অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৩

১.
প্রখ্যাত কবি, ঔপন্যাসিক, জীবনীকার ও সম্পাদক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। অচিন্ত্যকুমার ১৯২৫ সালে তৎকালে সাড়া জাগানো ‘কল্লোল’ পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ত্রিশের দশকের সাড়া জাগানো সাহিত্য সাধকদের অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। তিনি ‘বিচিত্রা’য়ও বেশ কিছু দিন কাজ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি, কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য যে, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। 

২.
ছাত্র জীবনেই অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের অসাধারণ স্মৃতিচারণমূলক রচনা ‘কল্লোল যুগ’ পাঠক মহলের মতোন আমার মনেও বেশ সাড়া জাগায়। আমার প্রিয় বন্ধু জয়-এর (বর্তমানে ব্যাংকার আহমেদ রশীদ জয়) নানীর অনুপ্রেরণায় কলেজ জীবনে পড়া অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের এই বইটি এবং উপন্যাস ‘কাকজোৎস্না’ও আমাকে ভীষণই মোহিত করে রেখেছিলো। তাঁর লেখা জীবনীগ্রন্থ ‘কবি শ্রীরামকৃষ্ণ’ এখনো সুযোগ পেলেই পাঠ করে আলোকিত হই। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কথা মনে পড়লেই প্রয়াত নানীর কথাও আমার মনে জাগে। নানীর বয়সের অধিকাংশ মানুষকেই সাধারণত বিশ্বাসের ঘোরে পরলোক চর্চায়, ধর্মগ্রন্থ পাঠেই বেশি মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। আমার স্মৃতিতে তাই আমাদের নানী তেমনই একজন বিরল এবং আদর্শস্থানীয় পাঠক ছিলেন, যিনি রুচির পরিচয় দিতেন পাঠ নির্বাচনে এবং অন্য সবাইকে সুনির্বাচিত বই পড়তেও আগ্রহী করে তুলতেন। কলেজ জীবনে বন্ধু জয়দের বাসা আমার নিজেরই বাসা হয়ে উঠেছিলো ওদের সবার, নানী- মা-বাবাসহ ভাইবোনদের পরম ভালোবাসায়। তখন আমার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকায়, চাকুরির কারণে নানীকে অনেক বই এনে দিতে হতো। আর নানীর অনুপ্রেরণায় এভাবেই আমার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের বই পাঠ প্রেম গড়ে ওঠে। 

৩.
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তদের পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান মাদারিপুর জেলায়। তাঁর বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত নোয়াখালী আদালতের আইনজীবী ছিলেন। এই কারণে ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর আরেক সদস্য, সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর মতো অচিন্ত্যকুমারেরও শৈশব ও বাল্যজীবন কাটে নোয়াখালীতেই। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাও এখানেই সম্পন্ন হয়। সাত ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম অচিন্ত্যকুমারের জন্ম হয় সেখানেই। জনকের সাহচর্য ও সহযোগিতা তার শৈশব-কৈশোরের মানসগঠনে সহায়ক হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অকালেই তাকে হারান তিনি। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় অগ্রজ জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কাছে যান এবং সেখানকার সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২১ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে অচিন্ত্যকুমারের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এর ভিতর দিয়ে কল্লোল যুগের অন্যতম এই লেখকদের আবির্ভাব ঘটে। এই সময় থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তাঁর কাব্য চর্চা অব্যাহত ছিল। 

৪.
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে সাউথ সাবার্বান কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে আই. এ. এবং ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বি. এ. পাস করেন। ১৯২৫ সালে ‘কল্লোল’ পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম. এ পাশ করেন ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং বি. এল ডিগ্রী লাভ করেন ১৯২৯খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ক্রমে সাব-জজ, জেলা জজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।এই সময় থেকে চাকারির পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখেন এবং দ্রুত বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। বিচারবিভাগে চাকরির বদৌলতে তিনি বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে আসেন এবং এইসূত্রে অন্তরঙ্গ পরিচিতজনদের জীবনের নানাবিধি দিক তাঁর কাহিনীতে উঠে এসেছে নিপুণভাবে।

৫.
রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরে কল্লোল যুগের যেসব লেখক সাহিত্য জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন, তিনি তাদের অন্যতম। তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। উপন্যাসের আঙ্গিকে আবেগমথিত ভাষায় ধর্মগুরুদের জীবনী লিখেও তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’ (১৯২৮)। এটি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট উপন্যাস হিসেবে পরিগণিত। তাঁর লেখায় আধুনিকতা অতি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। ছোটগল্প রচনায়ও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সাধারণ মানুষের জীবনালেখ্য তাঁর রচনার মুখ্য বিষয়। কর্মজীবনে নানা শ্রেণির মানুষের সাথে যে অন্তরঙ্গ পরিচয় ঘটেছিলো সেসব চিত্র পাওয়া যায় তাঁর রচনায়। 

৬.
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য জগত্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) লাভ করেন। অচিন্ত্যকুমারের গ্রন্থসংখ্যা প্রায় সত্তর। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের তালিকা নিচে দেওয়া হল। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে: বেদে (১৯২৮),কাকজোৎস্না (১৯৩১),বিবাহের চেয়ে বড় (১৯৩১), প্রাচীর ও প্রান্তর (১৯৩২),প্রথম কদমফুল (১৯৬১)। জীবনীগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (চার খন্ড ১৯৫২-১৯৫৭),বীরেশ্বর বিবেকানন্দ (তিন খণ্ড, ১৯৫৮-৬৯)। স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ কল্লোলযুগ (১৯৫০)। গল্পগ্রন্থ: টুটা-ফুটা (১৯২৮), কাঠ খড় কেরোসিন (১৯৪৫), চাষাভুষা (১৯৪৭), হাড়ি মুচি ডোম (১৯৪৮), একরাত্রি (১৯৬১)। কাব্যগ্রন্থ : অমাবস্যা (১৯৩০), আমরা (১৯৩৩), প্রিয়া ও পৃথিবী (১৯৩৬), নীল আকাশ (১৯৪৯), পূর্ব-পশ্চিম (১৯৬৯), উত্তরায়ণ (১৯৭৪)। নাটক : একাঙ্ক নাট্য-সংকলন (১৯৪৫)। 

৭.
কান টানলে মাথা আসার মতো অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের নামটি উচ্চারিত হলেই ‘কল্লোল’ শব্দটি আমার মনের নদীতে ঢেউয়ের মতোই কলকল করে চলে আসে। মনের আকাশে মেঘ হয়ে ভাসে এই শরতে জন্ম নেওয়া অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র লেখা সেই কবিতার ক’টি লাইন। ‘কুটির’ কবিতায় অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত যেমনটি লিখেছিলেন,‘ঝিকিমিকি দেখা যায় সোনালি নদীর,/ওইখানে আমাদের পাতার কুটির।/এলোমেলো হাওয়া বয়,/ সারা বেলা কথা কয়,/কাশফুলে দুলে ওঠে নদীর দু’পার,/রূপসীর শাড়ি যেন তৈরি রূপার।’ এবার এগিয়ে যাওয়া যাক, কল্লোলের দিকে সামান্য নজর দেওয়া যাক। প্রথমেই মনে পড়ে একটি চিঠির কিছু কথা। কল্লোলের লেখক জীবনানন্দ দাশ ১৯৪৯ সালে ‘কল্লোল যুগ’ বের হওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে লিখেছিলেন, ‘তুমি Presidency Boarding-এ প্রায়ই আসতে বেড়াতে বেরুতাম তারপর চৌরঙ্গীর দিকে প্রায়ই। অনেক কথা মনে পড়ছে অনেক অনবলীন দিন মাস মুহূর্তের।’ ‘কল্লোল যুগ’ বলতে বাঙলা সাহিত্যের একটি ক্রান্তি লগ্নকে বোঝায় যখন বাঙলা কবিতা ও কথাসাহিত্যে আধুনিকতার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। কল্লোল নামীয় একটি সাময়িক পত্রের মাধ্যমে একদল তরুণ কবি-সাহিত্যিকের হাতে পাশ্চাত্য আধুনিকতার পত্তন হয়। অচিরেই অন্যান্য সাময়িক ও সাহিত্য পত্রেও এই আধুনিকতার অগ্নিস্পর্শ লাগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে ১৯৩০-এর দশক কল্লোর যুগের সমার্থক। কবি বুদ্ধদেব বসু এই নবযুগের অন্যতম কাণ্ডারী। যে সময়ে কল্লোলের আবির্ভাব তখন বাঙলা সাহিত্যের দিগন্ত সর্বকোণে কবি রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে প্রোজ্জ্বল। কল্লোল যুগের নাবিকদের মূল লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্র বৃত্তের বাইরে সাহিত্যের একটি মৃত্তিকাসংলগ্ন জগৎ সৃষ্টি করা। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত কল্লোল পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন দীনেশরঞ্জন দাশ ও গোকুলচন্দ্র নাগ। কল্লোল পত্রিকার আবহে দ্রুত অনুপ্রাণিত হয় প্রগতি, উত্তরা, কালিকলম, পূর্বাশা ইত্যাদি পত্রপত্রিকা। অন্যদিকে আধুনিকতার নামে যথেচ্ছাচারিতা ও অশ্লীলতার প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে এই রকম অভিযোগ এনে শনিবারের চিঠি পত্রিকাটি ভিন্ন বলয় গড়ে তোলে মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, নীরদ চৌধুরী প্রমুখের সক্রিয় ভূমিকায়। কবিতার ক্ষেত্রে যাদের নাম কল্লোল যুগের শ্রেষ্ঠ নায়ক বিবেচনায় প্রচারিত তাঁরা হলেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে। তবে কাজী নজরুল ইসলাম, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, সঞ্জয় ভট্টাচর্য প্রমুখ অনেকেরই ভূমিকা কোন অংশে খাটো করে দেখবার উপায় নেই। অচ্যিন্তকুমার সেন রচিত কল্লোর যুগ এ বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ।

৮.
কল্লোল মূলত একটি সাহিত্য পত্র যা অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে। কল্লোল ১৯২৩ থেকে ১৯৩৫ খ্রীস্টাব্দের ভেতরে সংগঠিত প্রভাবশালী বাংলা সাহিত্য বিপ্লবের সমনামিক। । কল্লোল নব্য লেখকদের প্রধান মুখপাত্র ছিল যাঁদের অন্যতম ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম, বুদ্ধদেব বসু। অনান্য সাময়িক পত্রিকা যেগুলো কল্লোল পত্রিকা কে অনুসরণ করে সেগুলো হলো – উত্তরা (১৯২৫), প্রগতি (১৯২৬), কালিকলম (১৯২৬) এবং পূর্বাশা (১৯৩২)। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে গোকুলচন্দ্র নাগ, দীনেশরঞ্জন দাশ, সুনীতা দেবী এবং মনীন্দ্রলাল বসু প্রমুখ কলকাতার হাজরা রোডে “চার শিল্পীর গোষ্ঠী” নামে একটি আড্ডার সূচনা করেন, সাহিত্য, ললিত কলা, সংগীত ও নাটক সৃষ্টি ও চর্চার জন্য। প্রথমে চার সদস্য একটি ছোটগল্পের সংকলন বের করেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে , নাম “ঝড়ের দোলা”। দীনেশরঞ্জন দাশ এবং গোকুলচন্দ্র নাগ এরপর ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে একটি সাময়িক পত্র বের করেন, নাম দেন কল্লোল। প্রতিদিন সাহিত্য আলোচনার আড্ডার জন্য দিনেশচন্দ্রের পটুয়াতলা লেনের বাড়ীটি নির্দিষ্ট ছিল।

৯.
কল্লোল সাহিত্যগোষ্ঠী সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক নবজাগরণের সূচনা করে। যদিও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিছক মানবপ্রেমী সাহিত্যের বৃত্ত থেকে দূরে সরে গিয়ে আধুনিক সাহিত্যের এই ঝড়কে সাধারণ পাঠকরা খুব সহজে মেনে নেয়নি। সেই সময়ের আর এক বিখ্যাত সাময়িক পত্র শনিবারের চিঠির সাথে “কল্লোল” গোষ্ঠীর বেশ কিছুবছর ধরে চলেছিল বিখ্যাত সাহিত্যের লড়াই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং কল্লোলে বেশ কিছু রচনা লিখেছিলেন; যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি নব্য সাহিত্যের এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও বাস্তবমুখী সাহিত্য কে মানুষের আদিম ইচ্ছার বশবর্তী করে আনার সারশূন্যতা তাকেও অস্বীকার করেন নি। এখানে উল্লেখ্য যে তিনি তাঁর “শেষের কবিতা” র অমিত রায় এর বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেকে অর্থাৎ মানবিক সাহিত্যস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের লেখার সমালোচনা করেছিলেন। কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক রা অন্যধারে সিগমুন্ড ফ্রয়েড এবং কার্ল মার্ক্স এর প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন। কল্লোল গোষ্ঠীর সাহিত্য আলোচনা সে সময়ের বহু বিখ্যাত প্রগতিশীল সাহিত্যিকদের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছিলেন এবিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। নিয়মিত না হলেও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এই গোষ্ঠীর আলোচনায় মাঝে মাঝে যোগ দিতেন। কল্লোল পত্রিকায় লেখার সময় কাজী নজরুলের বয়স ছিল পঁচিশ বছর, প্রেমেন্দ্র মিত্রের বয়স ছিল কুড়ির নিচে আর বুদ্ধদেব বসুর বয়স ছিল পনের। আর এভাবেই বাংলা সাহিত্য ইতিহাসে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত আর ‘কল্লোল’ স্মৃতিচারণ একইসাথে পথ চলে। 

১০.
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ‘উদ্বাস্ত’ কবিতার শেষের ক’টি চরণও স্মরণে আসে মাঝে মাঝে অবুঝ এ মনে। প্রিয় পঙক্তিমালা পাঠ করা যাক-
‘আরো আগে, ইতিহাসেরও আগে, ওরা কারা?
ঐ ইন্দ্রপুরী-ইন্দ্রপ্রস্থ থেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে
হিমালয়ের দিকে-
মহাভারতের মহাপ্রস্থানের পঞ্চনায়ক ও তাদের সঙ্গিনী
স্ব- স্বরূপ- অনুরূপা-
যুদ্ধ জয় ক’রেও যারা সিংহাসনে গিয়ে বসল না
কর্ম উদযাপন ক’রেও যারা লোলুপ হাতে 
কর্মফল বন্টন করল না নিজেদের মধ্যে,
ফলত্যাগ করে কর্মের আদর্শকে রেখে গেল উঁচু ক’রে,
দেখিয়ে গেল প্রথমেই পতন হল দ্রৌপদীর-
পক্ষ পাতিতার।
তারপর একে একে পড়ল আর সব অহঙ্কার
রূপের বিদ্যার বলের লোভের-আগ্রাসের-
আরো দেখাল। দেখাল-
শুধু যুধিষ্ঠিরই পৌছয়
যে হেতু সে ঘৃণ্য বলে পশু বলে
পথের সহচর কুকুরকেও ছাড়ে না।’

(তথ্য সূত্র : অনুশীলন, বাংলাপিডিয়া, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত