বঙ্গোপসাগরে ইউরেনিয়াম থোরিয়াম ক্লেসহ বিপুল খনিজের সন্ধান

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৪

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের অগভীর ও গভীর সমুদ্রের তলদেশে ইউরোনিয়াম ও থোরিয়ামর মতো অতি মূল্যবান খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।   

অপরদিকে অগভীর সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ ‘ক্লে’-এর সন্ধান মিলেছে। এটি সিমেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ভারী খনিজ বালুর সন্ধান মিলল। এ বালু ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটসমৃদ্ধ।
সম্প্রতি ব্লু ইকোনমি ও নীল সমুদ্রের অর্থনীতির সম্ভাবনা-সংক্রান্ত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের  করা একটি প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার পেয়েছে। এ বিশাল অঞ্চলে কী পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্লু ইকোনমি বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এ খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে পারলে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যাবে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সমুদ্রের পাশেই মিয়ানমার এরই মধ্যে বড় গ্যাসক্ষেত্র পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সমুদ্র ভাগেও বড় ধরনের গ্যাসের মজুদ আছে। সরকার গত আট বছরে সাগরে তেল-গ্যাস উত্তোলনে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানিকে ব্লক ইজারা দিলেও কাজে ধীরগতির কারণে এখন পর্যন্ত তেমন সাফল্য আসেনি।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেট্রো সেন্টারে আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি সেল’ উদ্বোধন উপলক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সমুদ্রে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, খনন ও আহরণ একটি বড় ধরনের কারিগরি বিষয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকমতো অনুসন্ধান ও জরিপ চালাতে না পারলে জাতীয় সম্পদের অনেক অপচয় হবে। ২০১৯ সালের আগেই সমুদ্র অর্থনীতিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী  আরও বলেন, সাগরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে একটি জরিপ জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া দেড় বছর ধরে ঝুলছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেও এর সুরাহা করতে পারছে না। এ জাহাজ আনার বিষয়টি সমন্বয় করাই হবে ব্লু ইকোনমি সেলের প্রথম কাজ। 
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সন্ধানে পাওয়া ইউরোনিয়াম ও থোরিয়াম বাণিজ্যিকভাবে আহরণ সম্ভব কি না তা এখন খতিয়ে দেখছি আমরা। এ জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা এখন বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।  

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ভারি খনিজ বালু আছে। এই বালু ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটসমৃদ্ধ। বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ জরিপে  সাগরের ৮০ থেকে ১১০ মিটার গভীরতায় এই মূল্যবান সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অগভীর সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট, ভানাডিয়াম, মলিবডেনাম ও প্লাটিনামে গঠিত ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট এবং তামা, সিসা, জিংক, কিছু পরিমাণ সোনা ও রুপা দিয়ে গঠিত সালফাইডের অস্তিত্ব আছে। এসব অতি মূল্যবান সম্পদ সমুদ্রের ১৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার গভীরে রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের তলদেশ শুধু অপার খনিজ সম্পদেই পূর্ণ নয়-৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরতায় এক ধরনের ক্লের সন্ধান পাওয়া গেছে। অগভীর সমুদ্রের এই ক্লে উত্তোলন করা গেলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে বিপ্লব ঘটে যাবে। কারণ ক্লে সিমেন্ট উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল।
দেরিতে হলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন যাত্রা শুরু করা এ সংস্থা সাগরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের সমুদ্রসীমা এখন বিশাল। সাগরে কী আছে তা এখনো আমরা ভালোভাবে জানি না। আগে মানসম্পন্ন জরিপ চালাতে হবে। সমুদ্রসম্পদ নিয়ে সামনে কাজ অনেক বাড়বে। এ সেলকে পরে বিভাগে রূপ দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. মমিন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও ব্লু ইকোনমি সেলের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।