে থ্রিজি ম্যাপিং প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে বলুন...
শিবলী মোহাম্মদ : এক ধরনের ফিল্ম প্রোডাকশনের চিন্তা থেকে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে মনে হয় মঞ্চে আমরা সবাই সেই সময়ে ফিরে গেছি। সময়ের প্রয়োজনে প্রযুক্তির ব্যবহার তো খুবই স্বাভাবিক। তবে এটি অনেক ব্যয়বহুল একটি নৃত্যনাট্য। 
আমাদের দেশে নৃত্যনাট্য নিয়মিত নয় কেন?
শিবলী মোহাম্মদ : মঞ্চ নাটকের মতো নৃত্যনাট্য নিয়মিত নয় এটা ঠিক, কারণ একটি নৃত্যনাট্য তৈরি করতে গেলে সময় ও অর্থনৈতিক সাপোর্টসহ আন্তরিকতা থাকতে হয়। আমি মনে করি না যে আমাদের দেশে নৃত্যশিল্পীদের আন্তরিকাতার অভাব আছে। তবে অর্থনৈতিক অভাব খুব। এছাড়া একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন করতে গেলে যে ধরনের মঞ্চের প্রয়োজন, সেটা আমাদের দেশে খুব কম। 
আমাদের দেশে নৃত্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য...
শিবলী মোহাম্মদ : আমাদের দেশে অনেক ভাল ভাল নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার আছে। এদের কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নৃত্য নিয়ে যেমন পৃষ্ঠপোষকতা হয়, আমাদের তার উল্টো। যদি নৃত্যের পেছনে মঞ্চসহ অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে নৃত্য আরও এগিয়ে যাবে।

৮.
পথিকৃৎ নৃত্যশিল্পী রাহিজা খানমকে নিয়ে স্মৃতিচারণকালে বলছেন, ‘ঝুনু আপা ছিলেন মায়ের মতো’। শিবলী মোহাম্মদ জানাচ্ছেন, ‘জীবনে নাচ শিক্ষা শুরুর দিন থেকেই তো উনি আমাদের কাছে একজন পথিকৃৎ। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে তো উনারা কয়েকজন নাচের অঙ্গনে প্রবেশ করেন। এজন্যই তো উনারা বাংলাদেশের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। ওনাদের জন্যই তো আজকে বাংলাদেশের মেয়েরা সহজে নাচ করতে পারে। অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হয়ে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই তারা কাজ করে গেছেন। সবচেয়ে বড় কথা উনি অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ ছিলেন। মায়ের মতো একদম। শিল্পীর বাইরে উনি একজন মমতাময়ী মা। ওনার কাছে এত স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছি। কত সম্মানের উনি আমাদের কাছে। বুলবুল একাডেমিতে যখন উনি প্রিন্সিপাল, তখন আমি ওখানে শিক্ষকতা করতাম। ক্যারিয়ার জীবনের শুরুতেই অনেক স্মৃতি ওনার সাথে। সবচেয়ে বড় স্মৃতি হল, প্রতি মুহূর্তে যখন উনার সামনে গিয়েছি, মনেই হয়েছে যে একজন মা। এইটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় অনুভূতি।’

৯.
শিল্পী হিসেবে সামাজিক দায় ও ভুমিকাকে অস্বীকার করেন না কখনো। জনসচেতনতায় শিবলী-নীপা জুটির নাচের স্মৃতিও মনে পড়ছে। 'ঈদে ঘরমুখী মানুষের আনন্দ এবং সড়ক দুর্ঘটনা' শিরোনামের জনসচেতনতামূলক নাচে অংশ নিয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ। বক্তব্যধর্মী ও সচেতনতামূলক এ নাচে তাদের সঙ্গে ছিলেন নৃত্যাঞ্চলের শতাধিক শিল্পী। ঈদের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'র একটি পরিবেশনায় ছিলো তাদের জনসচেতনতামূলক এ নাচ। বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ নৃত্যানুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিচালনা করেন ফরিদ আহমেদ। এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠান নির্মাতা জানান, সব সময় যে ধরনের নাচ এবং নাচের ভিডিও দেখে সবাই অভ্যস্ত, এই নাচটি তার চেয়ে ব্যতিক্রম। এর গানে যেমন নতুনত্ব রয়েছে তেমনি নাচের কম্পোজিশনেও বৈচিত্র্য রয়েছে। নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনাও দারুণ হয়েছে। ইত্যাদির এ পরিবেশনা নিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা বলেন, 'গণ্ডিবদ্ধ নৃত্যচর্চার বাইরে এসে এ প্রযোজনার নৃত্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করে একজন শিল্পী হিসেবে নিজের কাছেও ভালো লাগছে।' 

১০.
জন্মদিনে আবারো শিবলী ভাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

লেখক: আবদুল্লাহ আল মোহন, সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত