বুদ্ধিমান কৃষক ও তার সাত ছেলে

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ১৩:১৪

জহির টিয়া
ছবি : সংগৃহিত

এক কৃষকের সাতটি ছেলে ছিল। সেই কৃষকের বেশ কয়েক বিঘা জমিও ছিল। কিন্তু জমিগুলোতে ভালমতো ফসল হতো না। এজন্য  সংসারে খুব অভাব-অনটন ছিল। ছেলেরাও তেমন কাজ-কাম পেত না। তাই তারাও দিনদিন অলস হয়ে যাচ্ছিল। এই নিয়ে কৃষকের মনে সুখ ছিল না। 

একদিন কৃষক কাউকে কিছু না বলে বাড়ি হতে বেরিয়ে গেলেন। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পাঁচদিন পর, বাড়ি ফিরে এলেন। মাথায় একটা বস্তা নিয়ে। একে একে ছেলেরা বাড়ি এলো। কৃষক বাড়ির উঠোনে একটা ভাঙাচোরা কাঠের চেয়ার পেতে  বসলেন। এরপর ছেলেদের ডাক দিলেন। সবাই এসে তার কৃষক বাবাকে ঘিরে ধরল। 

তখন কৃষক ছেলেদের উদ্দেশ্যে বললেন, 'আমি এই কয়েকদিন বাইরে থাকার কারণ কি তোমরা বলতে পারবে?' সবাই না-সূচক মাথা ঝাঁকালো। 

এবার কৃষক বলতে লাগলেন, 'তোমরা দিনদিন অলস হয়ে যাচ্ছ। সেটা হয়তো পুরো তোমাদের দোষ নয়। কিন্তু এভাবে চললে তো আর সংসার চলবে না। তোমাদের কাজের সন্ধানে বের হতে হবে। অথবা নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব নয়।' 

কৃষকের বড় ছেলে তার বাবার কথা শুনে বলল, 'বাবা, আমরা কাজ করতে চাই। কিন্তু কোনো কাজই তো পাচ্ছি না।' 

'আমি জানি, তোমরা এই কথাই বলবে। তাই তো আমি নিজেই তোমাদের কাজের ব্যবস্থা করার জন্য বাইরে গেছিলাম। 

অনেক কষ্ট করে এইগুলো বহন করে নিয়ে এলাম।' টুকরো টুকরো করে কাটা এক বাণ্ডিল আখ দেখিয়ে কৃষক বললেন।

কৃষকের ছেলেরা বলল, 'বাবা, এইগুলো তো আখের খণ্ড ! এইগুলো পেলে কোথায়? দাও দাও একখানা খেয়ে দেখি।' 

'শুধু এক বাণ্ডিল নয়, বস্তা ভরতি আরও অনেক বাণ্ডিল আছে। এইগুলো তোমাদের খাওয়ার জন্য না। খেতে পারবে তবে এগুলো জমিতে লাগিয়ে বড়ো হবে তারপর। বুঝেছ?' 

'কিন্তু এগুলো তো আমাদের অঞ্চলের জমিতে হয় না।' 

'হবে হবে। কেন হবে না? তোমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে এই আখ দিয়েই করতে হবে। তার জন্য তোমাদের সাত ভাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। জমির মাটি বেশ ভালোভাবে আলগা করতে হবে। 

তারপর এই আখগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে মাটির বুকে রেখে মাটি চাপা দেবে। তারপর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। 

আশা করি, আগামী বছর এখান হতে ভালো কিছু পাবো। এই বছর জমির যতটুকুতে আখ জন্মিবে, তারপরের বছর এইগুলো হতে বীজ তৈরি করে বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।' কৃষক ছেলেদের উদ্দেশ্য বললেন। 

কৃষকের ছেলেরা এটাকে খুব আনন্দের সহিত গ্রহণ করল। সবাই আশেপাশের পতিত জমিগুলোর মাটি কোদাল দিয়ে আলগা করতে লাগল। এরপর আখের টুকরোগুলো রোপণ করল। কিছুদিন যেতেই আখের গিটগুলো হতে চারা বের হতে লাগল। তা দেখে সবার মনে আনন্দ বয়ে গেল। আখ ক্ষেতের পরিচর্যা শুরু করে দিলো। 

আগাছা পরিষ্কার, সেচ দেওয়া, গোবর ও অন্যান্য সার দিলো। ধীরে ধীরে সবুজ হয়ে ওঠল আখ ক্ষেত। দেখতে দেখতে নির্দিষ্ট সময়ে আখ খাবার উপযোগী হয়ে গেল। 

এরপর কিছু আখ কেটে বিক্রি করে ভালো অর্থ সংগ্রহ করল। আর গতবারের চাইতে বহুগুণে আখের বীজ তৈরি করল। তারপর অন্য জমিগুলোতে আখ রোপণ করে দিলো। 

এভাবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই কৃষক তার ছেলেদের নিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরে আনলেন। কৃষকের ছেলেরাও বেকার জীবন হতে মুক্তি পেল। 


শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত