কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৬

১.
'ঐ দেখা যায় তালগাছ/ ঐ আমাদের গাঁ/ ঐ খানেতে বাস করে/ কানা বগীর ছা/ ও বগী তুই খাস কি/ পান্তাভাত চাস কি/ পান্তা আমি খাই না/ পুঁটিমাছ পাই না/ একটা যদি পাই/ অমনি ধরে গাপুস-গুপুস খাই।’ এই জনপ্রিয় ছড়াটির রচয়িতা কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। যে ক’জন হাতে গোণা কবি-সাহিত্যিক নিজস্ব গণ্ডি পেরিয়ে স্বীয় মেধা, মনন, যোগ্যতা ও প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন অর্জনে সক্ষম হয়েছেন নিঃসন্দেহে কবি মঈনুদ্দীন তাদের মধ্যে অন্যতম। কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে কবির স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

উল্লেখ্য যে, খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এই সুন্দর মায়াময় পৃথিবী থেকে নিয়েছেন চির বিদায় নেন। শিশু সাহিত্যিক খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তার শিশুতোষ সাহিত্যে অবদানের জন্য আমাদের হৃদয়ে চির অমর হয়ে রয়েছেন। 

২.
আমাদের আধুনিক সাহিত্যের এক অগ্রণী পুরুষ খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। বহুমুখী প্রতিভার কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন সারা জীবন শিশুদের মনোভূমি উৎকর্ষতার জন্য নিরলস ভাবে সাহিত্য সাধনায় ছিলেন নিয়োজিত। কবি মঈনুদ্দীন ছোটবেলা থেকে ব্যাপৃত ছিলেন জীবন সংগ্রামে। তার একাগ্রসাধনা, অধ্যবসায় ফলে তিনি সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে একের পর এক সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম হন। কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন কেবল তাঁর যাপিত সময়ের কবি ছিলেন না, তিনি তার সময়কে অতিক্রম করে আমাদের সময়েও সমানভাবে উপস্থিত।তিনি মূলতঃ মুসলিম-জাগরণের পাশাপাশি মানবতার বার্তাবাহক হতে চেয়েছিলেন। যুগস্রষ্টা শিশু সাহিত্যিক খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন তার সকল ভাবনা, চিন্তা, সকল সাহিত্যকর্মের অবসান ঘটিয়ে অজানালোকে চলে গেলেও বেঁচে আছেন পাঠকের মাঝে তাঁর সৃষ্টির মাঝে। স্মরণযোগ্য তাঁর আদর্শ উক্তিটি, ‘জীবনকে সহজভাবে নাও, সহজভাবে চলো’।

৩.
শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত থেকে তিনি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়াতে গিয়ে অনুভব করলেন যে, 'বড়দের জন্য লেখা সহজ, পাঠদান করাও সহজ। কিন্তু ছোটদের বিশেষ করে শিশুদের জন্য লেখা বা তাদের শিক্ষা দেয়া অত্যন্ত কঠিন।' শিশুদের মন-মানসিকতার উত্কর্ষতায় কি ভাবে একজন শিশুকে ভবিষ্যতে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়, এই চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সরলমনা শিশুদের জন্য সহজ-সুন্দর কথার মালা গেঁথে যুক্তাক্ষর বর্জিত মনোনিবেশ হন সুপঠিত সাহিত্য রচনায়। শিশুসাহিত্যিক খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের লেখাগুলো খুবই সহজ সরল মনোমুগ্ধকর। তার যে কোন লেখা সরলমতি শিশুমনে সহজেই দাগ কাটে। ফলে যে কোন শিশু মুখে মুখে আবৃত্তি করতে আনন্দ উপভোগ করে।

৪.
কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের বাবার নাম মুহম্মদ মমরেজ উদ্দীন খান ও মায়ের নাম রাকিবুন নেসা খানম। পিতা-মাতার চার ছেলে দু'মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম সন্তান। তিনি শৈশবে নিজগ্রামের পাঠশালায় শিক্ষায় হাতেখড়ি নেন। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে বালক মঈনুদ্দীন কলকাতায় গিয়ে প্রথম জীবনে বুক বাইন্ডিং পেশায় নিয়োজিত হন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে লেখাপড়া শিখে কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষকতাকালীন সময়েই তিনি লেখালেখির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

৫.
বাল্যকালে তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে মাত্র ৯ বছর বয়সে মাতা ও ১২ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে এক নিরন্তর দুঃখ কষ্টের মাঝে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন। তাঁদের পরিবারে মসজিদের ইমামতির পেশা গ্রহণের ধারা ছিল। বড় ভাইয়েরা তাই গ্রামের মসজিদের ইমাম হিসেবে 'মুন্সি' নামে পরিচিত ছিল। মঈনুদ্দীন অল্প বয়সে পিতৃ-মাতৃ হারা হয়ে দুঃখ-কষ্টে পতিত হলেও স্বীয় মেধা, মনন ও প্রচেষ্টায় একজন স্বনির্মিত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন এবং শেষাবধি পারিবারিকভাবে গ্রামের মসজিদের ইমামতির ঐতিহ্য ভেঙ্গে কোলকাতা শহরে নিজেকে একজন সামাজিক মানুষ ও স্বশিক্ষিত সাধক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এ পর্যায়ে আসতে তাকে যে কী দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। তাই তিনি এ কালের না হয়েও এ কালের, সাধারণ হয়েও অসাধারণ, সামান্য হয়েও অসামান্য মানুষ। তাকে কোনভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই।

৬.
ছোটবেলায় বই পড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল মঈনুদ্দীনের। নতুন বইয়ের গন্ধে আর ছড়ার ছন্দ ঝংকারে উত্ফুল্ল হয়ে ওঠতেন। কলকাতায় এসে তিনি নিজ হাতে বই বাঁধাই করে সারি সারিভাবে সাজিয়ে রাখতেন সারা ঘর ভরে। আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে বইয়ের পাতা খুলে চোখ বুলান, গন্ধ শুকেন। নতুন বইয়ের গন্ধে মন আনন্দে ভরে ওঠে। লেখাপড়ার প্রতি মঈনুদ্দীনের ছিল আশৈশব বাসনা। বইয়ের নতুন নতুন ছড়া-কবিতার ছন্দ দোলা দেয় তাঁর কচি মনে। তিনি নিজেই বর্ণে বর্ণে গাঁথেন বর্ণমালা। চুপি চুপি লিখতে লাগলেন ছোট ছোট ছড়া-কবিতা। আর বিজনে নিজের মনে ভাবতে লাগলেন কবি হতে হলে ভাল লেখাপড়ার প্রয়োজন। সেই চিন্তা মনে পোষণ করে ভর্তি হলেন নৈশ বিদ্যালয়ে। দিনে কারখানার কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন আর রাতের বেলায় বই হাতে স্কুলে পড়তে যান। এই সময় বালক কবি মঈনুদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় হয় একই মহল্লার ছাত্র খন্দকার আবদুল মজিদ নামে এক ছেলের সঙ্গে। আবদুল মজিদ তিনিও ছিলেন একজন সাহিত্য সেবক। সাহিত্য নিয়ে আলাপ আলোচনায় একসময় দু'জন ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। দু'বন্ধু মিলে রাত জেগে হাতে লিখে প্রকাশ করেন 'মুসাফির' নামে একটি দেয়াল পত্রিকা। এই দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের পর মঈনুদ্দীন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তারপর তিনি তার লেখা পাঠাতে লাগলেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। ১৯২১ সালে তার লেখা 'খোদার দান' নামে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয় মাসিক 'সহচর' পত্রিকায়। পত্রিকার পাতায় ছাপাক্ষরে নিজের নাম দেখে কিশোর কবি আনন্দে হয়ে পড়েন আত্মহারা এবং সাহিত্য সাধনায় একাগ্রচিত্তে নিমগ্ন হন। তারপর তিনি নিজেই প্রকাশ করেন তার লেখা 'উচিত্ কথা' নামে ছোট্ট একটি কবিতার বই।

৭.
তিনি জীবন জীবিকার পাশাপাশি সাহিত্য সাধনায় নিমগ্ন হন। তার সাহিত্যিক জীবনের শুরু ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উত্তাল ১৯২০ -এর দশকের শুরুতেই। তখন সোভিয়েত বিপ্লব সম্পন্ন হয়ে বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সাহিত্যের মৌলসত্তা ও চরিত্রে এসেছে গণমুখিতার এক নতুন ধারা। নির্যাতিত-নিপীড়িতের জীবন ও স্বপ্নই হয়ে উঠেছে সাহিত্যের প্রধান বিষয়। কবি মঈনুদ্দীনের সাহিত্য জীবনের সূত্রপাতও এ ধারাতেই। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উচিৎ কথা; নামেই যেমনটি আভাস দেয়, ন্যায়ের পক্ষে রচিত পক্তিংমালা। তার পরবর্তী রচনা তরুণের ডাক -ও সময়ের দাবীকে প্রতিফলিত করেছিল। এক সময় তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসেন। কবি মঈনুদ্দীন নিবিষ্ট মনে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখতে থাকেন এবং কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা করে পরিচিত হয়ে স্নেহ-ধন্য হন। এমনিভাবে একদিন দৈনিক 'নবযুগ' পত্রিকা অফিসে গিয়ে বিদ্রোহী কবি নজরুলের সঙ্গে দেখা করে আলাপচারিতায় মুগ্ধ হন মঈনুদ্দীন। নজরুলের কাছে পেলেন তিনি অনুপ্রেরণা। প্রথম দেখেই নজরুলের কথা-বার্তা, চলন-বলন, পোশাক-আশাক সবকিছুই ভাল লাগে মঈনুদ্দীনের। কবি নজরুলকে ভালবেসে অনুকরণ করতে লাগলেন মঈনুদ্দীন। শুধু নজরুলের ব্যবহারিক বিষয়বস্তু অনুকরণ করেননি, মঈনুদ্দীন তার লেখালেখির বিষয়-আশয়ও নজরুলকে অনুসরণ করে লিখতে শুরু করেন। নজরুল ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা লেখার দায়ে কারাবরণ করেন। কবি মঈনুদ্দীনও নজরুলের পথ অনুসরণ করে মাত্র বাইশ বছর বয়সে ১৯২৩ সালের ১৩ মে ‘মোসলেম জগত্’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহ’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লিখে কারাবরণ করেন। লেখাটি ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিতে আপত্তিকর হওয়ায় তাকে ছ'মাসের কারাদণ্ড দিয়ে হুগলি জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম হুগলি জেলে ছিলেন অন্তরীণ। জেলে অন্তরীণ থাকাবস্থায় তাঁদের দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও নিবিড় হয়। নজরুল সান্নিধ্যে মঈনুদ্দীন হয়ে ছিলেন স্নেহধন্য। নজরুলের স্নেহসিক্ত হয়ে তিনি লিখেছেন 'যুগস্রষ্টা নজরুল'।

৮.
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কবি মঈনুদ্দীন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকার বাংলাবাজারে আল-হামরা লাইব্রেরি নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন যা আজ অবধি তাঁর স্মৃতি বহন করে চলছে। কবির স্ত্রীর নাম বেগম রহিমা খানম । তাদের সন্তান হলেন- খান মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন (মৃত); আসরাফ জাহান (মৃত); বেগম শামসুয জাহান নূর; খুরশিদ জাহান মিনু ; খান মুহাম্মদ শিহাব (মৃত)।

৯.
কবি মঈনুদ্দীন ছিলেন সমাজসচেতন একজন কবি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশে বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়, তা দেখে কবিহূদয় বিদীর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলিতে প্রায় প্রতিদিন যা কিছু ভেবেছেন, দেখেছেন, শুনেছেন তা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন ডায়েরির পাতায়। কবি মঈনুদ্দীনের লেখা ডায়েরিতে তাঁর ব্যক্তিগত, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় ঘটনা সর্বোপরি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার প্রস্ফুটন ঘটেছে। যা সময়ের দাবিতে একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের একাত্তরের ডায়েরি তাঁর রচনাবলির মধ্যে নতুন সংযোজন। তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে ডায়েরি লিখেছেন। তবে একাত্তরের ডায়েরি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গবেষকদের দৃঢ় বিশ্বাস ডায়েরির তথ্যাবলি পাঠকদের আলোকিত ও আপ্লুত করতে সক্ষম হবে। শুধু তা-ই নয়, মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের জন্য প্রেরণাদায়কও হবে। 

১০.
১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন শিশুতোষ কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত অনেক ছড়া এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মুখে উচ্চারিত হয়। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬), আমাদের নবী (১৯৪১), ডা. শফিকের মোটর বোট (১৯৪৯), খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৫১), আরব্য রজনী (১৯৫৭), বাবা আদম (১৯৫৮), স্বপন দেখি (১৯৫৯), লাল মোরগ (১৯৬১), শাপলা ফুল (১৯৬২)। তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ— পালের নাও (১৯৫৬), হে মানুষ (১৯৫৮), আর্তনাদ (১৯৫৮); উপন্যাস— অনাথিনী (সহচর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ১৯২৬), নয়া সড়ক (১৯৬৭); ছোটগল্প— ঝুমকোলতা (১৯৫৬)। তিনি যুগস্রষ্টা নজরুল (১৯৫৭) শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থও রচনা করেছেন।

১১.
খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), যুগস্রষ্টা নজরুল রচনার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০) এবং একুশে পদক (১৯৭৮) লাভ করেন। এছাড়াও নজরুল একাডেমি স্বর্ণপদক (১৯৭৪) লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

১২.
এবার শেষ করার চেষ্টা করি একটু খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনকে নিয়ে অন্যরকম স্মৃতিচারণ দিয়ে। ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দিনগুলি’র দ্বিতীয় কিস্তিতে স্মৃতিচারণমূলক রচনায় মননশীল প্রাবন্ধিক, সম্পাদক আহমাদ মাযহার (Ahmad Mazhar) লিখছেন, ‘ফরিদা আপার কথা কেন যে এতক্ষণ মনে এল না! প্রথম ক্লাসেই তাঁকে পেয়েছিলাম। প্রথম দিনের ক্লাসের পরেই ফরিদা আপা আমার সঙ্গে খুব আন্তরিক ভাবে কথা বলেছিলেন মনে পড়ে। কোথায় থাকি, কী পড়ছি এইসব খোঁজ-খবর নিলেন আমার। কথায় কথায় বললেন কবি খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন তাঁর চাচা। খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীনের নাম বলাতে আমি একটু চমকিত হলাম। কারণ তাঁর গল্প-সংকলন ‘ঝুমকো লতা’ আমি অনেক ছোটবেলায়, সেভেন-এইটে পড়বার সময়ই পড়েছিলাম। আম্মার সংগ্রহে বইটি ছিল। আমি ফরিদা আপাকে বললাম, “বইটা প্রকাশ করেছিল আলহামরা লাইব্রেরি।” আমার কথা শুনে ফরিদা আপাও বেশ মজা পেলেন। বললেন, “এইটা আমার চাচার নিজের প্রকাশনা-সংস্থা ছিল।”

আমি কবি মঈনুদ্দীনকে সমীহ করতাম তিনি নজরুলের বন্ধু ছিলেন বলে। ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ বইটিও আমার পড়া ছিল। তাছাড়া নজরুলের মৃত্যূত্তর শোকসভায়ও তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বক্তৃতা দিতে দেখেছিলাম। পরেও বাংলা একাডেমীর বইমেলার মঞ্চে তাঁর বক্তৃতা শুনেছি। সে-সব খবরও গড় গড় করে তাঁকে বললাম। আরেকটা মজার খবর দিলাম ফরিদা আপাকে, “‘ঝুমকো লতা’ বইটা আম্মা কীভাবে পেয়েছিলেন জানেন? আম্মাকে বিয়ের কনে হিসেবে দেখতে এসে উপহার দেয়া হয়েছিল!”

ফরিদা আপা খুব মজা পেয়েছিলেন আমার কথা শুনে। বললেন, “তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। আমার চাচার স্মৃতি তোমাকে দেখাবো।”

দুপুরে সেদিন ফরিদা আপা কেন্দ্রে আমাদের সঙ্গে ভাত খেয়েছিলেন বলে অনেকক্ষণ ধরে আমরা গল্প করতে পেরেছিলাম। আমি যে তখন যাত্রাবাড়িতে থাকি, ওখান থেকে পায়ে হেঁটে দয়াগঞ্জ-শরৎ গুপ্ত রোড নারিন্দা হয়ে লক্ষ্মীবাজারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ক্লাস করতে যেতাম সে-সব কাহিনি ততক্ষণে তাঁর জানা হয়ে গিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে আমি ঠিকই তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ফরিদা আপার সঙ্গে কেন্দ্রে যেদিন আলাপ হচ্ছিল তার কয়েকমাস আগে কবি মঈনুদ্দীন প্রয়াত হয়েছিলেন। ফলে তাঁর স্মৃতি তখনও ওই বাড়িতে তাজা ছিল।’

(তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের একাত্তরের ডায়েরি : মিয়াজান কবীর- দৈনিক ইত্তেফাক, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত