এক মণ ধানের দামেও মিলছে না শ্রমিক

প্রকাশ : ১২ মে ২০২২, ১৮:২১

ফেনি প্রতিনিধি

উপকূলীয় নদী বেষ্টিত ফেনীর সোনাগাজীর কৃষকদের মাঝে বোরো ধান ঘরে তোলা তোড়জোড় চলছে। বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই চলছে এই বোরো ধান ঘরে তোলার কাজ। তবে এখনও ৭০ শতাংশ ধান জমিতে রয়েছে যা কাটার উপযোগী। এর মধ্যেই বৃষ্টি সেই সাথে দেখা দিয়েছে চরম শ্রমিক সংকট। এতে সময় মতো ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। এক মণ ধানের দামেও মিলছে না একজন শ্রমিক। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার কৃষককে।

পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। কিন্তু শ্রমিকদের জনপ্রতি এক হাজার থেকে ১২শ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। অন্যান্য খরচ যেমন জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচতো আছেই। এতে আমার ৪০ শতক জমিতে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

এদিকে ধান কাটা শ্রমিক কবির আহাম্মদ বলেন, ‘আমি ধান কাটার জন্য দৈনিক ১ হাজার টাকা করে পাঁচ দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি আবুল খায়েরের সাথে (মালিক)। দুপুরে-রাতে ভাত খাওয়া ও সকালের নাশতাও তিনি বহন করবেন।

পরশুরাম ডাকবাংলা মোড় এলাকার ধান ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুম জানান, তিনি প্রতিমণ ধান ৬৮০ টাকা করে কিনছেন। ধানের চাহিদা না থাকায় দাম হঠাৎ কমে গেছে। এ ছাড়া শ্রমিক খরচও ওই টাকা থেকে বাদ যাবে।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আবুল কাশেম ছয় জন শ্রমিক নিয়ে বোরো ধান কাটছেন। তিনি বলেন, ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া খুব কষ্টের। পেলেও তাদের মজুরি উচ্চমূল্যের। তাই আগামী মৌসুমে আর বোরো চাষাবাদ করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা জানান, পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে।

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেব রঞ্জন বণিক জানান, বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।

ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারেক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর ৩০ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে তারা সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে দামটা ভালো পান। একই সঙ্গে শ্রমিক সংকট থাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কৃষকদের সহজভাবে ধান কাটা, মাড়াই, বস্তা প্যাকেটজাতকরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিক সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে সমতল ভূমিতে ৫০ শতাংশ ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ সরকারিভাবে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।

সাহস২৪.কম/এএম/এমআর/এসএ.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত