দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত সুন্দরবন

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:০১

সাহস ডেস্ক

দীর্ঘ ৩ মাস পর পর্যটক, বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। বুধবার (৩১ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে শুরু হয় পর্যটনের নতুন মৌসুম। বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয় বনের পর্যটন। সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুমের কারণে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস ইকো- ট্যুরিজমসহ (প্রতিবেশ পর্যটন) বনজীবীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, সুন্দরবন জল-স্থলভাগ শুধু জীববৈচিত্র্যেই নয়, মৎস্য সম্পদের আধার। তাই সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিংয়ের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। চলতি বছর থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সময় নির্ধারণ করে বন মন্ত্রণালয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া বন্ধ করা হয় সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট ও নৌ-চলাচল। ফলে তিন মাস গোটা সুন্দরবন ছিল জেলে ও পর্যটক শূন্য। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছেন পর্যটকেরা। একইসঙ্গে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণের জন্য পাস-পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করতে পারছেন বনজীবীরা।

তিনি আরও জানান, তিন মাস সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধের পাশাপশি সুন্দরবনে পর্যটকসহ বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ২১০ প্রজাতির মাছের পাশাপাশি ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রজনন ও বংশ বিস্তারে সুফল আনবে বলে ধারণা বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের।

সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল হক কচি বলেন, সুন্দরবনের দ্বার খুলে যাওয়ায় বুধবার রাত ১২টায় খুলনা থেকে দ্য ওয়েব জাহাজ ৭৫ পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যাত্রা শুরু করেছে। জাহাজটি ঢাকা থেকে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে অবসর নামে একটি জাহাজ ৪০ জন অভিনয়শিল্পী নিয়ে সুন্দরবন যাত্রা করেছে। এছাড়া শুক্রবার খুলনা থেকে আরও ছয়টি জাহাজে ২৫০ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে যাবেন। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে সড়কপথে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দূরত্ব কমেছে। ফলে সময় বাঁচবে তিন ঘণ্টা। তাই এবার পর্যটকদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আগামী বছরের ৩১ মে পর্যন্ত এ পর্যটন মৌসুম চলবে।

এদিকে, সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোট চালকেরা। পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের ট্যুর অপারেটরেরা তাদের লঞ্চসহ বোটগুলোর  প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে নতুন করে সাজিয়েছেন।

সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটর এইচ এম দুলাল বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এতদিন সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সড়কপথে পদ্মা সেতু পার হয়ে সহজেই অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করবেন বাগেরহাটের পূর্ব বিভাগের সুন্দরবনে। পদ্মা সেতু চালুর পর এবার সুন্দরবনে পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় কয়েকগুণ বাড়বে আশা করা যায়।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় এখন বন্যপ্রাণীগুলো বিকাল হলেই পর্যটক কেন্দ্রের সামনে চলে আসছে। কারণ মানুষের আনাগোনা কম, তাই নদীর পাশে বা সামনে আসতে ভয় পায় না। তবে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় সরকারের কিছুটা রাজস্ব কম হয়েছে, তার চেয়ে বেশি উপকার হয়েছে বনজ সম্পদ, বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সুন্দরবনের প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু সেতু উদ্বোধনের সময় থেকেই বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় দর্শনার্থীরা আসতে পারেননি। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত