রাজশাহী ইন্সটিটিউট অব বায়োসায়েন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১৬:২৪

সাহস ডেস্ক

ইন্সটিটিউট ভবনের ভাড়া বাকি রাখা, শিক্ষকদের বেতন বাকি, লাইব্রেরি ও ল্যাবের সরঞ্জাম ক্রয়ের বরাদ্দকৃত টাকা লোপাট, অদক্ষ ও অযোগ্য ঘনিষ্ঠজনদের শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান রাজশাহী ইন্সটিটিউট অব বায়োসায়েন্সেস এ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে এসব অনিয়ম রোধে ৬ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো, কার্যকর একটি গভার্নিং বডি গঠন করা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অবৈধ হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি রোধ করা, স্থায়ী ক্যাম্পাস এবং স্বাভাবিক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, যোগ্য ও পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং ল্যাব, লাইব্রেরীর পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা এবং সেমিস্টার ফি নিয়ে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান সারুল বলেন, ভর্তির শুরুতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার নামে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে উৎসাহিত করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানকে আই.বি.এ এর মতোই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইন্সটিটিউট হিসেবে উপস্থাপন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ব্যতীত সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে ভর্তি কার্যক্রম থেকে শুরু করে আমাদের ভাইভা রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতালের পাশে অবস্থিত একটি ভবন যা বর্তমানে আলো আশা স্কুল নামে পরিচিত, সেখানে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিপরীত পার্শ্বে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে আমাদের ক্লাস শুরু করে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বিভিন্ন আশার বাণী শুনিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করে। যখন আমাদের সামনে তাদের প্রতারণাপূর্ণ আচরণ দৃশ্যমান হয় তখন আমরা প্রতিবাদ করি এবং আমাদের প্রতিবাদের ফলে উনারা আমাদের আশ্বাস দেয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের পাশে একটা জায়গা কেনা হয়েছে যার নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করেই ইন্সটিটিউট টিকে স্থায়ীভাবে সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে। কিন্তু বছর পেরোলেও আমরা এমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখিনি তাদের।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের ৪ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রয়েছেন। যারা হলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান প্রফেসর ড.এফ.এম আলী হায়দার, ড. হাফিজুর রহমান, ড.এম মঞ্জুর হোসেন এবং বোটানি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাবির সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহানের পুত্র মুশফিক সোবহান। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ৪ জন হলেও ইন্সটিটিউটের কার্যক্রমে আমরা ড.এফ এম আলি হায়দার এবং ড. হাফিজুর রহমান স্যারের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখতে পাই।

সারুল বলেন, তাদের এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত চলাকালীন সময়েই গভার্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে ড.মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ড. হাফিজুর রহমান এবং এফ এম আলী হায়দার দুর্নীতির সুযোগ না থাকায় এবং উনাদের অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটায় তারা বিভিন্নভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে অপমান ও লাঞ্ছিত করে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিতে বাধ্য করে পুনরায় ড. হাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রিন্সিপালের আসনে বসেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ ড. হাফিজুর রহমানের তত্ত্ববধানে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। শিক্ষকদের কয়েকমাসের বেতন বাকি এবং নিয়োগ আটকে রাখা, ইন্সটিটিউট ভবনের ভাড়া বাকি রাখা, দক্ষ ও যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও ঘনিষ্ঠজনদের শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, লাইব্রেরি ও ল্যাবের সরঞ্জামের রশিদ মোতাবেক পর্যাপ্ত পরিমাণে বই ও যন্ত্রপাতি না থাকা। ড. এফ এম আলি হায়দার এবং ড. হাফিজুর রহমান পরিকল্পনা করে ২০২০-২১ সেশনে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের আবেদন ফি ব্যক্তিগত একাউন্টে গ্রহণ করে এসব টাকা আত্মসাৎ করে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই উনারা বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত একাউন্ট ব্যবহার করে সেমিস্টার ফি গ্রহণ করে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবি মিথ্যা বলবো না। নতুন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আমাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন ব্যাচ ভর্তি করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা এবছর কোনো নতুন ব্যাচ ভর্তি করিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সুলতান-উল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সেহেতু শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার সুনিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক পাঠদান কর্মসূচি পালন করে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম সুনিশ্চিত করতে খোঁজ খবর রাখা আমাদেরও দায়িত্ব। তাই তাদের পাঠদান কার্যক্রম ও আর্থিক বিষয়টা দেখভালের জন্য ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত