সংঘর্ষের ষষ্ঠদিনে দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, আসছেন না শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ১৮:৩৪

সাহস ডেস্ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ছয় দিন পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বিনোদপুর (ঘটনাস্থল) বাজার। ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। কিন্তু নেই ক্রেতা সমাগম। শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিনোদপুর বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের পাঁচদিন পর্যন্ত বিনোদপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সংঘর্ষের ছয়দিন পর বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের পুড়ে যাওয়া ও ভেঙে যাওয়া দোকানপাট মেরামত করেছে। মালামাল নিয়ে বসেছেন বিক্রির আশায়। কিন্তু সেখানে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিনোদপুর বাজারে কেনাকাটা করে থাকেন। তবে সংঘর্ষের দিন থেকে তারা বিনোদপুরে বাজারে যাচ্ছেন না। অনেকেই বিনোদপুর বাজারকে বয়কটের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তারা কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন ক্যাম্পাসের ভেতরের স্টেশন বাজারকে। অনেক শিক্ষার্থী আবার উদ্যোক্তা হয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কাঁচাবাজার বসিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনোদপুর বাজারে প্রায় দুই শতাধিক দোকান আছে। এর মধ্যে বাজারের অলিগলিতে এখনো অনেক দোকান বন্ধ। খোলা দোকানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সবজি, মাছ ও মুরগির। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাজারে না যাওয়ায় বেচাকেনা নেই তাদের।

বিনোদপুর বাজারে মো. বাদশাহ ও আলাউদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি খাঁচায় কিছু মুরগি নিয়ে বসেন। দোকানি বাদশাহ বলেন, সকাল থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাত থেকে আটটি মুরগি বিক্রি করতে পেরেছি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আসেননি। যারা কিনেছেন তারা সবাই বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজার সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই এটাকে সমাধান করতে হবে। শিক্ষার্থীরাই এ বাজারের প্রাণ। তাদের সঙ্গে আমাদের আগের সম্পর্ক ফিরে আসুক এটাই প্রত্যাশা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষাও চলছে। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাজে মন দিচ্ছেন। পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজও চলছে।

বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় মেস মালিকদের সঙ্গে বসেছি আমরা। সেখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে বিনোদপুরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসার কথা আছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসচালকের তর্কাতর্কির জেরে নগরের বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের সূত্রপাত। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং রাবার বুলেটে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের সময় একটি পুলিশ বক্স ও রাস্তার পাশের দোকানগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মতিহার থানা পুলিশ ও রাজশাহী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে তিনটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১১০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত