পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়

‘অগ্রীম ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সুনামগঞ্জে বাঁধ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পেয়েছে’

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২২, ২২:৪৮

সাহস ডেস্ক

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ জেলায় অগ্রীম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ২০১৭ সাল থেকে আগাম বন্যায় ফসল রক্ষা বাঁধ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) হাওরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১ এপ্রিল হতে ৬ এপ্রিল সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হয় যা তিন দিনে ১২০৯ মি:মি: রেকর্ড করা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হয়েছে; যেখানে বছরের মোট বৃষ্টিপাত ৫ হাজার মি:মি: পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টির পানি ও ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি এসে সুনামগঞ্জে জমা হয়। হাওরের এবং এর নদী/খালে এতো পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই। প্রতিবছর উজান হতে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন টন পলি আমাদের দেশে চলে এসে জমা হয়। ফলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে নদী/খালে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ড্রেজিং করে এসব নদী/খাল রক্ষা করার কাজ চলমান।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ হাওরে মোট ১ হাজার ৭শ ১৮ কি:মি: বাঁধ রয়েছে এর মধ্যে ৫শ৩৫ কি:মি: বাঁধের কাজ ড্রোনের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে যাচাই বাছাই ও মনিটরিং করা হয়েছে। সাম্প্রতি বন্যায় হাওরের ৩টি স্থানে ১৭০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, দুটি স্থানের বাঁধের মেরামত কাজ চলমান রয়েছে।

জাহিদ ফারুক বলেন, অন্যান্য হাওরে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে। আগাম বন্যার জন্য সব সময় মনিটরিং ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে থাকে। হাওরের পানি জমে থাকার কারণে ডিসেম্বরে সব যায়গাতে কাজ শুরু করা যায়নি। ডিসেম্বরের স্থলে জানুয়ারিতে কাজ শুরু হলে বাঁধের কাজ শেষে ঘাষ বপনের আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যায়। বাঁধের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে ৭টি হাওর জেলার ৩শ৭৩টি হাওরের মধ্যে সুনামগঞ্জে সর্বাধিক হাওর রয়েছে। এবছর জেলায় মোট ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল চাষ করা হয়েছে। আকষ্মিক বন্যায় হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধে ১৩৬টি স্থানে সিপেজ এর সৃষ্টি হয়েছে; এর মধ্যে ৮৮টি সম্পুর্ণ মেরামত করা হয়েছে আর ৩৮টির কাজ চলমান রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী ৬৪টি জেলায় নদী খননের লক্ষ্যে ৫১১টি নদীর যায়গায় ৬২৭টি ছোট নদী/খাল খনন কাজ চলমান রয়েছে।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এ জেলার জন্য ১৫শ ৪৭ কোটি টাকার ১৪ নদী খননের একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে যার দৈর্ঘ ৩শ২৭ কি:মি:; সংযুক্ত খাল ২শ৫০কি:মি:। নভেম্বরে  একনেকে পাশ হলে ২০২৩ সালে কাজ শুরু হবে। ৯০টি কজওয়ে প্রকল্পও রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পক্রিয়াধীন। সুনামগঞ্জ হাওরের ১৪টি নদীতে পানি ধারণ ক্ষমা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনন কাজ চলমান রয়েছে; ইতোমধ্যে ৫টি জেলার নদীর ৩শ ৭৪ কি:মি: খনন চলমান। গ্রামবাসি বোরো ধান কাটা শেষ হলে কৃষকরা বাঁধ কেটে দেয় মাছ চাষের পানি প্রবেশের জন্য, ফলে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মানবতার মন্ত্রণালয়। মানবতার পাশে আছে এই মন্ত্রণালয়। আকষ্মিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার লক্ষ্যে যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। আপতকালিন সময় সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং ১১টি টিম করা হয়েছে। বর্তমান সরকার তথা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমা বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে আগে বছরে ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমি নদীগর্বে বিলিন হতো এখন তা কমে ৩ হাজার ৫শ হেক্টর হয়েছে। আমাদের যে দায়িত্ব তা পালনের চেষ্টা আমরা করছি। কারো কোনো গাফিলতি পেলে কোনো ক্ষমা নয়।

উপ-মন্ত্রী আরও বলেন, দুর্নীতি অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ। হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ফসলহানির ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরিন এর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য নগদ অর্থসহ কৃষিঋণ মওকুফ সহ যা যা করা দরকার তা করা হবে, কৃষি মন্ত্রণালয় হতে সহায়তা করা হবে বলে জানান এনামুল হক শামীম।

সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, হাওরের কোনো কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয় না। পিআইসি কমিটির মাধ্যমে কাজ করা হয়। ৭টি জেলায় হাওরে মোট ২ হাজার ৬শ ১৮ কি:মি: ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। ৭শ২৭টি পিআইসির মধ্যে ৪টি পিআইসির সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের হার ৯৯ শতাংশ। কোথাও দেরিতে কাজ শুরু করা হয়না; পানি নেমে না গেলে কাজ করা যায় না। তবে কাজ সময়মত শেষ হয়েছে। তাহিরপুরে একটি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়, সেটি স্থানীয়ভাবে করা হয়েছে।

এসময় সিনিয়র সচিব জনগণের নিকট প্রকৃত তথ্য উপাত্তসহ সংবাদ উপস্থাপনের জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত