অভিনয়ে বৈচিত্রময় ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২২, ০৫:৩২ | আপডেট: ২৯ মে ২০২২, ১৭:১৮

অনলাইন ডেস্ক

 

বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। কবিদের কবি আবুল হাসানের মত তাঁকে বলা হতো অভিনেতাদের অভিনেতা। নির্লিপ্ত এ অভিনেতার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত ছিলেন না এমন কেউ নেই। প্রয়াত এই বৈচিত্রময় অভিনেতার আজ জন্মদিন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে আলোড়ন তোলা অনন্য এই অভিনেতা ২৯ মে এই দিনে পৃথিবী আলোকিত করেন। 

অভিনয়ের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। গত দশকের শুরুতেও বাড়ি বাড়ি টিভির প্রচলন ঠিক ঠাক হয়ে ওঠেনি। দেশীয় চ্যানেলগুলোতে নিয়মিত প্রচার করা হত বাংলা সিনেমা ও নাটক। ছোট হোক বা বড়; খলনায়কের বেশে হাসিখুশি প্রাণোজ্জ্বল একজন মানুষ ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। 

মনকাড়া অভিনয়ে বাংলার মানুষের মনে জায়গা করে নেন তিনি। দর্শকেরাও তাঁকে ভালবাসতে শুরু করে। জীবদ্দশায় তিন দশকেরও বেশি সময় চলচ্চিত্রেও সমান দাপটের সঙ্গে অভিনয়ের মাধ্যমে রং ছড়িয়ে গেছেন নন্দিত ও বরেণ্য এই অভিনেতা। কোনো না কোনো টিভি চ্যানেল খুললেই তাঁর অভিনয় দেখা যেত। এতবার দেখেও প্রিয় এ অভিনেতার কাজে কোনোভাবেই কেউ একটুও আলস্য বোধ করেননি। ভক্তদের এমন ভালোবাসায় হুমায়ুন ফরীদি হয়ে ওঠেন একজন অমর অভিনেতা।

ভাষা আদায়ের বছরের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। আজ প্রয়াত এই তারকার ৬৯তম জন্মদিন। হুমায়ুন ফরিদীর বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম। মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরিদী ছিলেন দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম বাক্সবন্দি করে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেন তিনি।

ছাত্র থাকাকালীন হুমায়ুন ফরিদী নাট্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে প্রথম কিশোরগঞ্জে মহল্লার মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন ‘নিখোঁজ সংবাদ’ শিরোনামের নাটকে। ফরিদী প্রথম অভিনয় করা সিনেমার নাম ‘হুলিয়া’। হুমায়ুন ফরিদী বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়েছিলেন। ‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। এছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য ২০১৮ সালের একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেছিলেন এই অভিনেতা।

হুমায়ুন ফরিদীর ব্যক্তিজীবন খুব বেশি সুখের ছিল না। আশির দশকের শুরুর দিকে বিয়ে করেছিলেন মিনুকে। প্রথম সংসারে দেবযানী নামের এক মেয়েকে রেখে গেছেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন এই অভিনেতা। ২০০৮ সালে বিচ্ছেদ হয় সেই সম্পর্কেরও। পরের সময়গুলো অনেকটা নিঃসঙ্গ কেটেছে এই শক্তিমান অভিনেতার। এরপর ২০১২ সালে ফাল্গুনের প্রথম দিনে (১৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথিবীর সব আলো পেছনে ফেলে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।