একাকিত্বের এপিঠ ওপিঠ

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:২৯

শফিক সুজন

তোমার ঘাড়ে চুম্বনের দাগ এখনো রগরগে। কি অদ্ভুত এক ভালোলাগা। মন ছুয়ে যায়। চোখ বন্ধ করলেই আকাশে উড়ি। এই বিশ্রী রকমের উষ্ণ অনুভূতি হটাৎ এসে গেল। তুমি আটকালেও না আমাকে। তবে এটাতে আমি অনুতপ্ত নই।

এসেছিলাম নিভৃত মনের অজান্তেই জেগে ওঠা এক নিষ্পাপ ভালোলাগার প্রকাশ নিয়ে। যা পেয়েছি তা হয়ত চাইনি, না হয় বেশিই পেয়েছি। ভালোবাসি তোমাকে!

তমাকে বলেছিল আরাফ। তমা খুলনা ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসিতে মাস্টার্স করেছে। খুব মেধাবী ছাত্রী সে না। কিন্তু কোচিং সেন্টারে ওর মামা থাকায় পড়াশোনা ঠিকঠাক করেছিল ৩ মাস। চান্স পেয়ে যায়। তারপর সে পড়াশোনায় ছন্দ ফিরে পায়। ইউনিভার্সিটিতে প্রেম করা হয়নি তমার। বাবার শাসনে স্কুল, কলেজ শেষ করে যখন পড়াশোনার ছন্দ ফিরে পেয়েছিল, তখন আর প্রেম করার ইচ্ছে জাগেনি। দেখতে দেখতে সময় কেটে গেছে। মাঝে যে কারো প্রেমে পড়েনি তা না। তবে তা অপ্রকাশিত থেকে গেছে।

পলাশ ইউনিভার্সিটির দুই বছরের বড়। বেশ স্মার্ট। দারুণ আবৃতি করত। তার আবৃতি শুনে নিজেও চর্চা শুরু করেছিল তমা। অনেকবার চেষ্টা করেছে তার কাছে আবৃতি শিখবে। কিন্তু নিজেকে আটকাতে না পারার বিশ্বাস নিয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু পলাশের প্রোগ্রাম কখনও মিস করেনি। পলাশের ফেসবুকে ফলো দিয়ে রাখলেও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় নি কখনও। এখনো মাঝে মাঝে প্রফাইলে গিয়ে দেখে। কিন্তু সেই অনুভূতি আর কাজ করেনা।

তমার মামাতো ভাই সবুজ। চার বছরের বড় হলেও একসাথে বড় হয়েছে। ছোটবেলার অনেক খুনশুটি আছে ওদের। একবার সবাই মিলে বেড়াতে গিয়ে মৌচাকে ঢিল দিয়ে ইচ্ছেমতো কামড় খাইয়েছিল। হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল ৪ দিন। খুবই দুষ্টু, চঞ্চল আর মেধাবী ছিল সবুজ। সবুজ তমাকে অসম্ভব পছন্দ করত। কিন্তু তমার চঞ্চলতা পছন্দ না। তমা শুধু ওর পাগলামি দেখত আর মজা নিত। বুঝতে দেয়নি কখনও। সবুজ বুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা শেষ করে স্কলারশিপ নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায়। যাবার আগে তমার ব্যাপারে সবুজের মাকে বলে গিয়েছিল। সে তমাকেই বিয়ে করবে। তমা কখনো হ্যা বলেনি। তমার পড়াশোনা শেষে মালয়েশিয়ায় স্কলারশিপ ব্যাবস্থা করলেও তমা রাজি হয়নি।

আট বছর হলো তমা স্কয়ার ফার্মায় চাকরি করে। পারফরম্যান্স ভালো। প্রমোশন পেয়েছে কয়েকটা। এখন সে বেশ সিনিয়র পজিশনে চাকরি করে। বিয়ে হয়েছে ছয় বছর। বাচ্চা নেই। তিন চার বছরেও বাচ্চা না হওয়ায় চাকরি ছাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু চাকরিটা ছাড়েনি। শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। বাড়িতে জাবেদ সাহেব আর তার ছোটবোন জুপিন। সাথে থাকেন জবার মা, পনের বছর ধরে। জাবেদ সাহেব তমার স্বামী। জুপিন এখানেই থাকে পুরান বাড়ি বিক্রির পর থেকে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে বংশালের পাঁচ তলা বাড়িতে। ওখানেই বেড়ে ওঠা। বিশেষ করে দোলযাত্রার কথা ভুলতেই পারেনা। দোলযাত্রা অনুষ্ঠানে মন পড়ে থাকে কিন্তু যেতে পারেনা। খোলা ছাদে ঘুড়ি উৎসব টানে ওকে। একটা ছেলে স্টান্ডার্ড ওয়ানে পড়ে। ছেলের নাম জোহান রব। বাবা রবিনের ও মায়ের নামের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছে। রবিন স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডায় গেছে। সবাইকে নিয়ে যাওয়ার প্রসেস চলছে, খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে।

জাবেদ সাহেবের ক্যাটারিং ব্যাবসা। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বন্ধুদের এক প্রোগ্রামে খাবার ডেলিভারি দিয়ে শুরু, তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। অন্যান্য ব্যাবসা এখন দেখাশুনা করেন না। জাবেদ ক্যাটারিং এক নামে চিনে পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে উত্তরা পর্যন্ত। জাবেদ সাহেব তমার থেকে এগারো বছরের বড়। সাত বছর আগে মা অসুস্থ থাকায় তড়িঘড়ি করেই বিয়েটা সারেন। বউকে দেখে শাশুড়ি খুব খুশি হয়েছিলেন। তার সবচেয়ে পছন্দের বিছা হার দিয়েছিলেন প্রথম দিনেই।

সবসময় সবকিছু পছন্দ না হলেও সিচুয়েশনে বাধ্য হতে হয়। তমার ব্যাপারটা তেমনই। নতুন চাকরি, বিয়ে, অসুস্থ শাশুড়ি, ব্যাস্ত স্বামী- সবমিলিয়ে একটা বড় ধাক্কা আসে। খুব সুন্দরভাবে সামলে নিলেও জাবেদ সাহেবের সাথে বনিবনাটা হচ্ছিলো না। পাঁচ মাস পরে শাশুড়ি চলে যাওয়ার পরে বড়ই একা হয়ে পরে তমা।

বই পড়ার নেশাটা বিয়ের আগের এক বছরে হয়েছে তমার। অফিস শেষে বই তার সঙ্গী। জাবেদ সাহেব বারোটা থেকে তিনটার মধ্যে বাসায় আসেন। তমা অফিস থেকে ফিরে খাবার টেবিলে রেখে বই নিয়ে বসে। বই হাতে নিয়ে ঘুমিয়ে যেত তবুও একা ডিনার করতে চাইত না। জাবেদ সাহেব বেশিরভাগ দিনই খেয়ে আসতেন। বইয়ের যে অংশটুকু মনে ধরত তা শোনানোর উত্তেজনা নিয়ে জাবেদ সাহেবের কাছে গেলেও বারবার ফিরে এসেছে। ক্লান্ত অবস্থায় বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে যেতেন। নিজের অব্যক্ত অনুভূতি গুলো আস্তে আস্তে স্তুপ হতে থাকে। দু একটা যে বলা হয়নি তা না। প্রথমবার যখন সিলেটে গিয়েছিল বেড়াতে তখনকার কথা। দি গ্রান্ড সুলতানে সকালের নাস্তা সেরে গলফ মাঠের সবুজ ঘাসে দুজন গা এলিয়ে বসেছিল। ভীষণ আবেগ আর আহ্লাদ নিয়ে বলেছিল কথাগুলো-

আমার খুব ইচ্ছে করে তুমি যখন বাসায় আসবে একটা লাল টকটকে গোলাপ নিয়ে আসবে। আমি দরজা খোলার পর ঘরে ঢুকেই গোলাপটা হাতে দিয়ে আমাকে বুকে জড়ায়ে নিবে। গোলাপের কাটায় আমার অনামিকা থেকে রক্ত ঝরবে। তুমি আমার আঙুল মুখে পুরে দিবে। কথাটা শুনে খুবই অবাক হয়েছিলেন জাবেদ সাহেব। কিছুই বলেননি। সাত বছর চলে গেলেও এটা ইচ্ছে হিসেবেই রয়ে গেছে তমার।

তমা খুব করে চাইত সকালে নাস্তা বানানোর সময় ঘুম চোখে জাবেদ সাহেব আসবে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে দুজনে ধোয়া ওঠা এক কাপ দুধ চা খেয়ে অফিসে বের হবে। প্রথম প্রথম খুব মন খারাপ করত। কিন্তু এখন আর হয়না।

ঠিক সকাল আটটা পনের মিনিটের সময় অফিসের গাড়ি আসে বাসার সামনে। আধা ঘন্টার রাস্তা। সব ঠিকঠাক থাকলে নয়টার আগেই অফিসে ঢোকে তমা। সে অফিসে কখনও দেরি করেনা। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করায় সবাই তাকে ভালোভাবেই চিনে। খুব সুনাম আছে তার। অফিসের কাজে মাঝে মাঝে বাইরে যেতে হয়। বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়ায় অনিহা আছে। বন্ধুরা আশেপাশে থাকলেও যোগাযোগ নেই। উজ্জ্বল শ্যামল গায়ের রঙ। বেশ স্মার্ট হওয়ায় একবার দেখলে চোখ আটকায়। সাদা আর নীল রঙ ওর পছন্দ। মিষ্টি ভাষি। বাবা মা নেই। বিয়ের চার বছর পর বাবা মারা যায়। ঠিক একমাস পরে মা ও চলে যান। একমাত্র বড় ভাই খুলনার বাড়িতে থাকেন।

ডাল পুরির সাথে তেতুলের টক ভীষণ পছন্দ বলছিল আরাফকে। এটা দেখলে লোভ সামলাতে পারেনা। ভরপুর খাওয়ার পরে দু চারটা ডালপুরি খেতে পারে তমা। আরাফ হলো সিমটেক আইটি সলিউশন এর আইটি ইনচার্জ। যে তমার সকল আইটি সাপোর্ট দেয়। কাজের সুবাদে আরাফের সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয়। আরাফ কাজে যাই হোক, একটু চটপটে স্বভাবের কিন্তু দারুন স্মার্ট। ভীষণ পোশাক সচেতন। গুছিয়ে কথা বলে। দুই বছর হয়েছে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে। এটাই ওর প্রথম চাকরি। ফার্মগেটে ব্যাচেলর হোস্টেলে থাকে। নিজের সিমসাম চলাফেরার জন্য সবার কাছে পরিচিত। শ্যানেলের পারফিউম ওর পছন্দ। বলা যায় এটা তার শখ। তবে ভীষন নেশায় মত্ত সে। তার অবসরের একমাত্র সঙ্গী। স্কুল থেকে ও এই নেশায় পড়েছিল। তাতে ঘি ঢেলেছিল ওর ছোট মামা। কাছাকাছি বয়সের হওয়ায় বেশি সখ্যতা ছিল ওদের। একসময় আবদারের জায়গা হয়ে ওঠে ওর ছোট মামা। ছোট মামার উৎসাহ পেয়ে সে ফ্রী ফায়ারের ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার হয়ে উঠছিল। এখন কমলেও বের হতে পারনি। সময় পেলেই নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে। হলে যেয়ে মুভি দেখাটা রেগুলার রুটিনের মতই।

আমি চলে গেলে তুমি কি নিয়ে থাকবে ভাইয়া? জোহান ছিল, ওর সাথে তোমার সময় কাটত। তোমার কপালে আর সুখ আসবে না। বিয়ের পর এতগুলো বছর চলে গেল। কি দিল তোমাকে? কতবার বললাম কিছু একটা ব্যাবস্থা করো। একটা বন্ধা মেয়ে মানুষ তোমাকে প্রতি বছর অন্তর প্রোমোশন এনে দিয়েছে তাই নিয়ে তুমি নাচো। তোমার এত সম্পদ এতিমখানায় দান করে দিও। আমার ঘেন্না লাগে বাচ্চা না নিয়ে এমনে শরীর দেখায় বেড়ানো মানুষ দেখলে। আমার তো মনে হয় বউয়ের কথায় তুমি উঠো বসো। আমার কি? আমি চলে যাওয়ার পর বুঝবা। আর ভাবি তোমাকেও বলি তুমি কি ভেবেই নিছ সবুজ ছাড়া বাচ্চা নিবানা? নাস্তার টেবিলে জুপিনের কথার মাঝেই জাবেদ সাহেব বললেন বাসায় এসে তোমার মুখ দেখতে আমার অসহ্য লাগে। বিরক্তিকর হয়ে গেছ তুমি। এসব কথা গায়ে সহ্য হয়ে গেলেও তমা সেদিন নিজেকে সামলাতে পারেনি। জুপিন তুমি কি শিওর তোমার ছেলেটা রবিনের? এরপর দুইদিন তমা অফিসে যায়নি। এইরকম বীভৎস পরিস্থিতি এখন আর মন খারাপের কারণ হয়না। মনটা পাথর কঠিন হয়ে গেছে। বন্ধুত্বের অভাবে একসময় ভেতরটা ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে যেত। এখন নিজেকে সামলাতে শিখে গেছে। এখন আগুন রাঙা কৃষ্ণচূড়া দেখেও মন পুলকিত হয়না।

আজ তমার জন্মদিন। এইদিনটা তমা একটু অন্যরকম কাটায়। পছন্দের ড্রেস পরে নিজের মত করে সাজে। সাদা এক পাউন্ডের কেকের উপরে শুধু তমা লিখা থাকে। একগাদা পছন্দের চকলেট আর একটা টিউলিপ রাখে কেকের চারপাশে। ঘরে ডিমলাইট জালিয়ে তানপুরা শুনে। জন্মদিন একাই কাটে বিয়ের পরের বছর থেকে। আজ তমা সাদা একটা পার্টি ড্রেসের সাথে গোল্ডেন কালারের জুতা পরেছে। লাল টকটকে লিপস্টিকের সাথে ব্লু কালারের লেন্স লাগিয়েছে। সাদা ড্রেসের গোলাপি ফুলের সাথে মিলিয়ে কানের দুল পরেছে। গলাটা খালি। চোখ ধাধানো সুন্দর লাগছে তমাকে। এই সাজটা নতুন নয়। প্রতিবছর এই দিনের অপেক্ষা করে। আজ আরাফকে আসতে বলেছে। কেন যেন আজ তমার মনটা ছটফট করছে। শতবছরের অতৃপ্ত তৃষ্ণা ওর ঠোটে। এক অদ্ভুত অস্থিরতায় হটাৎ শরীরে বিদ্যুৎ চমকে যাচ্ছে। নিরবতায় ঘড়ির কাটাটার শব্দও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল। তানপুরার মিউজিক শুনতে মন চাচ্ছে। আজ ক্ষুধা নেই। স্থির হয়ে বসতে পারছে না। বারবার ভাবছে কলিংবেলটা বাজে না কেন। হটাৎ মনে প্রশ্ন জাগে এই অস্থিরতা কি কারো অপেক্ষার? আগে তো এমন লাগেনি কখনো। শূন্যতায় কুকড়ে থেকেছি। তাইলে কি আরাফ! আমি আরাফের জন্য অপেক্ষা করছি? ও তো আমার থেকে সাত বছরের ছোট। আমি ওকে পছন্দ করি। ওর কথা বলা, হঠাৎ দুষ্টুমি করা, ওর স্মার্টনেস, ওর পোশাক আমার ভালোলাগে। কিন্তু সেটা তো কখনো অন্যভাবে চিন্তা করিনি। তাহলে আজ কেন এমন লাগছে? কেন আজ একবার বুকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা ভাগাভাগি করে নিজেকে শান্ত করতে ইচ্ছে করছে? জাবেদকে নিয়ে তো কখনো এমন লাগেনি। কেন নিজেকে স্বপ্ন সাগরের ভেলায় ভাসমান এক স্বপ্নচারীনী মনে হচ্ছে।

প্রেমে মাতাল পদ্ম আমি
শূন্য বুকে তৃষ্ণার্ত ডাহুক,
অবলীলায় নিংড়ে নিক
আমার সবটুকু; আমাতে মিশে থাকুক!!

হঠাৎ কথাগুলো মুখ থেকে বেরিয়ে এল তমার। দাঁড়িয়ে গেছে তমা। নিজেকে বিশ্বাস হচ্ছেনা আর। জীবনে কখনও ভুল করেনি তমা। তবুও নিজেকে থামাতে পারছেনা। এক চুমুকে এক গ্লাস পানি শেষ করে ফ্লোরে বসে পরেছে। বিছানায় হেলান দিয়ে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। চোখে কিছু দেখছেনা। কিছু ভাবতে পারছে না। চুপচাপ বসেই আছে সে।

আরাফ ফুলের দোকানে। চিন্তা করছে তমা কোন ফুল পছন্দ করে জানিনা তো। অর্কিড দেখে চোখ আটকালো। অনেক সময় ভাবছে। ঠিক কি নেওয়া উচিৎ খুঁজে পাচ্ছে না। উনিশ বিশ বছরে ছেলেটা জিজ্ঞেস করল স্যার কি ফুল খুঁজছেন?

একটা বন্ধুর জন্মদিনের জন্য নিব।
আমি কি আপনাকে কোন ফুল সাজেস্ট করব?
কথা শুনে মনে হলো সে অভ্যস্ত। আস্থা রাখা যায়।
হ্যা। বলোতো কোনটা ভালো হবে।
স্যার টিউলিপ, অর্কিড, ম্যাগনোলিয়া আর রক্তগোলাপ দিয়ে একটা তোড়া বানিয়ে দেই। ভালো লাগবে। সবগুলো ফুল আলাদাভাবে দেখল আরাফ। পছন্দ হয়েছে আরাফের। তোড়াটা বানানোর পর অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। বেলজিয়ামের ফ্লোরেন ব্র‍্যান্ডের চকলেট নিয়েছে। যেহেতু চকলেট পছন্দ তমার। অন্যান্য দিনের মতই আজও লাইট ব্লু রঙের স্যুট পরেছে। শ্যানেলের allure homme পারফিউম দিয়েছে। তমার বাসা চিনে সে। আগে কখনও বাসার ভেতর যায়নি কিন্তু অনেকবার বাসার সামনে থেকে নিয়ে এসেছে।

ফুলের তোড়া আর চকলেটের বক্স হাতে তমার দরজায় আরাফ। তমার প্রতি আরাফেরও একটা ভালোলাগা অনুভূতি হয়। এজন্যই তমাকে হাসিখুশি দেখতে ভালোলাগে। কলিংবেলটা বাজালো। বুকের ভেতর চমকে উঠেছে তমার। কি করবে ভাবতে পারছে না। জবার মাকে দরজা খুলতে বলবে? না। জবার মা তো আজ তিনদিন বাসায় নেই। জবার বাচ্চা হয়েছে সেখানে গেছে। তাহলে? শরীর অনেক ভারী হয়ে গেছে। পা উঠতে চাইছে না। নিজেই দরজা খুললো। আরাফকে ফুল হাতে দুষ্টু হাসিমাখা চেহারা দেখে একটু সামলে নিল নিজেকে। ভেতরে এসেছে ওরা। ঘরের ভেতর ঢুকে অবাক হয় আরাফ। এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশে প্রথম। ভীষণ ভালো লাগছিল ওর। তমাকে দেখে চোখ সরাতে পারছিল না। পরীর মত সুন্দর লাগছে তমাকে। অপলক দৃষ্টিতে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কথা বলতে পারছে না। নিরবতা ভাঙে এটা তোমার জন্য- বলল আরাফ। ফুলের তোড়া হাতে নিয়েই উহ বলে চিৎকার দিয়েছে। বা হাতে ফুলের তোড়াটা নিয়েছে তমা। অনামিকা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আরাফ এক মুহূর্ত দেরি না করে তমার আংগুল মুখে নিয়ে নিয়েছে। তমা এই মুহূর্তের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করে ছিল। নিজেক আর সংবরন করতে পারল না। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। ভীষণ শক্ত করে। যেন কেউ এই বুক থেকে ওকে আলাদা করতে না পারে। আরাফ উষ্ণতা অনুভব করে। নিজের অজান্তেই তমার ঘাড়ে চুমু দিতে থাকে। তখনও এই চুমুর তীব্রতা বোঝেনি। তমা নিজেকে সামলে নেয়। তানপুরার সুর বাজিয়ে দুজন মুখোমুখি বসে।

সাহস২৪.কম/এমআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত